একটু নিরালার খোঁজে চলুন যমুনাসুল। ছবি: সংগৃহীত।
দুর্গাপুজো এল বলে। বৃষ্টি থেমে নীল আকাশে উঁকি দিচ্ছে পেঁজা তুলোট মেঘ। রাস্তার পাশে মাথা দোলাচ্ছে কাশের দল। হু-হু করে দিন এগোচ্ছে, আর এখনও বেড়ানোর ঠিকানা বাছাই হয়নি?
পুজো আর বেড়ানো দুই-ই উপভোগ করতে চান অনেকে। পুজোর ছুটির দু’টি দিন তোলা থাকে কলকাতায় ঠাকুর দেখা, আড্ডা, খাওয়াদাওয়ার জন্য। তার পর যে ২-৩টি দিন হাতে আছে, তাতে খুব দূরে নয়, অথচ নিরালায় ঘুরে আসতে চান?
বড় হোটেল, নামী রেস্তরাঁ আর ভীষণ আরামের দাবি না থাকলে বরং ঘুরে আসতে পারেন এক অন্য রকম সাগর সৈকতে। জায়গাটির নাম যমুনাসুল।দিঘা-পুরীতে যেমন হইহই ব্যপার আছে, এখানে তেমন নেই। এমনকি বড় বড় ঢেউ সাগরতটে আছড়েও পড়ে না। তবু এখানে আছে এমন কিছু, যার প্রেমে পড়তে পারেন কেউ কেউ।
আছে সুদীর্ঘ বালুতট জুড়ে মাথা উঁচু করে থাকা ঝাউবন, আছে ইতিউতি ছড়িয়ে থাকা শঙ্খ-ঝিনুক, আর আছে লাল কাঁকড়ার দল। বাইক নিয়ে সৈকতে দাপিয়ে বেড়ানোর সংস্কৃতি এখনও এখানে তৈরি হয়নি বলে দিব্যি নির্ভয়ে চড়ে বেড়ায় তারা। আর আছে অকৃত্রিম প্রকৃতি। বিকেলে সুয্যি যখন পাটে যায়, নিরালা সৈকত তখন মায়াময় আলো বিছিয়ে দেয়। জোয়ার এলে একলা পড়ে থাকা নৌকাগুলি ঢেউয়ের ধাক্কায় দুলে ওঠে।
এ এক এমন জায়গা যেখান প্রিয় মানুষটির সঙ্গে একলা হওয়া যায়, কিংবা বন্ধুদের দলে গিটার নিয়ে গান ধরা যায়।
কাসাফল সৈকতটিও কম সুন্দর নয়। ছবি: সংগৃহীত।
টি
ভোরের দিকে, সৈকতে দেখতে পাবেন জেলেদের ব্যস্ততা। জাল ফেলে কত রকম মাছ ধরছে তারা। সামুদ্রিক ইলিশ থেকে নানা রকম মাছ পড়ে তাতে। প্রাতরাশ সেরে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়েও পড়তে পারেন। খানিক দূর গেলে পড়বে চাউলটি নামে এক জায়গা। বিস্তীর্ণ জায়গায় সাগরের অন্য রূপ। জায়গাটি খানিকটা মোহনার মতো। এক দিকে রয়েছে চাউলটি নদী। কাছেই মাছ-বাজার। সৈকতের একপাশে উঁচু বালির উপরে রয়েছে ঝাউবন। সৈকতে নানা রকম পাখির আনাগোনা দেখেই মন ভরে যাবে।
এই রাস্তাতে আরও কিছুটা গাড়ি নিয়ে এগোলে পৌঁছে যাবেন কাসাফল। ঝাউবনের মধ্যে হাঁটাপথ। পুজোর সময় সেই পথে সঙ্গ দেবে কাশফুল। ঝাউবন পার করলেই কোথা থেকে যেন সামনে এসে পড়বে সমুদ্র। যমুনাসুল, কাসাফল— প্রতিটি সৈকতই নিরালা। উৎসুক পর্যটকেরা আসেন বটে, তবে তেমন ভিড় কখনও থাকে না। আসলে এই স্থান এখনও রয়ে গিয়েছে অনেকেরই জানাশোনা বা পছন্দের পরিধির বাইরে।
কী ভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে যমুনাসুলের দূরত্ব ২২৫ কিলোমিটার। টানা গেলে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। কলকাতা থেকে ধরতে হবে বাগনানের রাস্তা। কোলাঘাট হয়ে রাস্তা এগিয়েছে। খাওয়ার জন্য বিরতি চাইলে কোলাঘাটই ভাল। তার পর এগিয়ে চলুন বেলদা হয়ে দাঁতনের দিকে। দাঁতনের মনোহরপুরে রয়েছে রাজবাড়ি। যদিও একেবারেই ভগ্নদশা। তবু মনে হলে এক বার সেই জায়গা ঘুরে নেওয়া যায়। সেখান থেকে জলেশ্বর, বালিয়াপাল হয়ে যমুনাসুল।
কোথায় থাকবেন?
থাকার জন্য এখানে হাতেগোনা কয়েকটি হোটেল। এসি, নন এসি ঘরের পাশাপাশি, তাঁবুতেও থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। খাবার থাকার জায়গাতেই মিলবে। সাধারণ ঘরোয়া খাবার। তবে টাটকা মাছের অভাব হবে না।