নেইমার হয়ে গেল। মেসি হয়ে গেল। বিশ্বকাপ মঞ্চে এ বার অবতরণ ঘটছে তৃতীয় ফুটবল-মহানায়কের। তিনি, সিআর সেভেন নামছেন এমন একটা ম্যাচে যাকে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে— সিস্টেম বনাম ফুটবল জিনিয়াস।
এক এক সময় অবাক হয়ে দেখছি, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মেসি নিয়ে যে পরিমাণ নাচানাচি এই ব্রাজিলেও, রোনাল্ডো নিয়ে ততটা নেই। রোনাল্ডো সম্পর্কে অসম্ভব শ্রদ্ধা, কিন্তু আবেগটা সেই পর্যায়ের নেই। ব্রাজিল এত বছর পর্তুগালের উপনিবেশ ছিল। দেশের সর্বত্র পর্তুগিজ ভাষাই চলে। তা হলে চেতনার স্নায়ুকেন্দ্রে সিআর সেভেন নেই কেন?
নাকি ভুল করছি? ফ্লাইটে চার ঘণ্টা দূরের সালভাদরে তিনি নামলে তখন হয়তো মনে হবে মেসির মতোই আবেগ তিনিও। সাও পাওলো বা রিওয় ক্রমাগত একটা আলোচনা ফুটবলসমাজে শুনছি, জার্মানি ম্যাচে খেলবেন রোনাল্ডো? নাকি তাঁকে নিয়ে প্রথম ম্যাচে ঝুঁকি নেওয়া হবে না?
সন্ত্রাসের নাম সিআর সেভেন
সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...
রোনাল্ডোরও কি তাই দশা হবে সোমবার সালভাদরে? ক্লাব ফুটবলে খেলে খেলে ক্লান্ত স্পেনের পাঁচ গোল খাওয়া এই মাঠই দেখেছে। এ বার এমন হবে না তো যে মাঠ অদৃশ্য সঙ্কল্পে বলবে, তুমি কত বড় প্লেয়ার আমার দেখার দরকার নেই। এখন কোন কন্ডিশনে আছো, সেটাই আসল।ক্লাবের হয়ে জীবন দিতে গিয়ে এমনিতেই পেশাদাররা এত চোটগ্রস্ত যে, বিশ্বকাপে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সেরাটা দেওয়ার জায়গায় নেই। রোনাল্ডোর চোট। সোয়াইনস্টাইগারের চোট। সুয়ারেজের চোট। দিয়েগো কোস্তার চোট। বরং ক্লাবে এত বেশি ধকল নিতে হয় না জাতীয় ফুটবলাররা এ বারের বিশ্বকাপে চমকে দিচ্ছেন। আহত মহাতারকারা যা পারছেন না। সুয়ারেজকে যেমন অসহায়ের মতো তাঁর টিমের এত বিপর্যয় দেখতে হল।
পর্তুগাল টিম হিসেবে মোটেও খারাপ নয়। আগের আগের বিশ্বকাপে তারা সেমিফাইনালে গিয়েছে। দু’বছর আগে ইউরোর সেমিফাইনালে টাই ব্রেকারে হেরেছে স্পেনের কাছে। পুরো টিমটাই এ বারের বিশ্বকাপে তারা সাজিয়েছে রোনাল্ডোকে ঘিরে। জোয়াকিম লো মুখে স্বীকার করুন বা না করুন, গোটা স্ট্র্যাটেজিটা অবশ্যই ছকবেন সিআর সেভেনকে নিষ্ক্রিয় করতে।
ফিলিপ লাম, সোয়াইনস্টাইগার, পোডলস্কিরা চার বছর আগের এক কেপটাউন বিকেলে শেষ করে দিয়েছিলেন মেসির বিশ্বকাপ স্বপ্ন। মোটামুটি সেই একই টিম, বিপক্ষে সেই একই কোচ চার বছর বাদে তিনি পাচ্ছেন। মেসি পারেনি আমি করে দেখাব— এর চেয়ে বড় মোটিভেশন আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর জন্য কী হতে পারে!
অবশ্যই যদি শরীরটা তাঁবে থাকে। ব্রাজিলে ক্লাব ফুটবল লোকে হুমড়ি খেয়ে দেখে। এমন মোটেও নয় যে, নিজের দেশের বাইরে অন্য কিছু খবর রাখায় ফুটবলপ্রেমীদের ইগো কাজ করে। রোনাল্ডোকে দেখতে তাই কাল মেসি-রাজ চলতে থাকা কোপাকাবানা বিচেই প্রভূত ভিড় হবে ধরেই নেওয়া যায়। ওখানে বালির ওপরই ফিফা ফ্যান ফান ফেস্টের প্যান্ডেল গেড়েছে। রাত্তিরে সেখানে যা ভিড় হচ্ছে, তা বেহালা নতুন দল বা মুদিয়ালির নবমী।
ওই এলাকায় একগাদা টিভিও বসানো রয়েছে নানা দোকানে। তার সামনে অন্তত একশো জন করে ভিড়। ধরে নিতে পারি সোমবার দুপুর একটায় (ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ন’টা) যখন দু’টো টিম লাইনে দাঁড়াবে, তখন রিও-র প্রতিথযশা ফুটবল-সমাজ একটাই ইন্টারেস্ট নিয়ে বসবে। পারল কি ছেলেটা জার্মানদের হারিয়ে একই স্কোরে মেসিকে হারাতে!