Suicide

গুজবের জেরে ‘মানসিক চাপ’, আত্মঘাতী যুবক

রবিবার বিকেলে যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় বাড়ি থেকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২০ ০৪:৩১
Share:

প্রতীকী ছবি।

দিন কয়েক আগে বাড়ি ফিরেছিলেন বছর সাতাশের যুবক। শরীর ভাল যাচ্ছিল না। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তারকে দেখান। সামান্য দুর্বলতা ছাড়া বড় কোনও সমস্যা খুঁজে পাননি চিকিৎসকেরা।

Advertisement

কিন্তু গ্রামে রটে যায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনি। পরিবারটি কার্যত একঘরে হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। গ্রামের কল থেকে জল নিতেও বাধা দেওয়া হয়। ছেলের মা পাশের গ্রামে বাপের বাড়িতে থাকেন। সেখান থেকে ছেলের জন্য খাবার নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তাঁকেও গ্রামে ঘোরাঘুরি করতে কিছু লোক নিষেধ করে বলে অভিযোগ।

রবিবার বিকেলে যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় বাড়ি থেকে। পরিবারের অভিযোগ, এই মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। যুবকের বোনের কথায়, ‘‘যারা দাদার সঙ্গে এমন করল, তাদের কঠোর শাস্তি চাই।’’ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। দেহ পাঠানো হয়েছে ময়না-তদন্তে।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার গ্রামে থাকতেন ওই যুবক। কলকাতায় ছোটখাট ব্যবসা ছিল। লকডাউনের জেরে আপাতত কাজকর্ম না থাকায় ক’দিন আগে বাড়ি ফিরেছিলেন।

ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, তিনি নিজেই ২৪ মার্চ গাইঘাটা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসককে দেখিয়েছিলেন। স্থানীয় লোকজনের চাপে ফের ২৭ মার্চ চাঁদপাড়া ব্লক হাসপাতালে যান। স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁর বাড়িতে গিয়েও দেখে এসেছেন। গাইঘাটার বিএমওএইচ সুজন গায়েন বলেন, ‘‘শারীরিক দুর্বলতা ছাড়া আর কোনও রোগের উপসর্গ ছিল না ওই যুবকের। তার পরেও লোকজন বুঝতে না চাওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক।’’

স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘ঘটনাটা শুনে স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়েছিলাম। ওঁর করোনা হয়নি বলে জানান চিকিৎসকেরাও।’’ গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ ধ্যানেশনারায়ণ গুহ বলেন, ‘‘বাইরে থেকে বাড়ি ফেরা মানুষদের নিয়ে গ্রামের মানুষ গুজব রটাচ্ছেন। আতঙ্কে ভুগছেন অনেকে। আমরা সকলকে বোঝানোর চেষ্টা করছি।’’

একই ধরনের গুজবের শিকার হন বনগাঁর এক তরুণীও। ক’দিন আগে জ্বর হয় তাঁর। সংক্রামক রোগ সন্দেহে তাঁকে চিকিৎসকেরা বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন। পরীক্ষার পরে ২৫ মার্চ তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই এলাকার কেউ রটিয়ে দেয়, তরুণী করোনা-আক্রান্ত। সোশ্যাল মিডিয়ায় সে কথা লেখা হয়। পেশায় শিক্ষিকা ওই তরুণী বলেন, ‘‘মুদির দোকান থেকে আমাদের মালপত্র দেওয়া হচ্ছে না। এক মহিলা মেয়ের দুধ ও খাবার এনে দিতেন। তাঁকেও লোকজন নিষেধ করেছেন, আমাদের বাড়ি না আসতে।’’ মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া এলাকার সদ্য মার্কিন মুলুক থেকে ফেরা এক তরুণীও পাড়াপড়শির চাপে গৃহবন্দি। তাঁর গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, ওই তরুণী কিংবা তাঁর পরিবারের সঙ্গে মেলামেশা করলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। আর তার জেরেই তরুণীর মুদি-নাপিত তো বটেই, বন্ধ হয়েছে বাড়িতে অসুস্থ মায়ের ওষুধপত্রও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন