Travel

ভ্রমণকাহিনি বা উদ্ভিদবিদ্যার সহজপাঠ

তাঁর রচনার চলনে বোঝার উপায় নেই, তিনি ঠিক কোন রাজনৈতিক ভূখণ্ডের বাসিন্দা। আদতে তিনি বাংলাদেশের মানুষ, পেশায় স্থপতি। চাকরি করেন রিয়াধে।

Advertisement

মিলন দত্ত

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২১ ০২:২৬
Share:

বাড়ির হাতায় (কখনও ছাদে) অল্পস্বল্প আনাজ বা শাকপাতার ছোট বাগিচা হল ‘রসুই বাগান’ বা কিচেন গার্ডেন। সে বাগানের যাবতীয় আনাজ যায় পরিবারের রান্নাঘরে। জায়েদ ফরিদ তাঁর রসুই বাগান সাজিয়েছেন বৃক্ষ, গুল্ম আর তরুর সমন্বয়ে। সেখানে দৈনন্দিন ব্যবহারের শাকপাতা বা তরিতরকারি সামান্যই। তা হলে কী আছে? বৃক্ষ, গুল্ম আর তরু মিলিয়ে তিনটি পর্যায়ে ত্রিশটি উদ্ভিদের বিবরণ। বৃক্ষ ন’টি, গুল্ম চোদ্দোটি আর লতা সাতটি। আফ্রিকার বাওয়াব গাছের মতো মহাবৃক্ষ বা মিশর বা ইথিয়োপিয়ার দৌমফল (ডালপালা ছড়ানো খেজুর গাছের মতো দেখতে) থেকে শিয়ালকাঁটা, ঢেঁকিশাক, নটেশাক— ব্যাপক বৈচিত্রে সাজানো তাঁর বাগান। তাঁর বাগানের প্রায় সমস্ত উপজাত কোনও না কোনও ভাবে মানুষের খাদ্যোপযোগী বা রন্ধন-সহায়ক। গোটা দুনিয়া ঢুঁড়ে তিনি হাজির করেছেন তাঁর বৃক্ষ-তরু-গুল্মাদি। এ বই উদ্ভিদাদির বিবরণ, না কি উদ্ভিদ বিজ্ঞানের সহজপাঠ, না কি ভেষজবিদ্যা, না কি তাঁর দুনিয়া জোড়া ভ্রমণাভিজ্ঞতা— ধন্দে পড়তে হয়। গদ্যটাও চমৎকার, টান টান, সুখপাঠ্য।

Advertisement

তাঁর রচনার চলনে বোঝার উপায় নেই, তিনি ঠিক কোন রাজনৈতিক ভূখণ্ডের বাসিন্দা। আদতে তিনি বাংলাদেশের মানুষ, পেশায় স্থপতি। চাকরি করেন রিয়াধে। কিন্তু অনায়াসে বলে যান, “কলকাতায় আজকাল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর এই লতা (অনন্তলতা)। এক সময় অসংখ্য লতা ছিল আলীপুর কোর্টের কাছে, সেগুলি নিশ্চিহ্ন। শুনেছি বালিগঞ্জে আর টালিগঞ্জে এখনও রয়েছে কিছু।” উদ্ভিদচর্চা থেকে রান্নাবান্নায় তাঁর অনায়াস গতায়াত। ‘কালপাসি’ নামে একটি মশলা, ‘যা একক ভাবে ছত্রাক বা শৈবাল নয়’— তামিলনাড়ুর চেট্টিনাড় বা মহারাষ্ট্রের কুইজ়িনে এর ব্যবহারে স্বাদের কী তারতম্য হয়, তার নিখুঁত বর্ণনা করেন। ভ্যানিলা এক লতানো অর্কিড, এবং তার ফুল ভোরবেলায় ফুটে চুপসে যায় দুপুরেই, তার মধ্যেই টুথপিক দিয়ে একটি একটি করে পরাগায়ন করতে হয়। ফল থেকে ভ্যানিলা নিষ্কাশন এক জটিল ও সময়সাধ্য প্রক্রিয়া। তাই দামও আকাশছোঁয়া। সেই সূত্রেই জেনেছি, কাশ্মীরে ৫০০ গ্রাম জাফরান তৈরি করতে ৮০ হাজার জাফরান ফুল দরকার। আর একটা গাছে চারটির বেশি ফুল ধরে না।

কোনও উদ্ভিদের গুণাগুণের আলোচনায় লেখক যেমন আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণা বা উদ্ভাবনে আলোকপাত করেন, তেমনই অবলীলায় উপনিষদ, বেদ, শুশ্রুত, চরক সংহিতা, প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যের অবতারণা করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোনও উদ্ভিদের খাদ্যোপযোগিতা বা তার ভেষজ গুণ এবং তার পরম্পরাগত লোকায়ত ও আধুনিক ব্যবহার বিষয়েও অবগত করেন। এর কোনও কিছুই আমাদের পাঠ্যক্রমে নেই। ফণীমনসা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনায় লেখক বলেন, “সারা পৃথিবীতে কিরূপ কাহিনি হয়ে বিরাজ করছে ফণিমনসা, আমরা তার হদিস পাই না। পা ই না, কারণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাই এমন, অল্পে তুষ্টি, নইলে অনাসৃষ্টি।”

Advertisement

কলকাতা থেকে প্রকাশিত এই ধরনের একমাত্র বই সম্ভবত তারকমোহন দাসের আমার ঘরের আশেপাশে (১৯৬২)। বরং বাংলাদেশে দ্বিজেন শর্মার (আলোচ্য বইটি লেখক ওই বৃক্ষাচার্যকে উৎসর্গ করেছেন) অনেকগুলি বই রয়েছে। আর আছে নওয়াজেশ আহমদের দু’টি বই। জায়েদ ফরিদ অবশ্য তাঁর বইটি প্রকাশ করার জন্য বেছে নিয়েছেন কলকাতাকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন