কনকনে ঠাণ্ডায় পাইনের ভিড়ে

পাহাড় এত টানে যে প্রতি বছরই লোটকম্বল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। এ বছরও তাই সপরিবার বেরিয়ে পড়লাম হিমাচলের উদ্দেশে। পথে অমৃতসর ছুঁয়ে যাব—এই ইচ্ছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৪৩
Share:

পাহাড় এত টানে যে প্রতি বছরই লোটকম্বল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। এ বছরও তাই সপরিবার বেরিয়ে পড়লাম হিমাচলের উদ্দেশে। পথে অমৃতসর ছুঁয়ে যাব—এই ইচ্ছে। কলকাতা স্টেশন থেকে অকালতখত এক্সপ্রেসে চেপে পর দিন বিকালে পৌঁছলাম অমৃতসরে। দীর্ঘ ৩৬ ঘণ্টা ট্রেন যাত্রাতে ক্লান্ত হয়ে সে দিন হোটেলেই কাটালাম। পর দিন সকালে গেলাম স্বর্ণমন্দিরে। মন্দিরে ঢোকার আগে ‘আলু কা পরাঠা’ দিয়ে জলযোগটা সারলাম। তারপর স্বর্ণমন্দির দর্শন। এই মন্দিরের একটা বিশেষত্ব খুব ভাল লাগল। উচ্চ-নীচ, ধনী-দরিদ্র সব সমান।

Advertisement

মন্দির থেকে বেরিয়ে সামনে দু’পা হেঁটেই ‘জালিয়ানওয়ালাবাগ’। ব্রিটিশ রাজের চরম নৃশংসতার নিদর্শন এই স্থান। তখনকার সেই ভয়ঙ্কর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সিদ্ধান্তের কথা মনে করে বাঙালি হিসেবে খুব গর্ব হচ্ছিল ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে। মধ্যাহ্ন ভোজ ‘ব্রাদার্স ধাবা’য় সেরে অটো চেপে চললাম ওয়াগা সীমান্তে বিএসএফ-এর প্যারেড দেখতে। ইন্দো-পাক দুই দেশের সীমান্ত বাহিনী এখানে প্যারেডে যোগ দেয়। জাতীয়তাবোধের আগুন বুকের জ্বালিয়ে সন্ধেয় ফিরে এলাম।

পর দিন ভোরে বাস ধরে পাঠানকোট, সেখান থেকে একটা ছোট গাড়ি রিজার্ভ করে প্রায় ৯০ কিমি দূরে শৈলশহর ডালহৌসির গাঁধি চকে পৌঁছলাম। তখন প্রায় তিনটে বেজে গিয়েছে।

Advertisement

দীর্ঘ পথ যাত্রার ক্লান্তি এড়াতে এবং হিমেল হাওয়া থেকে নিজেদের চাঙা করতে উষ্ণ কফিতে চুমুক দিতে দিতে পড়ন্ত বেলায় দু’চোখ জুড়ে ধৌলাধারের সৌন্দর্য দেখতে লাগলাম। কফি শপের মালিকের সঙ্গে আলাপ জমিয়ে তারই গাড়ি ভাড়া করে নিলাম পর দিনের সাইট সিনের জন্য। সকালে সেই গাড়ি আমাদের নিয়ে চলল ভারতের সুইজারল্যান্ড খাজিয়ারের উদ্দেশে। পথে যেতে যেতে কালাটপ দেখে নিলাম। পাইন দেবদারুর ঘন বনরাজির বুক চিরে কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে দিয়ে পৌঁছালাম স্বপ্নের উপত্যকা খাজিয়াতে। যে দিকে দু’ চোখ যায় সে দিকেই সবুজ আর সবুজ। অনুভব করলাম কেন প্রকৃতি প্রেমীরা এই জায়গার নাম দিয়েছে সুইজারল্যান্ড। বেশ কিছুক্ষণ সেখানে কাটিয়ে মন না চাইলেও ফিরতে হল। পায়ে হেঁটে পাহাড় না ঘুরলে পাহাড়ে ঘোরার মজা পাওয়া যায় না। তাই পরদিন পায়ে হেঁটে পাঁচপুলা, সুভাষ চক, দু’টি গির্জা এবং সুভাষচন্দ্রের নামাঙ্কিত সুভাষ বাওলি দেখে নিলাম।

পর দিন ডালহৌসির থেকে প্রায় ১২০ কিমি দূরে আপার ধরমশালার ম্যাকলয়েড গঞ্জে যখন পৌঁছলাম তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল। তাই সে দিন ভাগসু নাগের মন্দির, জলপ্রপাত, দলাই লামার মনেস্ট্রি দেখে ম্যাকলয়েড গঞ্জের ম্যালেই বসে সময় কাটালাম। পর দিন অটো রিজার্ভ করে প্রথমে ইংরেজ আমলে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ধরমশালা চার্চ, তার পর একে একে ডাললেক (শ্রীনগর নয়) নাদ্দি এবং লোয়ার ধরমশালায় কাংড়া মিউজিয়াম, ইন্দো-চিন যুদ্ধের ‘ওয়ার মেমোরিয়াল’, টি গার্ডেন এবং সব শেষে পাহাড়ের কোলে বি‌শ্বের অন্যতম সুন্দর ক্রিকেট স্টেডিয়াম, একজন ক্রিকেট-প্রেমী হয়ে সেই সময় চলাকালীন রঞ্জি ম্যাচের কয়েক ওভার দেখার সুযোগও হাতছাড়া করলাম না। সারা বছর মনকে ভাল রাখার রসদ নিয়ে এবং আসছে বছর অন্য কোথাও এই ভেবে বাড়ির পথে পা বাড়ালাম।

কী করে যাবেন: কলকাতা শিয়ালদহ এবং হাওড়া স্টেশন থেকে বেশ কয়েকটা ট্রেন অমৃতসর যায়।

কখন যাবেন: বর্ষার সময় বাদ দিয়ে।

কোথায় থাকবেন: প্রচুর হোটেল আছে, তবে শীতে ডালহৌসিতে তুষারপাত হয়। সে ক্ষেত্রে হোটেল ভাড়া একটু বেশি হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন