মহালড়াইয়ের চব্বিশ ঘণ্টা আগে বেঙ্গালুরু কোচ অ্যাশলে ওয়েস্টউড। —নিজস্ব চিত্র।
অ্যাশলে ওয়েস্টউডের এই একান্ত সাক্ষাৎকার নেওয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল, বেঙ্গালুরু এফসি কোচের মাঠে বদমেজাজের কারণ খোঁজা। কিন্তু বদলে যে ফান্ডা তিনি দিলেন তা শুনলে চমকে যেতে পারেন তাবড় কোচেরা!
সুনীল ছেত্রী-সহ নিজের টিমের তারকা ফুটবলারদের অ্যাশলে নাকি শায়েস্তা করেছেন ‘পি টেস্ট’ করিয়ে।
পি টেস্ট কী?
বেঙ্গালুরু ফুটবল স্টেডিয়ামের অফিস ঘরে (মিডিয়াকে এই ঘরে বসেই সামলান সুনীলদের বিদেশি কোচ) বসে প্রথমে হাসলেন ভারতে ফুটবলারদের মধ্যে ‘পি টেস্টের’ জনক অ্যাশলে ওয়েস্টউড। তার পরে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লেন, ‘‘আপনাদের কলকাতায় ফুটবলারদের কেন এত মাসল ইনজুরি? কোথায়, আমাদের টিমে তো হয় না!’’
স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসনের অধীনে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড অ্যাকাডেমিতে কাজ করা ওয়েস্টউড কলকাতার ফুটবলারদের ঘনঘন পেশির চোটের জন্য প্রথমে দায়ী করলেন প্লেয়ারদের শৃঙ্খলার অভাবকে। তার পর তুলে আনলেন ‘পি টেস্ট’ প্রসঙ্গ। যার মাধ্যমে তিনি নাকি রোজ জেনে নেন তাঁর টিমে শৃঙ্খলা ভাঙল কে?
‘পি টেস্ট’ আসলে মূত্র পরীক্ষা। যা বেঙ্গালুরু এফসিতে বাধ্যতামূলক। প্রত্যেক ফুটবলারকে রোজ মূত্র নমুনা সংগ্রহ করে রাখতে হয় কোচের নির্দেশে। তার পর রোজ সকালে প্রত্যেক নমুনার মাপে চোখ বুলিয়ে নেন অ্যাশলে। কারণ জানতে চাইতে বেঙ্গালুরু কোচ বললেন, ‘‘প্রতেক মানুষের সকালের প্রথম ইউরিনের একটা মাপ আছে। বেশি রাত জাগলে, মদ খেলে, ঠিক মতো ডায়েট না মানলে, সঠিক পরিমাণ জল না খেলে মুত্রের মাপে হেরফের হবেই। তখন আমিও বুঝে যাই, শরীর ডিহাইড্রেশনে গিয়ে আমার টিমের কোন প্লেয়ারের পেশির চোট বাড়তে পারে। কে-ই বা শৃঙ্খলা ভাঙছে চুপিসারে? কেউ পি টেস্ট না করলে, কিংবা সেটার মাপে কারও হেরফের ঘটলেই সেই ফুটবলারের বিরাট মোটা জরিমানা হয় আমার টিমে।’’
পরক্ষণেই অ্যাশলের চিমটি— ‘‘কলকাতায় এটা জানে কল্যাণ চৌবে। আইএসএলে কমেন্ট্রি করার সময় ওকে বলেছিলাম।’’ সুনীল ছেত্রীও রোজ ‘পি টেস্ট’ দেন? ভারত অধিনায়কের ক্লাব কোচের এ বার কাঁধ ঝাঁকিয়ে উত্তর, ‘‘সুনীল স্টার হতে পারে। বাট টিমে আয়্যাম দ্য বস। আমার তৈরি নিয়ম না মানলে এই টিমে জায়গা হবে না কারওরই। তাই সুনীল কেন, সবাই মানে। আর এটাই আমাদের দলের সাফল্যের রহস্য।’’
বেঙ্গালুরুর ম্যাচ চলাকালীন টেকনিক্যাল এরিনায় প্রায় রোজ স্লেজিংয়ের ফোয়ারা ছোটে তাঁর মুখে। কলকাতাকে ভারতীয় ফুটবলের মক্কা মানতে ঘোরতর অনীহা। বললেন, ‘‘ওসব কথার জাগলারি। ফুটবলে আবার কীসের মক্কা? ইপিএল, লা লিগায় এ রকম কিছু কখনও শুনেছেন? ভারতীয় ফুটবল ‘পাওয়ার স্ট্রাকচার’ ছেড়ে আর বেরোতে পারল না। তাই এ সব কথা। মডার্ন ফুটবলে সবাই সমান। আমাদের দলের রেজাল্টই তা বলছে।’’
আপনার কোচিং আদর্শ কি মোরিনহো? তাঁর মতোই তো টেকনিক্যাল এরিনায় আপনার হাবভাব! কটমট করে তাকিয়ে অ্যাশলে বললেন, ‘‘ফার্গুসনের কাছে যে ফুটবল কোচিং শিখেছে সে মোরিনহোকে গুরু মানতে যাবে কোন দুঃখে? আসলে এটা এক-একজনের স্টাইল। ফান গল যেমন চুপ করে বসে থাকেন। মোরিনহো আবার সব সময় ছটফট করছেন।’’
বেঙ্গালুরু কোচকে মনে করিয়ে দেওয়া হল, দিন কয়েক আগেই ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে তাঁর বিরুদ্ধে বিপক্ষের সাপোর্ট স্টাফকে মারধরের হুমকি, বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছে। শুনে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় অ্যাশলের। ‘‘ও গড! আমার বউ হাফ-এশিয়ান। আমি কী করে রেসিস্ট মন্তব্য করতে পারি? আর আমি কি কমান্ডো নাকি যে, বিপক্ষের সাপোর্ট স্টাফকে মারব? ম্যাচ শেষ। ওদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এসেছি। হ্যাপি এন্ডিং হয়ে গিয়েছে।’’
উঠে আসার আগে সাহেব কোচের পরামর্শ— ‘‘আধুনিক ফুটবলকে তুলে ধরুন। ফুটবলে ভারত কিন্তু ঘুমন্ত সিংহ।’’ অ্যাশলে ওয়েস্টউডের নজরে কি তা হলে স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনের চেয়ার? এ বার বিনয়ী তিনি। ‘‘ও সব আমি জানি না। সেটা আপনাদের ফুটবল কর্তাদের কাজ যে, দেখা কে আধুনিক, কে নয়। তবে ভারতীয় দলের দায়িত্ব পেলে আমি নিজেকে নিংড়ে দেব।’’