নতুন অধিনায়কের জন্য পরামর্শ

সবার সঙ্গে ঝামেলা নয়, এ বার যুদ্ধগুলো বেছে নাও বিরাট

প্রচণ্ড আগ্রাসী একজন ক্যাপ্টেনের হাত থেকে জাতীয় দলের নেতৃত্বের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। গত মঙ্গলবার যার হাতে টেস্ট নেতৃত্বের ব্যাটন তুলে দিল ক্যাপ্টেন কুল, সেই ছেলেটাও অসম্ভব আক্রমণাত্মক। জীবন সত্যিই একটা বৃত্ত! নতুন বছর শুরুর দিন দু’য়েক আগে ভারতীয় টেস্টে নতুন যুগ শুরু হল। সিডনিতে কয়েক দিন পরে পাকাপাকি ভাবে বিরাট-রাজ শুরু হয়ে যাবে। তার আগে আমাদের নতুন টেস্ট ক্যাপ্টেনের জন্য থাকল আমার তিনটে টিপ্‌স।

Advertisement

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩২
Share:

প্রচণ্ড আগ্রাসী একজন ক্যাপ্টেনের হাত থেকে জাতীয় দলের নেতৃত্বের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। গত মঙ্গলবার যার হাতে টেস্ট নেতৃত্বের ব্যাটন তুলে দিল ক্যাপ্টেন কুল, সেই ছেলেটাও অসম্ভব আক্রমণাত্মক।

Advertisement

জীবন সত্যিই একটা বৃত্ত!

নতুন বছর শুরুর দিন দু’য়েক আগে ভারতীয় টেস্টে নতুন যুগ শুরু হল। সিডনিতে কয়েক দিন পরে পাকাপাকি ভাবে বিরাট-রাজ শুরু হয়ে যাবে। তার আগে আমাদের নতুন টেস্ট ক্যাপ্টেনের জন্য থাকল আমার তিনটে টিপ্‌স।

Advertisement

এক) ড্রেসিংরুমে একতা আনো: দেখুন, বেশ কয়েক দিন ধরেই একটা জিনিস আমার মনে হচ্ছে। ভারতের এই টিমটা আর ধোনির টিম নেই। এটা এখন বিরাট কোহলির টিম হয়ে গিয়েছে। হয়তো টিমের বেশির ভাগ ক্রিকেটারের বয়স বিরাটের কাছাকাছি বলে ওর সঙ্গে বাকিদের যোগাযোগটা ধোনির চেয়ে এখন অনেক ভাল। তা ছাড়া এই টিমে ধোনির ‘ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল’ মানসিকতার চেয়ে বিরাটের ‘লড়কে লেঙ্গে’ মনোভাবের প্লেয়ারই বেশি।

আমি বলতে চাইছি, এই টিমের পাল্‌স ধোনির চেয়ে এখন কোহলি বেশি ভাল বুঝতে পারবে। আমার আরও মনে হচ্ছে, ভারতীয় ড্রেসিংরুম সঠিক ভাবে চালাতে পারছিল না ধোনি। এর আগের টেস্টে শিখর ধবন-কোহলি নিয়ে যে ভুল বোঝাবুঝি হল, সেটা একদম টাটকা উদাহরণ। ধোনি তো নিজেই বলল, ওই ঘটনায় ড্রেসিংরুমে একটা অশান্তি তৈরি হয়েছিল। ধবন আদৌ ব্যাট করতে নামতে পারবে কি না, খেলা শুরুর মিনিটপাঁচেক আগেও জানত না ধোনি। ড্রেসিংরুম ঠিকঠাক চালাতে পারলে কি এই ঘটনাটা ঘটত? মনে হয় না।

ড্রেসিংরুমে ঠিক কী হচ্ছিল বা হয়, বাইরে বসে সেটা আমাদের পক্ষে বোঝা অসম্ভব। তবু কেন জানি না মনে হচ্ছে, ধোনির কথা ওর টিমের সবার কাছে সমান গুরুত্ব পেত না। হয়তো বিরাট কোহলিকে ঠিকঠাক সামলাতে পারত না ধোনি। আসলে ধোনি এমন হঠাত্‌ করে অবসর নিয়ে ফেলল বলেই এ সব কথাগুলো আরও বেশি করে মনে হচ্ছে। যা-ই হোক, আমি যেটা বলতে চাইছি সেটা হল, কোহলিকে প্রথমেই নিজের ড্রেসিংরুমটাকে ঠিকঠাক করে ফেলতে হবে। সবার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতে হবে।

দুই) চাই এগারোটা বিরাট: বিরাট কোহলি যে মানসিক টাফনেস দেখিয়ে চলেছে, সেটা ওকে বাকি দশ জনের মধ্যেও আনতে হবে। আমি নিশ্চিত, ও এটা পারবে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দেশের মাঠে ওই ওয়ান ডে সিরিজেও তো বিরাটকে বলতে শুনলাম, টিমের সবার ইন্টেন্সিটি লেভেলটা ও নিজের উচ্চতায় নিয়ে আসতে চায়। ও নিজে যে রকম পজিটিভ মনোভাব নিয়ে ক্রিকেটটা খেলে, সেটা বাকিদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে সত্যিই দারুণ ব্যাপার হবে।

তবে এখানে আরও একটা কথা বলতে হবে। মাঝেমধ্যে বিরাট বড্ড বেশি উত্‌সাহ নিয়ে জেতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। অ্যাডিলেডের টেস্টের কথাই ধরুন। বিরাটের পৃথিবীতে মনে হয় জেতা বা হারা ছাড়া অন্য কোনও ভাবনার অস্তিত্ব নেই। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে ড্র বলে যে একটা বস্তু আছে, সেটাও মনে রাখতে হবে ওকে। তাই অতি-উত্‌সাহ ব্যাপারটা একটু কমাতে হবে বিরাটকে।

তিন) যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই: বিরাট কোহলিকে এ বার বুঝতে হবে যে, সবার সঙ্গে গণ্ডগোল লাগিয়ে দিলে ওর আর চলবে না। এখন তো শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবার অবস্থায় নেই ও। গোটা টিমটাকেও চালাতে হবে। বিরাটকে বুঝতে হবে মাঠের যুদ্ধটা এক বনাম এগারো নয়। এগারো বনাম এগারো। ও যদি সবার সঙ্গে ঝামেলা করে বেরায়, ওর নিজের টিমের উপর মোটেও খুব একটা ভাল প্রভাব পড়বে না। এখন যা করছে সেটা চালিয়ে গেলে বিরাট বিপক্ষের কাছে খুব সহজ টার্গেট হয়ে যাবে। বুধবারই তো শুনলাম ডারেন লেম্যান বলেছে যে, কোহলিকে নিয়ে স্লেজিং ওরা শুরুই করেনি। আরও বাকি আছে!

দেখুন, এই স্লেজিংটা সামলানোর ক্ষমতা যে বিরাটের আছে, তা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কিন্তু ওই যে বললাম, এখন থেকে ওকে একটা টিম নিয়ে চলতে হবে। তাই সব দেখেশুনে নিজের আগ্রাসনটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বিরাটকে। তা ছাড়া ৩৬৫ দিন এই মানসিকতা নিয়ে খেলতে নামলে ও নিজেই প্রচণ্ড ক্লান্ত হয়ে পড়বে। বিরাটকে বুঝতে হবে, কোন যুদ্ধটা লড়ার যোগ্য আর কোনগুলো মাথায় রাখারই দরকার নেই।

আর সব শেষে বিরাটকে বলব, ক্রিকেটটা এ ভাবেই উপভোগ করো। ড্রেসিংরুমে রবি শাস্ত্রীর মতো একজন দারুণ মেন্টর পেয়েছ। আশা করব তোমাদের দু’জনের অ্যাটাকিং জুটি দেশকে আরও অনেক সাফল্য, অনেক আনন্দ এনে দেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন