5 Winter Travel Destination

চেনা ছকের বাইরে ভ্রমণ, বঙ্গেই আছে তেমন ঠিকানা, কাছেপিঠের ৫ জায়গা শীতেই ঘোরার জন্য আদর্শ

ভীষণ অচেনা না হলেও, বঙ্গের নানা প্রান্তে এমন ঠিকানাও আছে, যা সকলের হয়তো জানা নেই, কিংবা এখনও ঘুরে দেখা হয়নি। এমন ৫ স্থান হতে পারে শীতের গন্তব্য। চোখ বুলিয়ে নিন তালিকায়।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৫ ১০:১৫
Share:

সমতল থেকে পাহাড়— বঙ্গের আনাচ কানাচে এমন অনেক জায়গা আছে যা শীতের গন্তব্য হতে পারে। স্বল্পচেনা এমন ৫ ঠিকানা জেনে নিন। ছবিটি ডুয়ার্সের। ছবি: সংগৃহীত।

শীতে কোথায় যাওয়া যায়, ভাবনা তা নিয়ে? মন্দারমণি, দিঘা, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া— সবই তো বড্ড চেনা। এর বাইরে ঘোরার জায়গা আছে কি, প্রশ্ন অনেকেরই।

Advertisement

একেবারে অচেনা না হলেও, বঙ্গের নানা প্রান্তে এমন ঠিকানাও আছে যা সকলের হয়তো জানা নেই, কিংবা এখনও ঘুরে দেখা হয়নি। এমন ৫ স্থান হতে পারে শীতের গন্তব্য। চোখ বুলিয়ে নিন তালিকায়।

গোপালপুর

Advertisement

অরণ্য, নদী, মন্দির— সব মিলিয়ে গোপালপুরের সৌন্দর্য। ছবি: সংগৃহীত।

ভাবছেন এ আবার অচেনা না কি? গোপালপুরের সৈকতে কত সিনেমার শুটিং হয়েছে এক সময়। সকলেই জানেন ওড়িশার সৈকত শহরের কথা। তবে যদি বলা হয়, গোপালপুর আছে এই বাংলাতেই, মানবেন কি? পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গোপালপুরে রয়েছে শাল, শিমুল, পিয়ালের বন। আছে পুরনো মন্দির, প্রাচীন গড়। সেখানেই ইদানীং বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা। কলকাতা থেকে গোপালপুরের দূরত্ব সড়কপথে কমবেশি ১৩৫ কিলোমিটার। মেদিনীপুর ট্র্যাফিক মোড় থেকে দূরত্ব মোটামুটি ৭-৮ কিলোমিটার। সেখান থেকে মেদিনীপুর শহরের গান্ধী মোড় হয়ে গেলেই পড়বে গোপালপুর বায়োডাভার্সিটি পার্ক। প্রবেশমূল্য দিয়ে সেখানে ঢুকতে হয়। পুষ্করিণী, ফুলে সজ্জিত উদ্যান। দেখা যায় শালের জঙ্গল। পার্ক ঘুরে গাড়ি বা টোটো ভাড়া করে বেরিয়ে পড়া যায় আশপাশের কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখতে। মুড়াকাটার কাছাকাছি রয়েছে কুন্দ্রামাতার থান। এ ছাড়াও এখান থেকে যেতে পারেন কংসাবতীর জোড়া ব্রিজ। নদীর বুকে দু’টি ব্রিজ পাশাপাশি। দেখে নিতে পারেন জমিদার বাঁধ। গাছগাছালি ঘেরা গ্রামীণ পরিবেশে, জলাধারের স্বচ্ছ জলে পা ডুবিয়ে খানিকটা সময় দিব্যি কেটে যাবে সেখানে। আর আছে লালগড়ের জঙ্গল। গোপালপুর স্কুল থেকে খানিকটা গেলেই দেখা মিলবে ভুবনেশ্বর এবং গগনেশ্বর নামে দুই শিবমন্দিরের। কালের প্রকোপে দেওয়ালের রং ফিকে হয়ে গেলেও এখন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়নি মন্দিরের টেরাকোটার কারুকাজ।

কী ভাবে যাবেন?

ট্রেনে গেলে নামতে হবে মেদিনীপুর স্টেশনে। ধেরুয়া, মুরাকাটা হয়েও যাওয়া যায়। কলকাতা থেকে গাড়িতে এলে কোলাঘাট পার করে ডেবরা টোল প্লাজ়া হয়ে কংসাবতীর ব্রিজ পেরিয়ে আসতে পারেন। ট্র্যাফিক মোড় হয়ে গোপালপুর।

দুবরাজপুর

বইয়ে পড়া মামা-ভাগ্নে পাহাড় চাক্ষুষ হবে এখানে এলে। ছবি: সংগৃহীত।

দুবরাজপুরের নাম অবশ্য অনেকেই শুনে থাকবেন। বীরভূমের শান্তিনিকেতন বা তারাপীঠ পর্যটক মহলে যতটা সমাদৃত, ততটা দুবরাজপুর নয়। তবে দর্শনীয় স্থানের কোনও কমতি নেই এখানে। আছে পাহাড়, জলাধার, মন্দির। ভ্রমণের আদর্শ সময় শীতকাল, কারণ বছরের অন্য সময় এখানে বেশ গরম থাকে। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ মামা-ভাগ্নে পাহাড়। পাহাড়ের উপর দু’টি পাথর এমন কায়দায় রয়েছে, যা দেখলে মনে হবে সযত্নে,ব্যালান্স করে তা বসানো হয়েছে। এই দুই পাথর থেকেই পাহাড়ের নাম মামা-ভাগ্নে। কাছেপিঠে ঘুরে নিতে পারেন রঘু ডাকাতের টেরাকোটার মন্দির। বাজারের কাছে রয়েছে শিব মন্দির যার ১৩টি চূড়া। নমো পাড়ায় আছে পাঁচটি শিব মন্দির। দুবরাজপুরের উপকণ্ঠে সিউড়ির সড়কপথে রয়েছে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। তা থেকেই তৈরি হয়েছে জলাধার, নাম নীল নির্জন। বিস্তীর্ণ জলরাশি শীতের দিনে দেখায় নীল। মেঘমুক্ত নীল আকাশের প্রতিবিম্বে জলের এমন রং দেখায়। মনোরম একটি পর্যটন স্থান। শীতের দিনে এখানে দেখা মেলে পরিযায়ী পাখিদের। দুবরাজপুর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে ফুলবেড়ে গ্রামে গেলে দেখতে পাবেন খগেশ্বর শিব মন্দির। দুবরাজপুর শহর থেকে ৩ কিলোমিটার পথ হেতমপুর। কাছেই রয়েছে সুবিশাল রাজবাড়ি। এটি হেতমপুরের চক্রবংশীয় রাজাদের বাসভবন, নাম রঞ্জন প্যালেস। এটিকে হাজারদুয়ারির ক্ষুদ্র সংস্করণ বলা যেতে পারে।

কী ভাবে যাবেন?

হাওড়া থেকে ট্রেনে সরাসরি দুবরাজপুর যেতে পারেন। হুল এক্সপ্রেস, ময়ূরাক্ষী এক্সপ্রেস, দু’টি ট্রেন রয়েছে। কলকাতা থেকে বাসে করে সিউড়ি গিয়েও দুবরাজপুর যাওয়া যায়।

গুড়গুড়িপাল

শালের জঙ্গল রয়েছে এখানে। আছে থাকার জন্য হোম স্টেও। ছবি : সংগৃহীত।

শালের অরণ্যে রাত্রিবাস করতে চান? ঘুরতে চান অরণ্যের আনাচকানাচে। পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি ছোট্ট গ্রাম গুড়গুড়িপাল। এখানকার শালের বনই পর্যটকের কাছে আকর্ষণের বিষয়। এই বনে দেখা মেলে সেগুন, আকাশমণিরও। খানিক দূর দিয়ে বয়ে গিয়েছে কাঁসাই নদী। রয়েছে একটি ইকো পার্কও। মেদিনীপুর শহর থেকে যার দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার।

তবে শুধু ইকো পার্ক দর্শন নয়, এই জায়গায় যাওয়া যায় প্রকৃতির সঙ্গে একলা হতে। যাওয়া যায় নিঝুম দুপুরে গাছেদের সঙ্গ পেতে। প্রিয়জনের সঙ্গে কাঁসাইপারে বসে কিছু ভাললাগা ভাগ করে নিতে। নদীর পারে সূর্যাস্ত দেখতে। চোখ-কান খোলা রাখলে শালের বনে ও আশপাশে দেখা মিলতে পারে জার্ডন’স নাইটজ়ার, জঙ্গল আউলেট, ইন্ডিয়ান পিট্টার মতো পাখির।

কী ভাবে যাবেন?

কলকাতা থেকে কোলাঘাট-ডেবরা হয়ে মেদিনীপুর শহর পৌঁছতে হবে। সেখান থেকে ধেড়ুয়াগামী রাস্তা ধরে গোপগর পার হয়ে খানিক এগোলেই গুড়গুড়িপালের জঙ্গল।

বংকুলুং

পাহাড় থাকলেও, জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়ে না। ঘুরে নিন বংকুলুং। ছবি:সংগৃহীত।

শিলিগুড়ি থেকে শালের জঙ্গল পার হয়ে পথ গিয়েছে পাহাড়ে। সেই পথ ধরেই পৌঁছনো যায় বংকুলুংয়ে। বালাসন ও মুরমা নদী বয়ে গিয়েছে কোলাহল বর্জিত ছোট্ট গ্রামটির উপর দিয়ে। চারদিক ঘন সবুজ। প্রকৃতি যেন উদারহস্ত। গ্রামের ছোট ছোট বাড়িতে রঙিন ফুলের সম্ভার। বংকুলুঙের আনাচকানাচে রয়েছে দারচিনির ক্ষেত।

শিলিগুড়ি থেকে মিরিক যাওয়ার পথে পড়ে বংকুলুং । শিলিগুড়ি থেকে জায়গাটির দূরত্ব ৪৮ কিলোমিটার। মিরিক থেকে ১৬ কিলোমিটার মতো। বংকুলুঙের উচ্চতা খুব বেশি নয়। সেই কারণে শীতই এখানে ঘোরার ভাল সময়। বংকুলুংয়ের রাস্তায় হাঁটলে চোখে পড়বে ঘন সবুজের মধ্যে মুরমা নদীর জলধারা। আর রয়েছে বালাসন। এখান থেকে ঘুরে নিতে পারেন গ্যামন সেতু। দু’পাশে পাহাড়, নীচ দিয়ে বয়ে গিয়েছে পাহাড়ি নদী। স্থানীয়দের কাছে এই জায়গাটি জনপ্রিয় পিকনিক স্পট।

বুড়িখোলা

ডুয়ার্সের বুড়িখোলাও ঘুরে নিতে পারেন হাতে দিন চারেক থাকলে। ছবি:সংগৃহীত।

জয়ন্তী, বক্সা, জলদাপাড়ার বাইরে ডুয়ার্সে আবিষ্কার করার মতো অনেক ঠিকানা আছে। তেমনই কোনও জায়গায় প্রকৃতির আঙিনায় দুটো দিন কাটিয়ে আসতে পারেন।

ডামডিম-গরুবাথানের রাস্তা ধরে এগোলেই হাতছানি দেয় পাহাড়। তবে বুড়িখোলা পৌঁছতে গেলে বেঁকে যেতে হবে গরুবাথান ঢোকার আগেই ডান হাতে।

এবড়ো-খেবড়ো রাস্তার দু’পাশে জঙ্গলের শোভা। ৪-৫ কিলোমিটার ঘন জঙ্গলের পথ পেরিয়ে পৌঁছনো যায় বুড়িখোলায়। এই পথেই সাক্ষাৎ হবে বুড়ি নদীর সঙ্গে। স্থানীয় ভাষায় নদীকে বলা হয় ‘খোলা’। তা থেকেই নাম বুড়িখোলা। নদী পার হলেই এসে পড়ে বুড়িখোলা গ্রাম। শাকামের জঙ্গল, চাপড়ামারি, জলদাপাড়া-সহ যে কোনও জঙ্গলই ঘুরতে পারবেন। আর জঙ্গলে না যেতে চাইলে পাপড়ক্ষেতি, মইরুনগাঁও, লাভা বেড়িয়ে আসতে পারেন।

কী ভাবে যাবেন?

নিউজলপাইগুড়ি থেকে গাড়ি বুক করে নিন। শালুগাড়া, সেবক হয়ে ওদলাবাড়ি-ডামডিম হয়ে রাস্তা গিয়েছে। ডামডিম-গরুবাথানের রাস্তা ধরে এগোতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement