এপ্রিল ফুল’স ডে-তে ভারত-পাকিস্তান

সমর্থকদেরও বোকা বানালেন স্পিন-বিধ্বস্ত আফ্রিদিরা

গত এক সপ্তাহের সবচেয়ে আজব ঘটনাগুলো যেন বিগত চব্বিশ ঘণ্টার জন্যই অপেক্ষা করে ছিল! টিম ইন্ডিয়ার অনুশীলনে ব্যাট-প্যাড দেখা না গিয়ে গোটা টিমের খালি পায়ে ফুটবল খেলতে নেমে পড়া! সচিত্র সেনানায়কের নিউজিল্যান্ড ম্যাচে কাঁচা বল ছুড়ে অব্যাহতি পাওয়া! বাংলাদেশ ক্রিকেটের সুপারস্টার সাকিব আল হাসানের এ দিন বার হওয়া মহাব্যতিক্রমী সাক্ষাৎকার!

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

ঢাকা শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৩৮
Share:

গত এক সপ্তাহের সবচেয়ে আজব ঘটনাগুলো যেন বিগত চব্বিশ ঘণ্টার জন্যই অপেক্ষা করে ছিল!

Advertisement

টিম ইন্ডিয়ার অনুশীলনে ব্যাট-প্যাড দেখা না গিয়ে গোটা টিমের খালি পায়ে ফুটবল খেলতে নেমে পড়া!

সচিত্র সেনানায়কের নিউজিল্যান্ড ম্যাচে কাঁচা বল ছুড়ে অব্যাহতি পাওয়া!

Advertisement

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সুপারস্টার সাকিব আল হাসানের এ দিন বার হওয়া মহাব্যতিক্রমী সাক্ষাৎকার!

পাকিস্তানের টিভি চ্যানেলে রামিজ রাজা আর মহম্মদ ইউসুফের অবিশ্বাস্য ঝগড়া!

আর এগুলো ছাপিয়ে সবার আগে থাকবে— মিরপুরের স্পিন সহায়ক পিচ কাজে না লাগিয়ে উল্টে তাতেই আফ্রিদির পাকিস্তানের ভস্ম হয়ে যাওয়া। এই মাঠে এ যাবৎ কেউ টস হেরেও প্রথম বল করার সুযোগ পায়নি। এপ্রিল ফুল’স ডে-তে সেই সুযোগটাই পেয়েছিল আফ্রিদির পাকিস্তান যা ২৪ ডিসেম্বর সারা বিশ্বের শিশুরা পায়। আর তারা কি না ৮৪ রানে হারল! ইনিংসে ছয় উইকেট দিল স্পিনারকে। তার মধ্যে চার-চারটে তো স্রেফ স্টাম্পড হয়ে। এর পর লাহৌর বিমানবন্দরের বাইরে সম্ভাব্য জনতাকে শাকসবজি আর ফল নিয়ে হাজির হতে দেখলে দোষ দেওয়া যাবে?

দুপুরবেলা মাঠের কাছাকাছি চরম সুস্বাদু পদ্মার ইলিশের পার্টি দিয়েছিলেন বাংলাদেশী সাংবাদিকদ্বয়। তাঁদেরই এক জন বললেন, “আমাদের ক্রিকেটাররা প্রাণপণে চাইবে ভারত-পাক ফাইনাল খেলুক। একমাত্র তা হলেই ওদের ব্যর্থতার ওপর থেকে মানুষের নজর কমবে।” মিরপুরে মঙ্গলবারের রাত তার উপায় আর খোলা রাখল না। এমনই চুরমার করা, একপেশে জয় যে, ক্রিস গেইলরা গ্যাংনাম নাচার মোটিভেশন অবধি পাননি।

ইলিশের মরসুম এখন নয়। দেড় কেজি মাছও বহু কষ্টেসৃষ্টে মিলছে। সেটা তো সহজবোধ্য, কিন্তু বিপক্ষকে পাঁচ উইকেটে ৮১ এমন অবস্থায় নামিয়ে আনার পর এ ভাবে ম্যাচ হারবে কেন পাকিস্তান? কেন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সোহেল তনবীরের মতো কাউকে আগে পিঞ্চ-হিটার পাঠাবেন না জাহির আব্বাস? কেন সুনীল নারিনকে এমন ঠকঠকে ভাবে খেলবে পাকিস্তান মিডল অর্ডার যেন হানাবাড়িতে মাঝরাতে ঢুকে পড়েছে?

অনুমান করার একটুও চেষ্টা করছি না এই যে, ডোয়েন ব্র্যাভো আর ডারেন স্যামিকে ৩২ বলে ৭১ জুড়তে দিল পাকিস্তান, এর পর তাদের টিভি চ্যানেলগুলোয় কী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে? চেষ্টা করছি না কারণ পাক টিভির এই সব ক্রিকেট অনুষ্ঠান রিয়্যালিটি শো-র মতো। কবে কী হবে কেউ বলতে পারে না। মাঝে মাঝেই মনে হয় ক্রিকেট শো নয়, যেন বিগ বস চলছে। আগের দিন মহম্মদ ইউসুফ মতের অমিল হওয়ায় তীব্র কটাক্ষে রামিজ রাজা সম্পর্কে বলেছিলেন, “ও তো অ্যাঙ্কর। টেকনিক্যাল দিকগুলো কী বোঝে? রামিজ হল পাকিস্তান ক্রিকেটের হর্ষ ভোগলে।” শুনে রামিজ লাইভ প্রোগ্রামের মধ্যেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন। দ্রুত বলেন, “মহম্মদ ইউসুফ কখনও মিসবা উল হক নয় যে দলের জন্য খেলেছে। ইউসুফ হল চরম স্বার্থপর ক্রিকেটার। যে প্রমাণ করেছে লম্বা দাড়ি রাখলেই সাত্ত্বিক হয় না। দাড়িতে ভেতরকার দুর্গন্ধ দূর হয় না।”

ক্রিকেটবিশ্ব নামী বিশেষজ্ঞদের এমন এক্সচেঞ্জ জীবনে কোথাও দেখেনি। কিন্তু রামিজ এ দিনও এবিপি-কে বললেন, “আজকের প্রোগ্রামেও যদি ইউসুফ কিছু বলতে আসে, দেব ঠুসে।” এটা শুনে নীচের লাউঞ্জে নামতেই দেখা হয়ে গেল শোয়েব আখতারের সঙ্গে। তাঁর রাগ আফ্রিদির ওপর। “কর না, কত বড় প্লেয়ার তুই এখন ১৬৬ চেজ করে জেতা। আজ যদি রান না পাস, আমি টিভিতে দেখছি। খুব তো ইন্ডিয়া ম্যাচ জিতিয়ে আমার সম্পর্কে বলেছিলি, আমি হলাম মিস্টার হাইড।”

পাকিস্তানি সাংবাদিকেরা বলছিলেন, এর পরেও মহম্মদ হাফিজকেই কুড়ি ওভারের নেতা রেখে দেওয়া হবে। যেহেতু আর কেউ নেই। একমত হওয়া যাচ্ছে না। পাকিস্তান জনমানসে হারের এক ঘণ্টার মধ্যেই ক্রোধের যা নমুনা ফেসবুক আর টুইটারে ভেসে উঠছে, তাতে খুব পরিষ্কার, কাউকে যেতে হবেই। হয় জাহির আব্বাস, নয়তো তার অধিনায়ক! পাঁচ বছর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যে দুই বোলার দেশকে দিয়েছিলেন, সেই উমর গুল আর সইদ আজমলই কিনা মাঝের চার ওভারে মার খেয়ে খেয়ে ম্যাচটা ঘুরিয়ে দিলেন। ডোয়েন ব্র্যাভো এমন পিটছিলেন যে মনে হচ্ছিল এর আগের ম্যাচটায় অনেক বিনোদন ছিল!

বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়া নয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট প্রেস বনাম সাকিব আল হাসান। সকালের কাগজে সাকিব এ দিন এমন উদ্ধত একটা ইন্টারভিউ দিয়েছেন, যার পাশে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকেও পাড়ার ফুটফুটে খোকন মনে হবে!

সাকিব বলেছেন টিম নাকি খেলতে পারেনি দেশের মানুষের চাপে। বলেছেন, বাংলাদেশকে যদি ভাল খেলতে হয়, বাংলাদেশ বোর্ডের এখন দেশের বাইরে খেলার আয়োজন করা উচিত। দাবি করেছেন, যারা দেশ দেশ বলে চেঁচাচ্ছে, তাদের নব্বই ভাগের আদৌ দেশপ্রেম আছে কি না সন্দেহ! আগামী ক’দিন ক্রিকেটের যাবতীয় কফিহাউস আড্ডা সাকিব নিয়েই হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আফ্রিদিরা সেটা ঘুরিয়ে দিলেন নিজেদের দিকে। টুইটারে অবশ্য দেখছি, তাঁকে নিষ্কৃতি দিয়ে কামরান আকমল আর শোয়েব মালিকের জন্য ডিম অর্ডার দেওয়া চলছে।

আর একটা টুইট খেলার পর চোখে পড়ল...করেছেন ক্রিস গেইল: ‘ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন্স— ডাবল অর নাথিং।’ অর্থাৎ সেমিফাইনালে উঠেছি তো কী, গত বারের চ্যাম্পিয়ন আমরা। একমাত্র দ্বিতীয় বার চ্যাম্পিয়ন হতেই উৎসাহী।

যদিও কুড়ি ওভার ইনস্ট্যান্ট কফির মতো। স্বাদই বোঝা যায় না। তবু কোথাও যেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান মনোভাবে পুরনো সত্তর দশকের ছোঁয়া পাওয়া গেল। সেই মুখে হাসি উপভোগ করো। কিন্তু কর্কশতম থাকো মাঠে। ডারেন স্যামি অনর্গল হেসে গেলেন। কিন্তু সেই হাসির মধ্যে লুকিয়ে আছে ছোট একটা স্ট্যাট: গত ছ’মাসে টি-টোয়েন্টিতে তাঁর স্ট্রাইক রেট ২৪৬!

ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা পুরনো মেজাজে— এটাই কি তা হলে সপ্তাহের আজবতম? কে জানে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬৬-৬ (ব্র্যাভো ৪৬, হাফিজ ১-১৫)
পাকিস্তান ৮২ (বদ্রী ৩-১০, নারিন ৩-১৬)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন