ধর্নামঞ্চ থেকে ‘স্বাধীনতা আন্দোলনে’র জন্য তৃণমূলকে আজ পথে নামার নির্দেশ মমতার

রবিবার রাতে ধর্নামঞ্চ থেকে মমতা নির্দেশ দেন, কোথাও রাস্তা অবরোধ করে মানুষকে অসুবিধায় ফেলা যাবে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৯
Share:

ধর্মতলার ধর্নামঞ্চ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

ধর্মতলার ধর্নামঞ্চ থেকে ‘স্বাধীনতা আন্দোলনে’র ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নরেন্দ্র মোদীর সরকারের হাত থেকে দেশ ও সংবিধান বাঁচাতে আজ, সোমবার বেলা দু’টো থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত রাজ্যের সব পাড়ায় তৃণমূল কর্মীদের মিছিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যদিও মুখ্যমন্ত্রী ধর্নায় বসার সঙ্গে সঙ্গেই কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা এবং রেল অবরোধ শুরু করে দেন তৃণমূল কর্মীরা।

Advertisement

রবিবার রাতে ধর্নামঞ্চ থেকে মমতা নির্দেশ দেন, কোথাও রাস্তা অবরোধ করে মানুষকে অসুবিধায় ফেলা যাবে না। একই সঙ্গে কর্মীদের সতর্ক করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘বিজেপি নানা ভাবে ষড়যন্ত্র করে দাঙ্গা করতে চায়। গোলমাল বাধাতে চায়। আপনারা উত্তেজনা, প্ররোচনায় পা দেবেন না। শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ করবেন। সব উত্তেজনার মোকাবিলা করবে প্রশাসন।’’

বিরোধীরা গোটা পরিস্থিতিকে ‘স্বাধীনতার পর বেনজির ঘটনা’ বলে উল্লেখ করে প্রশ্ন তুলেছে, প্রধানমন্ত্রীকে হঠানোর ধর্নামঞ্চে কী করে আইপিএস অফিসাররা হাজির থাকতে পারেন? সেই সঙ্গেই প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ দিয়ে কর্তব্যরত সিবিআই অফিসারদের আটক করা এবং পুলিশ-কর্তাদের সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ধর্নায় বসা কি সংবিধানসম্মত? সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের সাড়ে চার বছর পরেও সারদা-কাণ্ডের তদন্তে সিবিআই পর্যাপ্ত গতি দেখায়নি, এই অভিযোগ করেও সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে ঘটনা ঘটছে, তার পুরোটাই অন্যায়, অনৈতিক ও অসাংবিধানিক।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: সিপি-র বাড়িতে সিবিআই হানা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য চূড়ান্ত সংঘাত, ধর্নায় মমতা

ওঁরা বলেন

“সিবিআইয়ের মতো তদন্তকারী সংস্থা কোনও মামলায় যে কাউকে জেরা করতে পারে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ডাকার পর তিনি না এলে তাঁর বাড়িতে গিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। তিনি পুলিশ কমিশনার হলেও পারে। তবে সে ক্ষেত্রে তদন্তকারী অফিসারের কাছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র
থাকা আবশ্যিক।’’ —দীপনারায়ণ মিত্র,আইনজীবী

“রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়নি। ১৬০ ধারায় সাক্ষী হিসাবে ডাকা হয়েছিল।
অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি
(গত জুলাইয়ে পুলিশ কমিশনার তদন্তে সহযোগিতা করছে না বলে সুপ্রিম কোর্টে যায় সিবিআই। রাজ্যের আইনজীবী ছিলেন অভিষেক)

“পুলিশ কমিশনারকে ডাকা সত্ত্বেও যদি তিনি না আসেন, তাঁর বাড়ি পৌঁছে যাওয়া কাজের কথা নয়। প্রয়োজনে আদালতে যেতে পারত সিবিআই।” —এ পি সিংহ, প্রাক্তন সিবিআই অধিকর্তা

কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী মমতাকে ফোন করে সমর্থন জানালেও প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে বলা হয়েছে, ‘পূর্ণাঙ্গ সাংবিধানিক সঙ্কট। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও রাজ্য পুলিশের মধ্যে গুন্ডাদের মতো রাস্তায় সংঘাত হচ্ছে। মোদী ও দিদির দুই প্রশাসনই ব্যর্থ’।

মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সরকারের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘‘স্বাধীনতার পরে দেশে এমন ঘটনা এই প্রথম ঘটল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চলা তদন্তে মুখ্যমন্ত্রী বাধা দিয়েছেন। তদন্তকারী অফিসারদের উপর বলপ্রয়োগ করা হয়েছে। যা গণতন্ত্রের পক্ষে দুর্ভাগ্যজনক।’’

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র অভিযোগ করেছেন, বামেদের ‘ব্রিগেড সমাবেশের সাফল্য’ থেকে নজর ঘোরাতে বিকেল থেকেই অতিনাটকীয় ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। রাজ্য সরকার ‘অপরাধী’দের আড়াল করার চেষ্টা করছেন। এবং কেন্দ্রও বিষয়টি জিইয়ে রেখে নাটকে ইন্ধন জোগাচ্ছে। ‘চোর ধরো, জেল ভরো’— এই ডাক দিয়ে আজ, সোমবার বিকেলেই কলকাতায় মিছিলের ডাক দিয়েছে সিপিএম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন