Serampore Day Trip

খ্রিস্ট আর কৃষ্ট পাশাপাশি থাকেন শ্রীরামপুরে! উৎসবের মরসুমে ঘুরে নিন ইতিহাসের দালানকোঠায়

এ শহরে মাহেশের রথযাত্রা বিখ্যাত। আবার ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে আলোর মালায় সেজে ওঠা শ্রীরামপুরকে দেখলে পার্কস্ট্রিটের থেকে কোনও অংশে কম মনে হবে না।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:২৩
Share:

বর্ষশেষের সপ্তাহে ঘুরে আসুন ফ্রেডরিকনগর! গ্রাফিক— আনন্দবাজার ডট কম।

খ্রিস্ট এবং কৃষ্টে তফাত নেই— গানে বলেছিলেন কবিয়াল অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি। সে কথা পদে পদে মনে হবে শ্রীরামপুরে এলে। এ শহর তার ‘কৃষ্ট’ জগন্নাথদেবকে নিয়ে যতটা মাতে, ততটাই মাতোয়ারা হয় খ্রিস্টের উৎসব বড়দিনে। এ শহরে মাহেশের রথযাত্রা বিখ্যাত। আবার ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে আলোর মালায় সেজে ওঠা শ্রীরামপুরকে দেখলে পার্কস্ট্রিটের থেকে কোনও অংশে কম মনে হবে না। বরং ওই আলোমাখা শহরটার পরতে পরতে প্রাচীন ইতিহাসের দালানকোঠায় হেঁটে বেড়াতে আরও বেশি ভাল লাগবে।

Advertisement

আলোর মালায় সেজে ওঠা শ্রীরামপুর কোর্ট চত্বর। পিছনে দেখা যাচ্ছে সেন্ট ওলাভট’স চার্চ। — নিজস্ব চিত্র।

এক কালে ড্যানিশ রাজত্বের অধীনস্থ উপনিবেশ ছিল শ্রীরামপুর। ডেনমার্কের রাজার তৈরি ড্যানিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্রও ছিল শ্রীরামপুর। রাজা ষষ্ঠ ফ্রেডরিক-এর নামে শহরের নাম হয়েছিল ফ্রেডরিক নগর। খুব অল্প সময়েই শহরটি ইউরোপীয় স্থাপত্যে সেজে ওঠে। আবার তার পাশাপাশি স্বমহিমায় বিরাজ করতে থাকে এ শহরের প্রাচীন বৈষ্ণব সংস্কৃতিও। শীতের এক সকালে শ্রীরামপুর ওরফে এক কালের ফ্রেডরিক নগরে এসে পৌঁছলে গল্প আর ইতিহাস জানতে জানতেই কেটে যাবে গোটা একটা দিন।

মাহেশের জগন্নাথ মন্দির

Advertisement

ছবি: ইন্ডিয়ান ভ্যাগাবন্ড।

শ্রীরামপুরের খ্যাতি যে মাহেশের রথযাত্রার জন্য এ মন্দির সেই রথের নাথের। ইনি শ্রীরামপুরের কৃষ্টশ্রেষ্ঠ। রথের সময় তাঁকে নিয়ে উৎসবে মাতে গোটা শহর। ছড়ানো মন্দির চত্বর। দালান-উঠোন পেরিয়ে তাঁর মন্দির। বিগ্রহটি জগন্নাথের চেনা বিগ্রহের মতো নয়। প্রায় সাড়ে ছ’শো বছরের পুরনো এই বিগ্রহের হাসিটি আলাদা। মন্দিরের বাইরেই রাস্তার উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকে রথ। পুরীর রথযাত্রার পরে মাহেশের রথযাত্রার উৎসবকেই সবচেয়ে পুরনো বলে মনে করা হয়।

রাধাবল্লভ জিউ মন্দির

ছবি: সংগৃহীত।

জগন্নাথ মন্দির থেকে কয়েক মিনিটের দূরত্বে রাধাবল্লভের মন্দির। আটচালার ধাঁচে তৈরি সুউচ্চ এই মন্দিরটির ইতিহাস প্রায় সাড়ে চারশো বছরের পুরনো। বিগ্রহটিও দেখার মতো। কষ্টি পাথরের মূর্তিতে নিখুঁত চোখ-মুখ-হাসি। রাধাবল্লভ সুপুরুষ। তিনি সাজতে ভালবাসেন। তাই নিয়মিত তাঁর অঙ্গরাগ হয়। নিয়ম করে সাজানো হয় নতুন নতুন জামায়। গয়নাগাটি তো আছেই। তার সঙ্গে মণিবন্ধে ঘড়িও বাঁধেন। মন্দির চত্বরটি খোলামেলা, ছড়ানো। মন্দির ঘিরে দালান। বিগ্রহের নিত্যসেবা হয় ভোগও দেওয়া হয় রোজ দু’বেলা। এখানে ভোগ খাওয়ার ইচ্ছে থাকলে মন্দিরের নম্বরে ফোন করে আগে থেকে কথা বলে রাখলে এঁরা ভোগের ব্যবস্থা রাখবেন।

মদনমোহনের মন্দির

— নিজস্ব চিত্র।

শ্রীরামপুর যখন ড্যানিশ উপনিবেশ এই মন্দিরের বিগ্রহ সেই সময়কার। একটি হাসপাতাল তৈরি করতে গিয়ে জঙ্গল থেকে মদনমোহনের বিগ্রহ উদ্ধার করেছিলেন ড্যানিশ সরকারের কর্মীরা। পরে তাঁদেরই অর্থানুকূল্যে ওই বিগ্রহের পুজোপাঠ শুরু করেন ড্যানিশ সরকারের কর্মচারী এক হিন্দু ব্রাহ্মণ। পরে ডেনমার্কের সরকার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে শ্রীরামপুরের ভার তুলে দেওয়ার পরে মদনমোহনের মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। মন্দিরটি তৈরির আংশিক অর্থ এসেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকেও। দক্ষিণমুখী আটচালা শৈলীর মন্দিরটি গঙ্গা তীরে অবস্থিত। নিয়মিত পুজো হলেও মন্দিরচত্বরটি ফাঁকাই পড়ে থাকে অধিকাংশ সময়। তবে এখানে এলে মন্দির চত্বর ও তার উঠোনে ঘোরাফেরা করে কিছুটা সময় কাটাতে খারাপ লাগবে না।

রাম-সীতার মন্দির

ছবি: ইন্ডিয়ান ভ্যাগাবন্ড।

যাঁর নামে শহরের নাম এটি সেই শ্রীরামের মন্দির। ১৭৫৩ সালে ওই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শেওড়াফুলির রাজা। রামসীতার ওই মন্দির সে কালে জনপ্রিয়ও হয়েছিল। তবে তার বছর কয়েক পরেই সেখানে উপনিবেশ গড়ে ডেনমা্র্কের মানুষজন। তারা শ্রীরামপুরের নাম দেয় ফ্রেডরিকনগর। শ্রীরামপুর ১৭৫৫ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ১৮৪৫ পর্যন্ত সে নামেই পরিচিত ছিল। তার পরে তার নতুন নামকরণ হয় শ্রীরামপুর, যা কিনা সীতারামপুর থেকে এসেছে বলে মনে করেন ইতিহাসচর্চাকারীদের একাংশ। আর এই মন্দির সেই সীতা-রামের বিগ্রহের, যা এখন পড়ে থাকে অবহেলায়।

হেনরি মার্টিনস প্যাগোডা

ছবি: ইন্ডিয়ান ভ্যাগাবন্ড।

নাম সাহেবি হলেও এ প্যাগোডা খাঁটি বাংলার আটচালার মন্দিরের ধাঁচের। কারণ এটি আগে মন্দিরই ছিল। রাধাবল্লভের মন্দির। এখন তিনি যে মন্দিরে পূজিত হন সেটি নতুন। তার আগে গঙ্গা তীরের ওই আটচালার মন্দিরে পুজো হত তাঁর। কিন্তু গঙ্গার পাড় ভাঙার কারণে মন্দির নষ্ট হয়ে যাবে ভেবে সেটিকে সরিয়ে আনা হয়। তৈরি হয় নতুন মন্দিরটি। পরে ড্যানিশ সরকারের এ শহরের শাসক হিসাবে এলে পরিত্যক্ত মন্দির কিনে নেন রেভ ডেভিড ব্রাউন। পরবর্তী কালে সেখানে এসে থাকতে শুরু করেন হেনরি মার্টিন। মন্দিরটিকে তিনি খ্রিস্টানদের প্রার্থনাঘর চ্যাপেলে পরিণত করেন। কৃষ্টের আরাধনাস্থল পরিণত হয় খ্রিস্টের প্রার্থনাক্ষেত্রে। তার পর থেকেই ওই স্থানের নাম হয় হেনরি মার্টিনস প্যাগোডা। সম্প্রতি ওই প্যাগোডা কিছুটা সংস্কার করা হয়েছে। শ্রীরামপুরে কৃষ্ট-খ্রিস্টের মিলনস্থল চাক্ষুস করতে হলে এই জায়গাটিতে আসতে হয়।

ইম্যাকুলেট কনসেপশন চার্চ

—নিজস্ব চিত্র।

বয়স ২৬১ বছর। তবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সময় কামড় বসাতে পারেনি এর দেওয়ালে। একটু অন্য ধরনের স্থাপত্যের এই চার্চটি বড়দিনের সপ্তাহে সেজে ওঠে আলোর মালায়। ছোট প্রার্থনাঘর বা চ্যারেল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই চার্চ পরে আয়তনে আরও বাড়ে। ড্যানিশ সরকারের আমলে এই চার্চ প্রতিষ্ঠা করা হয় চন্দননগর থেকে আসা পর্তুগিজ়দের জন্য। এই চার্চের বিশেষত্ব হল এটি মেরির অপাপবিদ্ধতায় বিশ্বাসী। এ গির্জায় ‘আওয়ার লেডি অফ হ্যাপি ভয়েজ়’-এর একটি মূর্তিও রয়েছে, যা দেখতে খ্রিস্টান পুণ্যার্থীরা প্রতি বছর ভিড় জমান এখানে।

ড্যানিশ গভর্নমেন্ট হাউস

ছবি: ইন্ডিয়ান ভ্যাগাবন্ড।

বর্তমানে শ্রীরামপুরের কোর্ট হাউস তবে এককালে এটি ছিল ড্যানিশ সরকারের সরকারি কার্যালয়। বড় বড় খিলান, স্তম্ভ এবং ড্যানিশ স্থাপত্যের চিহ্ন এর পরতে পরতে। এক ঝলক দেখলে মনে হবে ইউরোপে চলে এসেছেন। ড্যানিশ স্থাপত্যের এই বিশেষত্বের জন্যই সম্ভবত বিশপ হেবার শ্রীরামপুরে এসে বলেছিলেন, শহরটি কলকাতার চেয়ে বেশি ইউরোপীয়। এখন এই ভবনটির এক দিকে মিউজ়িয়াম। যেখানে গেলে শ্রীরামপুর সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়। অন্য দিকে রয়েছে ড্যানিশ সরকারি কার্যালয়ের পুরনো ক্যান্টিন। যেখানে বর্তমানেও একটি রেস্তরাঁ রয়েছে। তবে তাতে নিয়মিত নজর থাকে ডেনমার্কের প্রতিনিধিদের। এই চত্বরে বেড়াতে এলে মিউজ়িয়াম দেখে ওই ক্যান্টিনের রেস্তরাঁতে চা-কফি খাওয়া যেতে পারে।

সেন্ট ওলাভস চার্চ

ছবি: সংগৃহীত।

কোর্ট হাউস থেকে দু’পা এগোলেই শ্রীরামপুরের সেন্ট ওলাভ চার্চ। ডেনমার্কের রাজা সপ্তম ক্রিশ্চিয়ানের রাজপ্রতীক সম্বলিত এই চার্চ ইউনেস্কো এশিয়া প্যাসিফিক হেরিটেজ পুরস্কার পেয়েছে ২০১৬ সালে। খানিকটা লন্ডনের সেন্ট মার্টিন ইন দ্য ফিল্ড গির্জার আদলে তৈরি এই চার্চটি ঘুরে দেখতে ভালই লাগবে।

ডেনমার্ক ট্র্যাভার্ন

ছবি: সংগৃহীত।

চার্চ থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে গঙ্গা তীরের সরাইখানা। ডেনমার্ক সরকারের শাসনে শ্রীরামপুরে যখন রমরমিয়ে বাণিজ্য চলছে, তখন এই সরাইখানা তৈরি হয়। সে কালে নদীপথেই যাতায়াত করতেন বাংলায় আসা সাহেবসুবো এবং সম্ভ্রান্ত বংশীয়রা। ক্যালকাটা গেজ়েটে তাঁদের জন্য ডেনমার্ক ট্রাভার্নের বিজ্ঞাপনও বেরোয়। তাতে লেখা ছিল, “ যাঁরা এই নদীপথে যাতায়াত করেন, তাঁরা এখানে প্রাতরাশ, মধ্যাহ্নভোজ, রাতের খাবার এবং আশ্রয় পাবেন। সঙ্গে সিঙ্গল ডজনে লিকার, একটি উত্তম বিলিয়ার্ড টেবিল এবং দৈনিক পত্রিকা-সহ কফিঘরও থাকবে।” সেই সরাইখানায় আজও বিলিয়ার্ড টেবিল আছে। রয়েছে কফিঘর, প্রাতরাশ, মধ্যাহ্নভোজ, নৈশাহারের বন্দোবস্ত। এমনকি, থাকার জায়গাও আছে। সঙ্গে উপরি পাওনা প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো ড্যানিশ স্থাপত্যের সরাইখানায় দাঁড়িয়ে ইতিহাসকে অনুভব করা।

রাজবাড়ি

ছবি: ইন্ডিয়ান ভ্যাগাবন্ড।

ট্রাভার্ন থেকে খুব বেশি দূরে নয় শ্রীরামপুরের রাজবাড়ি। এখানে বাংলা সিনেমা ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এর শুটিং হয়েছিল। দুশো বছরেরও বেশি পুরনো এই রাজবাড়ির স্থাপত্য দেখার মতো। তবে ভিতরে ঢুকে খুব বেশি দেখার উপায় নেই। রাজবাড়ির একটি অংশে চলে স্কুল, একটি অংশ ভাড়া দেওয়া হয় বিয়েবাড়ি ও নানা অনুষ্ঠানের জন্য। আর একটি অংশে রয়েছে একটি সরকারি দফতর। বাকি অংশে এখনও পরিবারের সদস্যরা বাস করেন। দুর্গা পুজোর সময় ঠাকুরদালান চত্বরটি খোলা থাকে। সকালে পৌঁছলে সেটুকু অংশ দেখে নেওয়া যেতে পরে।

এছাড়া যা যা দেখা যেতে পারে

ছবি: সংগৃহীত।

শ্রীরামপুরে আরও অনেক কিছু আছে দেখার মতো একদিনে সবটুকু দেখতে চাইলে সময়ে কুলোবে না। যেমন শ্রীরামপুর কলেজ। যা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন উইলিয়াম কেরি। তিনি, জোশুয়া মার্শমান এবং স্থানীয় পন্ডিত পঞ্চানন কর্মকার শ্রীরামপুরে বাংলা ছাপাখানা তৈরি করেন। সেখান থেকে প্রকাশিত হয় প্রথম বাংলা সংবাদপত্র ‘সমাচার দর্পণ’। এটি ভারতীয় ভাষায় প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্রও। বাইবেলের বাংলা সংস্করণও প্রকাশিত হয় ওই ছাপাখানা থেকে। সেই ছাপার যন্ত্র এবং ইতিহাস জড়িত অনেক কিছুই দেখা যাবে শ্রীরামপুর কলেজ এবং তার ক্যাম্পাসে থাকা কেরি লাইব্রেরিতে এলে। এছাড়া কলেজের পাশেই রয়েছে ব্যাপটিস্ট চার্চ, যেখানে প্রথম এসে বসবাস করেছিলেন কেরি, মার্শম্যান, উইলিয়াম ওয়ার্ডের মতো মিশনারিরা। রয়েছে মিশন সেমেট্রিও। সেখানে কেরি, মার্শম্যান, ওয়ার্ডের সমাধিও দেখে নেওয়া যায়। তবে সেটি কলেজচত্বর থেকে খানিক দূরে। তার কাছে রয়েছে ড্যানিশ সেমেট্রি, আর দেখে নেওয়া যেতে পারে শ্রীরামপুরের কিছু সম্ভ্রান্ত বনেদিবাড়িও। যেমন দে বাড়ি, শীলবাড়ি, ইউনিক লজ, বোসবাড়ি, বিবেকানন্দ নিধি।

খাবেন কোথায়?

শ্রীরামপুরে খাওয়ার জায়গার কমতি নেই। কলকাতার বহু নামী রেস্তরাঁর শাখা রয়েছে এ শহরে। তবে শ্রীরামপুরে এলে মহেশচন্দ্র দত্তের ছানার মুড়কি খেয়ে দেখতে পারেন। টাটকা ছানা আর হালকা মিষ্টি স্বাদ খেলে মুখে লেগে থাকবে। এ ছা়ড়া ডেনমার্ক ট্র্যাভার্নে ক্যাফে এবং রেস্তরাঁ দুই-ই আছে। ড্যানিশ গভর্নমেন্ট হাউজ়ের পুরনো ক্যান্টিনের রেস্তরাঁটির পরিবেশও ভাল। ট্রাভার্নের ঠিক পিছন দিকে রয়েছে চাইনিজ় বেশ কিছু রেস্তরাঁও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement