Mamata Banerjee

‘কারা কারা ভোটে দাঁড়াতে চান, হাত তুলুন’, বৈঠকে দিদির গুগলি

করোনা ও আমপান পরিস্থিতিতে দলের বিধায়কদের কাজ নিয়ে আলোচনায় কিছুটা অসন্তোষই ছিল তৃণমূলনেত্রীর কথায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২০ ০৩:৩১
Share:

তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

আপনারা কি ভোটে দাঁড়াতে চান না? শুক্রবার দলীয় বৈঠকে বিধায়কদের উদ্দেশে সরাসরি এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিধায়কদের একাংশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে। বিজেপি যে একতরফা প্রচারে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে, উল্লেখ করেন তা-ও।

Advertisement

বিধানসভা ভোটের আগে এ বছরই তৃণমূলের শেষ একুশে জুলাই কর্মসূচি। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর একুশে জুলাইয়ের আগেই ভোট হয়ে যাবে। শুক্রবার একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সংক্রান্ত এই বৈঠকে বিধায়কদের দিকে ছুঁড়ে দেওয়া দিদি-র এই ‘গুগলি’ পর্যবেক্ষকদের মতে তাৎপর্যপূর্ণ।

করোনা ও আমপান পরিস্থিতিতে দলের বিধায়কদের কাজ নিয়ে আলোচনায় কিছুটা অসন্তোষই ছিল তৃণমূলনেত্রীর কথায়। এই প্রসঙ্গ টেনে ভিডিয়ো বৈঠকে মমতা বলেন, ‘‘রাজ্যে নানা বিষয়ে একতরফা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। আমাদের দলের প্রচার কোথায়? তৃণমূল সরকার মানুষের জন্য এত কাজ করছে অথচ বিধায়কেরা তা নিয়ে প্রচার করছেন না!’’ এই প্রসঙ্গেই পুরুলিয়ার বিধায়ক শান্তিরাম মাহাতোর নাম করে তিনি বলেন, ‘‘এই যে তিনটে মাস গেল, কোথায় ছিলে তুমি? ঘর থেকেই বার হওনি। সকলকেই সুস্থ থাকতে হবে। কিন্তু মানুষের সঙ্গেও তো থাকতে হবে আমাদের।’’ তারপরই বিধায়কদের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আপনারা কী করছেন? ভোটে দাঁড়াবেন না? ভোটে দাঁড়িয়ে জিততে চান না?’’ তারপর মমতার ঘোষণা, ‘‘কারা কারা ভোটে দাঁড়াতে চান, হাত তুলুন।’’ সূত্রের খবর, এক বিধায়ক হাত না তোলায়, তাঁকে লক্ষ্য করে মুখ্যমন্ত্রীর তাঁর নাম করেই বলেন, ‘‘কী হল! আর দাঁড়ানোর ইচ্ছে নেই?’’ শুনে ওই বিধায়ক তড়িঘড়ি হাত তোলেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: নবান্নে দাদা, গুঞ্জন বাড়ছে ‘ব্যাটিং কৌশল’ ঘিরেই

আরও পড়ুন: আবার ফিরল সেই টাকা ফেরানোর দৃশ্য, ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে কি? ধন্দ তৃণমূলেই

রাজনৈতিক মহলের মতে, এ ভাবে প্রকাশ্যে বিধায়কদের কাজ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা দুটি বার্তা দিয়েছেন। এক দিকে যেমন কাজে যাঁরা ‘উদ্যোগী’ নন, তেমন বিধায়কদের সতর্ক করেছেন অন্যদিকে আবার ভোটে ফের দাঁড়ানোর কথা বলে সবাইকে সঙ্গে রাখার কৌশলও নিয়েছেন।

এদিনের বৈঠকে বিধায়ক ছাড়াও দলের জেলা সভাপতি, পর্যবেক্ষকেরা ছিলেন। সেখানে ত্রাণের কাজ পর্যালোচনার সূত্রে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা দলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সাংগঠনিক বিষয়ে খোঁজ শুরু করেন। বসিরহাটের সাংগঠনিক বিষয়ে কথা উঠতে ফোনে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তথা বসিরহাটের দায়িত্বে থাকা নারায়ণ গোস্বামীকে ধরতে বলেন মমতা। বসিরহাট নিয়ে নিজের অসন্তোষের কথা বলে নারায়ণের কাছে মমতা জানতে চান, কেন এ রকম হচ্ছে। জবাবে নারায়ণ বলার চেষ্টা করেন, স্থানীয় গ্রাম কিছু পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধানের জন্যই এই দুর্নীতির কথা উঠছে।

তা শুনেই বৈঠকে উপস্থিত দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী বলে ওঠেন, এই সব প্রধান-উপপ্রধান তো শীর্ষ নেতৃত্ব ঠিক করেননি। স্থানীয় স্তরেই ঠিক করা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ ধরে ক্ষুব্ধ মমতা জানিয়ে দেন, যাঁরা দুর্নীতি করেছে তাঁদের দল থেকে তাড়াতে হবে। এবং যেহেতু পঞ্চায়েতের পদাধিকারীদের স্থানীয় নেতারা বেছে নিয়েছিলেন তাই এ কাজ করতে হবে তাঁদেরই। এ দিন আরও এক বার তিনি দলকে জানিয়ে দেন, তৃণমূল ছেড়ে যাঁরা অন্য দলে যেতে চান, তাঁরা চলে যেতে পারেন।

দলের একাধিক জেলা সভাপতি ও বিধায়কদের নাম ধরে দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। পুরসভার কাজকর্ম প্রসঙ্গে কাউন্সিলরদের একাংশের কড়া সমালোচনা করে হুঁশিয়ারি দেন, যে সব জায়গায় সংরক্ষণের জন্য বিদায়ী কাউন্সিলর এ বার প্রার্থী হতে পারবেন না, সেখানে তাঁরা কোনও কাজ করছে না তা তিনি জানেন। সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে ধমক খেয়েছেন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। কৃষ্ণনগরের সভানেত্রী মহুয়া মৈত্রের কাজকর্ম নিয়ে স্থানীয় নেতাদের অসন্তোষ রয়েছে। মহুয়ার নাম না করেও এ দিন পুরনো নেতাদের সংগঠনের কাজে গুরুত্ব দিতে বলেছেন মমতা। তা নেতাদের নজর এড়ায়নি।

এদিনের বৈঠকেই স্থির হয়েছে সদ্যপ্রয়াত দলীয় বিধায়ক তমোনাশ ঘোষের জায়গায় তৃণমূলের কোষাধ্যক্ষ হবেন দলের সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন