বসিরহাটের ছেলেদের কাছে এ ভাবেই বার বার আটকে যাচ্ছিল মোহনবাগানের আক্রমণ। —নিজস্ব চিত্র।
শেষ বাঁশি বাজার কয়েক মুহূর্ত আগে ধনচন্দ্র সিংহের দেওয়া গোলে কোনও রকমে মুখরক্ষা হল মোহনবাগানের। ৩-২ গোলে বসিরহাটের নিউবাণী সঙ্ঘকে হারিয়ে দিল তারা।
কলকাতা ফুটবল লিগ শুরু হওয়ার আগে দু’দলের মধ্যে প্রীতি ম্যাচের আয়োজন হয়েছিল। বুধবার টাকি এরিয়ান মাঠে বলে পা ঠেকিয়ে ম্যাচের সূচনা করেন বিধায়ক সুজিত বসু। খেলার প্রথম থেকে মোহনবাগানের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সুভাষ ভৌমিক প্রথম সারির খেলোয়াড়দের বসিয়ে রেখে দল নামান। কিন্তু খেলা এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ার্ধ্বে সুভাষবাবু আর কোনও ঝুঁকি নেননি। একে একে আস্তিনের সেরা তাসদের নামিয়ে দেন মাঠে। লালকমল ভৌমিক, কাতসুমি, বলবন্ত সিংহ, জেজে, কিংশুক দেবনাথদের দেখে তখন উদ্বেলিত মাঠের হাজার হাজার দর্শক। তা সত্ত্বেও অবশ্য জয়ের জন্য শেষ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে মোহনবাগানকে।
কলকাতা লিগ শুরু হওয়ার আগে দলের ছেলেদের এমন পারফরম্যান্সে স্বভাবতই অখুশি সুভাষবাবু। যদিও খেলা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “খাটালের মতো মাঠ আর বিশ্রী রেফারিংয়ে এর থেকে ভাল খেলা সম্ভব নয়।” কলকাতার মাঠে তাঁর ছেলেরা যে আরও ভাল খেলবে, সেই দাবিও করে গিয়েছেন তিনি। পুরষ্কার বিতরণীর আগেই মাঠ ছাড়েন দৃশ্যতই বিরক্ত সুভাষবাবু।
এ দিন খেলার ১২ মিনিটের মাথায় মোহনবাগানের হয়ে প্রথম গোল করেন এস সাবিথ। তাই দেখে দর্শকেরা ভাবছিলেন নিউবাণী সঙ্ঘের খেলোয়াড়দের বুঝি ‘গোলের মালা’ পরতে হবে। কিন্তু গোল খেয়ে উল্টে জ্বলে ওঠেন নিউবাণীর এগারো জন। দলের ক্যাপ্টেন প্রখ্যাত খেলোয়াড় দীপেন্দু বিশ্বাসের একটি জোরালো শট বিপক্ষের গোলপোস্টের গাঁ ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। এক সময়ে বসিরহাটের মিহির বসু, নাসির আহমেদ, অলোক দাস, বি দেবনাথ, নাজিমুল হক, হাবিবুর রহমান, মিরাজুল মোস্তাফা, তপন ঘোষের মতো খেলোয়াড়েরা কলকাতার মাঠ কাঁপিয়েছিলেন। অভিজ্ঞ সুভাষবাবু বুঝে যান, সহজে ছাড়ার পাত্র নয় এখানকার ছেলেরা। ৩৫ মিনিটের মাথায় মোহনবাগানের জালে বল জড়িয়ে গোল শোধ করেন নিউবাণীর মনিরুল মণ্ডল। হাততালিতে ফেটে পড়ে গোটা মাঠ। দ্বিতীয়ার্ধ্বে নিউবাণীর হয়ে আরও একটি গোল করেন প্রীতম সরকার। মোহনবাগানের হয়ে এস সাবিথ ফের এক গোল করে খেলায় সমতা ফেরান। কিন্তু শেষ বাঁশি বাজার কয়েক মুহূর্ত আগে মোহনবাগানের হয়ে আর একটি গোল করেন ধনচন্দ্র।
এ দিন ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় বিবেচিত হয়েছেন নিউবাণীর প্রীতম সরকার। ম্যাচ ঘিরে গোটা এলাকায় উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। ইছামতীর ধারে যে গেস্টহাউসে মোহনবাগানের খেলোয়াড়দের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল, সেখান থেকে শোভাযাত্রা করে সকলকে মাঠে আনা হয়। পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী, ম্যাজিস্ট্রেট অভিজিৎ ঘোষ, টাকির পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায়রাও এ দিন ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন।
দীপেন্দু বলেন, “খেলা খুবই ভাল হয়েছে। দর্শকেরা প্রতি মুহূর্ত উপভোগ করেছেন। বসিরহাটের ছেলেরা মোহনবাগানের নামী ফুটবলারদের বিরুদ্ধে সমানে সমানে লড়াই চালিয়ে গিয়েছে। তবে মাঠ একটু ভাল থাকলে আরও ভাল খেলা উপহার দেওয়া যেত।” বড় ইভেন্ট সামলে উঠে খুশি সোমনাথবাবু। তিনি বলেন, “সকলে যে ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তাতে আশা করছি ভবিষ্যতে ফুটবলের আরও বড় আসর বসানোর চেষ্টা করতে পারব এখানে।”