Bankura Travel During Spring

পলাশে রঙিন বাঁকুড়া, পাহাড় না জঙ্গল, কোন জায়গা রাখবেন বেড়ানোর তালিকায়?

বসন্তের ছোঁয়া লাগলেই বছরভর আর পাঁচটা গাছের মধ্যে মিশে থাকা শিমূল-পলাশ রূপ বদলায়। শাখা-প্রশাখা উপচে পড়ে এক অদ্ভুত উজ্জ্বল লাল, হলুদ ফুল। প্রকৃতির ‘আগুন’ রূপের সাক্ষী হওয়ার এই তো মোক্ষম সময়। চলুন তবে বাঁকুড়ায়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৫ ১০:০৮
Share:

বসন্ত এসে জাগ্রত দ্বারে। ফুটেছে পলাশ। সেই রূপের সাক্ষী হতে বেরিয়ে পড়ার এটাই সময়। ছবি: সংগৃহীত।

বর্ষা তাকে সজীব করে। তবে রূপ দেয় বসন্ত। বছরভর রাস্তার দু’পাশে, কখনও আবার শাল, পিয়ালের মাঝে ধুলো মাখা শরীরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে গাছগুলি বদলে যায় বসন্তের ছোঁয়ায়। শাখা-প্রশাখা উপচে জেগে ওঠে উজ্জ্বল লাল, হলুদ ফুল। পলাশ। এই নামেই তার পরিচিতি।

Advertisement

সেই রূপে মোহিত হয়ে কবিতা, গান কত কিছুই না লিখে গিয়েছেন রবি ঠাকুর। পলাশের সেই ‘রাঙা হাসি’ তো আর বছরভর মেলে না। প্রকৃতির ‘আগুন’ রূপের সাক্ষী হওয়ার এই তো মোক্ষম সময়।

শুধু পলাশের টানেই বেরিয়ে পড়তে চান? তা হলে চলুন বাঁকুড়ায়। জঙ্গল, পাহাড়— যেখানেই যাবেন, চোখে পড়বে পলাশের আগুন-রূপ।

Advertisement

সুতানের জঙ্গল: বাঁকুড়ার রানিবাঁধ থেকে ঝিলিমিলি যাওয়ার পথে রয়েছে বারো মাইলের জঙ্গল। এই জায়গা আবার সুতানের জঙ্গল নামেও পরিচিত। এই এলাকাতেই রয়েছে সুতান গ্রাম। বারো মাইল জঙ্গলের এক দিকে ঝাড়গ্রামের কাঁকড়াঝোড় ও বেলপাহাড়ির জঙ্গল এবং অন্য দিকে পুরুলিয়ার কুইলাপালের জঙ্গল। জঙ্গলের রূপ উপভোগ্য হয়ে ওঠে দুই মরসুমে। বর্ষা আর বসন্ত। শাল, সেগুনের জঙ্গল বর্ষায় হয়ে ওঠে ঘন সবুজ। আর বসন্তে রঙিন হয়ে ওঠে জঙ্গলে মিশে থাকা পলাশ। অন্য মরসুমে তাদের আলাদা করে চেনা যায় না বটে, তবে শাখা-প্রশাখা ফুলে ভরলে বদলে যায় জঙ্গলের রূপ। কলকাতা থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় পৌঁছোনো যায় সেখানে। বেলপাহাড়ি, রানিবাঁধ, যে কোনও জায়গা থেকে এই জঙ্গল ঘুরে নিতে পারেন। বিষ্ণুপুরে থেকেও এক দিনে ঘুরে নেওয়া যায় সুতানের জঙ্গল।

বৃন্দাবনপুর: বাঁকুড়ার বড়জোড়া ব্লকের বৃন্দাবনপুর ইদানীং উৎসাহী পর্যটকদের দৌলতে জায়গা করে নিচ্ছে পর্যটন মানচিত্রে। জঙ্গলঘেরা গ্রামে পর্যটকদের জন্য তৈরি হয়েছে একটি পরিবেশবান্ধব আস্তানাও। দেখার জায়গা বলতে শুধুই প্রকৃতি। শাল, সেগুনের বন। তবে বসন্তে এ জঙ্গলের রূপও বদলায় পলাশ ফুটলে। কাছেই রয়েছে সোনামুখি-পাথরা নজরমিনার। সেখান থেকে দূরদূরান্ত পর্যন্ত জঙ্গলের রূপ উপভোগ করা যায়। এ ছাড়া দেখে নিতে পারেন বিষ্ণপুর দুর্গের ভগ্নাবশেষ। গাড়ি নিয়ে ঘুরে আসা যায় মদনমোহন মন্দির, গড় দরওয়াজা, রাসমঞ্চ।

বিহারীনাথ: বাঁকুড়ার সবচেয়ে উঁচু পাহাড় বিহারীনাথ। উচ্চতা ১৪৫০ ফুট। পূর্বঘাট পর্বতমালার অংশ এটি। তীর্থ হিসাবে বিহারীনাথ ধামের গুরুত্ব যথেষ্ট। এখানেই রয়েছে বিহারীনাথ মন্দির। পূজিত হন শিব। পাহাড়ের গায়ে ফুটন্ত পলাশের চোখজুড়ানো রূপ উপভোগে বেরিয়ে পড়ুন এই বেলা। ঠা-ঠা রোদে পাহাড় চড়তে একটু কষ্ট হবে বটে। তবে সেখান থেকে অশোক, পলাশের সৌন্দর্য সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য হয়ে উঠবে। বাঁকুড়া শহর থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে শালতোড়া গ্রাম। সেখান থেকেই যেতেই হয় বিহারীনাথ।

শুশুনিয়া: বাঁকুড়ার দ্বিতীয় উচ্চতম পাহাড় শুশুনিয়া। এই শুশুনিয়া পাহাড় যে শুধু পর্যটনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা নয়। জীববৈচিত্রের দিক থেকেও এই পাহাড়ের গুরুত্ব অপরিসীম। হাজার হাজার প্রজাতির গাছ, লতা ছাড়াও অসংখ্য সরীসৃপ, বিভিন্ন প্রাণীর বসবাস এখানে। শুশুনিয়া পাহাড়ের উত্তর ঢালে পাথরের গায়ে খোদিত রয়েছে লিপিমালা। লিপিটি খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে খোদিত। সেখান থেকেই রাজা চন্দ্রবর্মার নাম পাওয়া যায়। পাহাড়ের মাথায় রয়েছে নরসিমা মন্দির। বসন্তের ছোঁয়ায় বদলে যায় শুশুনিয়াও। পাহাড়ের বুকে ইতিউতি গজিয়ে থাকা পলাশের গাছ ভরে ওঠে ফুলে।

বেলিয়াতোড় জঙ্গল: কলকাতা থেকে ঘণ্টা পাঁচ-ছয়েকের পথ। বাঁকুড়া শহর থেকে দূরত্ব ২০ কিলোমিটারের মতো। বেলিয়াতোড় একটি শহর। তবে এখানে রয়েছে ঘন জঙ্গলও। বসন্তে যদি বেলিয়াতোড়, সোনামুখির জঙ্গলপথের যাত্রী হন, তবে নজরে পড়বে পলাশ। বেলিয়াতোড়ে থাকার জন্য অতিথি নিবাস রয়েছে। সেখানে রাত্রিযাপন করেও বসন্তের প্রকৃতি উপভোগ করতে পারেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement