ভারতের সোনার ছেলে। বিকাশ গৌড়া।
যোগেশ্বর দত্তের কখনও ‘ফিতেলে’, কখনও ‘খেমে’ প্যাঁচ! আর বিজেন্দ্র সিংহের পরের পর পাঞ্চ!
ভারতের এক অলিম্পিক পদকজয়ী পালোয়ান আর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে এক পদকজয়ী বক্সারের দাপটে বৃহস্পতিবার কমনওয়েলথ গেমসের ‘ম্যাট’ আর ‘রিং’ প্রায় সারাদিন ঝলমল করল!
কিন্তু রাতের দিকে গ্লাসগো থেকে এ যাবত ভারতকে সবচেয়ে দামী সোনার পদকটা এনে দিলেন ডিসকাস থ্রোয়ার বিকাশ গৌড়া। কারণ, চলতি গেমসে ভারতের এখন পর্যন্ত ১৩টা সোনার মধ্যে এটাই একমাত্র অ্যাথলেটিক্স ইভেন্ট থেকে প্রাপ্ত। আর অ্যাথলেটিক্সই তো যে কোনও ‘মাল্টিপল’ গেমসের ‘মাদার ইভেন্ট’ হিসাবে স্বীকৃত।
মহীশুরে জন্ম হলেও ৩১ বছর বয়সী, ছ’ফুট ন’ইঞ্চি, ১১০ কেজির বিকাশের আন্তর্জাতিক মানের থ্রোয়ার হয়ে ওঠা আমেরিকার মেরিল্যান্ডে। নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি মিট থেকেই বহু বছর বিদেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কিন্তু সিনিয়র পর্যায়ে বিদেশের মাঠে গেমসে সোনা জয় এই প্রথম। যে সম্মান বিকাশকে এ দিন ৬৩.৬৪ মিটার-এর একটা থ্রো-ই এনে দেয়। তাঁর ব্যক্তিগত সেরা, গত অলিম্পিক ফাইনালের থ্রো সব এ দিনের চেয়ে ভাল। গত বছর পুণেতে এশীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সোনাও জিতেছিলেন এ দিনের চেয়ে বেশি ছুড়ে। তবু গ্লাসগোই বিকাশের সেরা সাফল্য-ভুমি হয়ে উঠল। চার বছর আগে দিল্লি কমনওয়েলথ আর গত এশিয়াড-ও যে বিকাশকে সোনা দেয়নি। বিকাশের সোনায় ভারত ১৩ সোনা-সহ মোট ৪৭ পদক পেয়ে ফের গ্লাসগোয় পদক তালিকায় প্রথম পাঁচে ঢুকে পড়ল।
সোনা জেতার পথে যোগেশ্বর।
এর আগে কুস্তির ৬৫ কেজি ক্যাটেগরিতে যোগেশ্বর সোনা জেতার পথে এ দিন চারটে লড়াইতেই প্রতিপক্ষের ঘাড়ে একটা না একটা সময় প্রথমে উঠে পড়েছিলেন। যে প্যাঁচের টেকনিক্যাল নাম ‘খেমে’। আর তার পরক্ষণেই নিজের দু’পা আড়াআড়ি করে ‘ফিতেলে’ প্যাঁচে প্রতিদ্বন্দ্বীকে চিত্পাত করে দিয়েছেন। যোগেশ্বরের কোচ বিনোদ কুমার বলছেন, “ফিতেলে টেকনিকেই যোগেশ্বর দু’বছর আগে অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জিতেছিল। আর কমনওয়েলথে জিতল সোনা।” মেয়েদের ৫৫ কেজি বিভাগে ববিতা কুমারী-ও যোগেশ্বরের মতোই ফাইনালে কানাডিয়ান প্রতিপক্ষকে হারিয়ে সোনা জিতেছেন। তবে ৬৩ কেজি-র ফাইনালে দীপিকা ঝাকর হারায় তাঁকে রুপো নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল। আর আরও একবার ভারত-পাক পালোয়ানদের মধ্যে লড়াইয়ে মহম্মদ ইনামকে হারিয়ে পবন কুমার ৮৬ কেজিতে ভারতকে ব্রোঞ্জ এনে দিয়েছেন।
ভারতের সোনার ছেলে। যোগেশ্বর দত্ত
বক্সিংয়ে এ দিন পদকের চূড়ান্ত মীমাংসা না হলেও ছ’বছর আগের অলিম্পিক পদকজয়ী বীজেন্দ্র-সহ পাঁচ-পাঁচ জন ভারতীয় বক্সার সেমিফাইনালে উঠে কমপক্ষে ব্রোঞ্জ জয় নিশ্চিত করেছেন। ৭৫ কেজিতে বিজেন্দ্র ছাড়া বাকিরা হলেন মনদীপ জাংগ্রা (৬৯ কেজি), দেবেন্দ্র সিংহ (৪৯ কেজি) এবং দুই মেয়ে বক্সার সরিতা দেবী (৬০ কেজি) ও পিঙ্কি জাংগ্রা (৫১ কেজি)।
এ সবের মধ্যেই এক ভারতীয় জিমন্যাস্ট এ দিন নিঃশব্দে কমনওয়েলথ গেমসে ইতিহাস রচনা করেছেন। ত্রিপুরার ২০ বছরের দীপা কর্মকার প্রথম ভারতীয় মেয়ে হিসাবে কমনওয়েলথ গেমসে পদক জিতলেন। দীপা ভল্ট ইভেন্টে ১৪.৩৬৬ পয়েন্ট পেয়ে তৃতীয় হন। আর হকিতে যখন জ্বলে ওঠা দরকার, তখন সর্দার সিংহের ভারত ম্যাচের প্রথম ২৬ মিনিটেই চার গোল করে শেষমেশ ৫-২ গোলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে। এ বার সামনে নিউজিল্যান্ড।
ছবি: এএফপি।