করিমের হাসি কি মুছতে পারবেন নর্ডি। ছবি: উত্পল সরকার
করিম বেঞ্চারিফার কাছে প্রতিশোধের ম্যাচ। নিজেকে দেখানোরও।
সঞ্জয় সেনের কাছে শেষ চারে যাওয়ার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সিঁড়ি পেরোনোর চ্যালেঞ্জ।
রিউজি সুয়েকার কাছে ‘আমাকে বুড়ো বোলো না’ বোঝানোর মঞ্চ।
সনি নর্ডির কাছে প্রমাণ করার, দল গোল করতে না পারলে তিনি একাই দলকে জেতাতে পারেন।
ফেড কাপে নববর্ষের প্রথম দিনের মোহনবাগান-পুণে ম্যাচটা আসলে নিছক একটা গ্রুপ লিগের খেলা নয়, তাঁর বাইরে আরও অনেক কিছু। দেখার, দেখিয়ে দেওয়ার এক বড় ক্যানভাস। তারপর সালগাওকর বুধবার জিতে যাওয়ার পর বাগানের কাছে তো ম্যাচ অনেকটা এখন ডু অর ডাই।
নতুন বছরে আপনার শপথ কী? বুধবার সকালে টিম হোটেল থেকে সনি নর্ডি বলে দেন, “গোল চাই, চাই ট্রফি। গোলটা শুরু হোক বছরের প্রথম দিন থেকেই। আমি কাল গোল করে দলকে জেতাব এটাই আমার শপথ। স্বপ্নও। তারপর ট্রফির জন্য ঝাঁপানো যাবে।” কিন্তু আপনার প্রতিপক্ষ পুণে তো আপনাদের ভুটানে কিঙ্গ কাপে হারিয়েছে, কয়েক সপ্তাহ আগেই। ওদের ডিফেন্স যথেষ্ট শক্তিশালী। বাগানে সই করার পর সেটাই কিন্তু ছিল আপনার প্রথম টুর্নামেন্ট? গোল পাননি। “আরে তখন আমাদের টিম এত শক্তিশালী ছিল না। আর ওরা জিতেছিল তো টাইব্রেকারে। কাল মাঠে নামুক না, দেখা যাবে” বলার সময় জেদ চঁুইয়ে পড়ে হাইতি স্ট্রাইকারের গলা থেকে।
কোচের নির্দেশে মোহনবাগান টিম ম্যানেজমেন্ট সনি আর বোয়াকে রেখেছে হোটেলের একই ঘরে। দুই বিদেশির একাত্মতা বাড়াতে। যেমন রাখতেন পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মাঝমাঠের দুই সেরা জুটি গৌতম সরকার আর সমরেশ চৌধুরীকে। সেটা এতটাই গাঢ় হয়েছিল যে, এখনও এত বছর পরেও দু’জন দু’জনকে নাম ছেড়ে ‘পার্টনার’ বলে ডাকেন। পিকে-র ধাঁচে বাগানের নতুন কোচের এই ফর্মুলা কাজ করবে কিনা সময় বলবে। তবে ওই দু’জনের বোঝাপড়া তৈরির উপর কিন্তু এ বছর বাগানের ভাগ্য অনেকটাই নির্ভরশীল। পুণে ম্যাচেও।
করিম যখন ভেরনার মাঠে অনুশীলন করছেন তখন ভাস্কোর বাগান হোটেল শান্ত। বেলো-লালকমলরা এ দিন অনুশীলন করেননি। সুইমিং আর হালকা জগিং করে ঢুকে পড়েছেন নিজেদের হোটেলে। রাতে যখন পুরো গোয়া রাস্তায় নেমে পড়েছে, সমুদ্র সৈকত সেজে উঠেছে বিয়েবাড়ির মতো, বিভিন্ন বাড়ির উপর থেকে আকাশে যখন প্রতি সেকেন্ডে উড়ছে রং-বেরংয়ের আতশবাজি তখন বাগানে চলছে টিম মিটিং। সেখান থেকে যে নির্যাস বা বার্তা বেরিয়ে আসছে তা হলবেঙ্গালুরুর চেয়ে পুণে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ নয়। ওদের হারাতেই হবে। না হলে শেষ চারে যাওয়া কঠিন হবে।
কোচ সঞ্জয়ের কথাতেও তারই অনুরণন। “পুণে ব্যালান্সড দল। কিন্তু বেঙ্গালুরুর চেয়ে শক্তিশালী নয়। নিজেদের খেলা খেলতে পারলে ওদের হারানো যাবে। এই ম্যাচটা জিততে পারলে আমাদের পরের ম্যাচগুলো অনেক অঙ্ক করে খেলা যাবে।” বাগানের টিমে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। বদলাচ্ছে না ফর্মেশনও। ৪-২-৩-১ এই দল নামাবেন ঠিক করে রেখেছেন সঞ্জয়। পুণে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেলা সত্ত্বেও। “বারবার স্ট্র্যাটেজি বদল করলে সব ঘেঁটে যায়। পুণের খেলা আমি দেখেছি। আক্রমণটা ভাল তৈরি করে। সেটা আমাদের নজর আছে।”
করিম বেঞ্চারিফা অত্যন্ত চতুর কোচ। বাগান তাঁকে গত বছর বাতিল করে দিলেও সঞ্জয়ের টিম সম্পর্কে একটি শব্দও বলেননি। মনের মধ্যে যে দেখিয়ে দেওয়ার আগুন জ্বলছে সেটা অবশ্য বেরিয়ে পড়ছে মাঝেমাঝে। “আমরা একটা ম্যাচ জিতে রয়েছি এটা আমাদের অ্যাডভান্টেজ। দেখা যাক কী হয়,” বলে দিয়েছেন তিনি। সনি-বোয়া নিয়ে হইচই হলেও তাদের জন্য জোনাল মার্কিংয়ের কথা ঘুরছে করিমের মাথায়। মুখে অবশ্য সরকারিভাবে বলছেন, “কোনও একজনের কথা ভাবতে যাব কেন। পুরো টিম নিয়েই ভাবছি। বাগান ভাল টিম। খুব ভাল খেলেছে।” ইউনাইটেডে খেলে যাওয়া লাইবেরিয়ার এরিক, জাপানি সুয়েকা আক্রমণের ঢেউ তোলার জন্য করিমের প্রধান অস্ত্র। রক্ষণে কলকাতার বাতিল আর এক ফুটবলার ব্রাজিলিয়ান লুসিয়ানো সাব্রোসার উপর অনেকখানি নির্ভর করতে হবে পুণে কোচকে। রয়েছেন আজুমি আরাতা, ইজরায়েল গুরুংয়ের মতো খেলোয়াড়।
করিম গ্রুপ লিগের সুবিধা নিতে ড্র-এর খেলা খেলবেন ধরে নিয়েছে পুরো বাগান শিবির। আর সে জন্যই শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবলের রাস্তায় যেতে চাইছেন বাগান-কোচ। দু’প্রান্ত দিয়ে সনি আর কাতসুমিকে ব্যবহার করবেন ঠিক করেছেন । সামনে একটু আগুপিছু দুই ‘ব’-- বোয়া আর বলবন্তকে দিয়ে করিমের ডিফেন্স ভাঙতে চান সঞ্জয়। বললেন, “জিততে হলে এর বাইরে রাস্তা নেই।”
দেখার নববর্ষের শুভ বার্তা কার জন্য বয়ে আসে—বাগান না করিমের। সনি নর্ডির শপথ কিন্তু এই লড়াইয়ে বড় ফ্যাক্টর।
আজ ফেড কাপে
মোহনবাগান : পুণে এফসি (ভাস্কো, ৪-০০)।