মাস কয়েক আগেই আইপিএল চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্সকে দেওয়া রাজ্য সরকারের মেগা সংবর্ধনায় অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর-সহ বেশির ভাগ ক্রিকেটার উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার দুপুরে প্রথম আইএসএল চ্যাম্পিয়ন আটলেটিকো দে কলকাতাকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া সংবর্ধনা সভায় কিন্তু হাজির থাকছেন না দলের অর্ধেক ফুটবলারই। যা খবর তাতে ছাব্বিশ ফুটবলারের মধ্যে বারো জন উপস্থিত থাকবেন। কোচ আন্তোনিও হাবাস, মার্কি ফুটবলার লুই গার্সিয়া-সহ কোনও বিদেশি ফুটবলারই উপস্থিত থাকতে পারছেন না। সবাই ফাইনালের পরের দিন শহরে ফিরে সেই রাতেই নিজেদের দেশের বিমান ধরে ফেলেছেন।
আটলেটিকোর ষোলো জন ভারতীয় ফুটবলারের মধ্যে ক্লাইম্যাক্স লরেন্স এবং ডেঞ্জিল ফ্র্যাঙ্কোও ফিরে গিয়েছেন গোয়ায়। তবে ফাইনালে জেতার গোল যাঁর, সেই মহম্মদ রফিকের সঙ্গে অর্ণব মণ্ডল, কেভিন লোবো, বলজিত্ সিংহ, সঞ্জু প্রধানরা থাকবেন মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে সংবর্ধনা নিতে। কোচিং টিমের মধ্যে কোনও ম্যাচেই রিজার্ভ বেঞ্চে যাঁর জায়গা হয়নি সেই সহকারী কোচ হোসে ব্যারেটো ছাড়া কেউই থাকতে পারছেন না চ্যাম্পিয়ন আটলেটিকোর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে।
বোরহা, হোফ্রে, ফিকরু নাতো, হোসেমি, বেটে যে সব বিদেশি ফুটবলারের নাম আইএসএলের সময় কলকাতা দলের সমর্থকদের মুখে-মুখে ঘুরত, তাঁদের কেউ না থাকায় এমনিতেই অনুষ্ঠানের জৌলুস কমেছে। সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে বাংলার পদ্মশ্রী, অর্জুন এবং তারকা ক্রীড়াবিদদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে নেতাজি ইন্ডোরের অনুষ্ঠানে। ক্রীড়া দফতর থেকে তাঁদের ফোনে নিমন্ত্রণ করার পালা চলে এ দিন। সারদা-কাণ্ডে ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র গ্রেফতার হওয়ার পর ময়দানের গোষ্ঠ পালের মূর্তির নীচে যে প্রতিবাদী ধর্নামঞ্চ তৈরি হয়েছিল, সেখানে বারবার ডাক পাওয়া সত্ত্বেও আসেননি মদন-ঘনিষ্ঠ অনেক খেলোয়াড়ই। এখন রাজ্য সরকারের দেওয়া রফিক-অর্ণব-কিংশুকদের সংবর্ধনায় কত জন হাজির হন সেটা দেখার।
তবে ধর্নামঞ্চ এবং প্রতিবাদ মিছিলে যাঁরা হাজির ছিলেন সেই গৌতম সরকার, সমরেশ চৌধুরী, সুধীর কর্মকররা থাকছেন বুধবার নেতাজি ইন্ডোরেও। গৌতম এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনও করেন। অন্য সময় হলে তারকা জোগাড়ের কাজটা হয়তো করতেন ক্রীড়ামন্ত্রী স্বয়ং। এ দিন নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে আটলেটিকোর তিন মালিক সঞ্জীব গোয়েন্কা, হর্ষ নেওটিয়া, উত্সব পারেখের পাশে ছিলেন রাজ্য ফুটবল অ্যাকাডেমির টিডি গৌতম। সত্তরের দশকের তারকা ফুটবলার বলে দেন, “ক্রীড়ামন্ত্রী অনুষ্ঠানে না থাকায় খারাপ লাগছে। দুঃখ হচ্ছে।” জানিয়ে দেন, রাজ্য ফুটবল অ্যাকাডেমির ৪০ ফুটবলার সুযোগ পেলে সংবর্ধনা-মঞ্চে উঠে নানা কসরত দেখাবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যান্য অনুষ্ঠানের মতো টলিউড তারকারা আজও থাকছেন ইন্ডোরে। অনুষ্ঠান পরিচালনাও করবেন এক টলিউড তারকা। গান-বাজনা হবে আধঘণ্টা।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন কেকেআরের প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছিল সোনার চেন, আংটি। আইএসএল চ্যাম্পিয়ন রফিক-অর্ণবদের দেওয়া হবে জয়নগরের মোয়া, তুলাইপাঞ্জি চাল, দার্জিলিংয়ের চা, ডোকরা-শিল্পের সামগ্রী। কেন এমন বিভেদ? আটলেটিকোর এক মালিক বললেন, “আমরা জানি না কী দেওয়া হবে। দিদি-ই সব জানেন।” অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
অনুষ্ঠান শুরু দুপুর সাড়ে বারোটায়। ইন্ডোরে ঢোকার কোনও প্রবেশপত্র থাকছে না। দশ হাজার দর্শক আসবেন মনে করছেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু এ সব ক্ষেত্রে যিনি ভিড় সংগঠিত করে থাকেন সেই ক্রীড়ামন্ত্রী-ই তো হাজতে! দেখার, বারো ফুটবলারকে মুখ্যমন্ত্রীর সংবর্ধনা দেওয়া দেখতে ক’জন আসেন!