Travel

পাখি দেখার আরও কিছু সেরা ঠিকানা

তারা আসে ঝাঁকে ঝাঁকে হাজার হাজার মাইল পেরিয়ে। কেউ সুদূর সাইবেরিয়ার আমুর, কেউ তিব্বত, মঙ্গোলিয়া, কেউ আবার ইউরোপ থেকে। ভারতে আসে মাত্র কয়েক মাসের জন্য। পরিযায়ী পাখি দেখার হরেক ঠিকানার সন্ধান জেনে নিন। আজ দ্বিতীয় তথা শেষ পর্ব।মেঘ, কুয়াশা আর চলকে পড়া রোদ্দুরমাখা পাহাড়ি এই জনপদে লাফিং থ্রাশ, ফুলভেট্টা, হানি বাজারড, স্টেপি ঈগল, স্কারলেট মিনিভেট-সহ নানান পাখির দেখা মিলবে।

Advertisement

শান্তনু চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৯:২৮
Share:

গ্রে উইঙ্গড ব্ল্যাকবার্ড।

প্রিয় পদমচেন

Advertisement

পূর্ব সিকিমের প্যাঙ্গোলাখা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির অন্দরমহলে এক অল্পচেনা নিস্বর্গ। পাইন, ধুপির নিবিড় বনানী। স্কুল, সেনা আবাস আর খানকয়েক ঘরবাড়ি। হিমেল বাতাস আর শৃঙ্গরাজদের দেখা মিলবে। শুধু কি তাই? হিমালয়ের নামজাদা পাখি দেখার সেরা ঠিকানা, পদমচেন। মেঘ, কুয়াশা আর চলকে পড়া রোদ্দুরমাখা পাহাড়ি এই জনপদে লাফিং থ্রাশ, ফুলভেট্টা, হানি বাজারড, স্টেপি ঈগল, স্কারলেট মিনিভেট-সহ নানান পাখির দেখা মিলবে।

কী ভাবে যাবেন

Advertisement

এনজেপি থেকে পদমচেনের দূরত্ব ১৩৪ কিমি। মাঝে রংলি থেকে ইনারলাইন পারমিট করতে হয়। রংলি থেকে পদমচেনের দূরত্ব মাত্র ১৪ কিমি।

কোথায় থাকবেন

এখানে থাকার জন্য রয়েছে সোনম ইন (৮৯৬১৯২৪৩৪৬), ভাড়া ১,২০০-১,৫০০ টাকা। আইসল্যান্ড হোমস্টে (৮৪২০১০০৮৩৮) থাকাখাওয়া সমেত জনপ্রতি ১১৫০ টাকা।

স্টেপি ঈগল।

আরও পড়ুন: পাখি দেখার সেরা ঠিকানার সুলুকসন্ধান​

কেয়াবাত নলসরোবর

গুজরাতে বেশ কিছু মরু ন্যাশনাল পার্ক রয়েছে। রুখাশুখা জমিতে জলাভুমি। তাদের মধ্যে নল সরোবর ন্যাশনাল বার্ড স্যাংচুয়ারি অন্যতম। শহর আমদাবাদ থেকে ৬১ কিমি দূরে ১১,৫০০ হেক্টর জুড়ে পাখিদের ইন্দ্রকানন। বিশাল জলাজমিতে ছোট ছোট ৩৬০টি দ্বীপভূমিতে প্রায় ২০০ প্রজাতির পরিযায়ী অস্থায়ী আস্তানা বানায়। সাড়ে তিন হাজার কিমি অতিক্রম করে ইউরোপ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে লেসার ফ্লেমিঙ্গো, হেরন, পেলিক্যান, সারস এসে হাজির হয়। হ্রদের জলে বোটিংও করা যায়।

কী ভাবে যাবেন

আমদাবাদ থেকে ৬১ কিমি। বাস অথবা গাড়িতে চলে আসতে পারেন। গাড়িভাড়া পড়বে ৩,০০০-৩,২০০ টাকা।

কোথায় থাকবেন

থাকার জন্য রয়েছে সুন্দর বনবাংলো (০৭৯-৬৪৪৫৭৭০) ভাড়া ১,৮০০-২,২০০ টাকা।

নলসরোবরে দেখা মিলবে সারসের।

দশাডা

অল্পচেনা বার্ড স্যাংচুয়ারিদের মধ্য অন্যতম। গুজরাতের কচ্ছের নাম কে না জানেন ? আর ছোটা কচ্ছের প্রবেশপথ, দশাডা। আর এখানেই পাখিদের অবাধ আনাগোনা। ১৫০ প্রজাতির পাখিদের দেখা মেলে। এখানে জমাজলের জলাভূমি। আর এই জলাভূমিতে ফ্লেমিঙ্গো, প্যালিক্যান, রিভার টার্ন, আইবিশ, ঈগল, হ্যারিয়ার, ফ্যালকন দের দেখা মেলে। পাখি চেনাবার জন্য রয়েছে গাইড। তিনিই চিনিয়ে দেবেন পাখীদের নানান ঠেক । কোন পাখি কখন? কোথায় থাকে তা গাইডের মুখস্থ।

কী ভাবে যাবেন

আমদাবাদ থেকে দশাডার দূরত্ব ৯০ কিমি। আমদাবাদ থেকে ভেরামগ্রাম রেলস্টেশনে নেমে ৩০ কিমি গেলেই দশাডা। আমদাবাদ থেকে গাড়িতেও চলে আসা যায়।

পাখি চিনতে সঙ্গে নিতে পারেন গাইড।

নিঝুম রিকিসুম

চারদিক নিঝুম। পাহাড়ের গায়ে পাইন আর ধুপি ধরা দেবে এক ফ্রেমে। জমাট রহস্যমোড়া কুয়াশার আস্ফালন। মাঝে মাঝে কুয়াশা হানা দেয় পাহাড়ের গায়ে সেঁটে থাকা বাক্সবাড়ির অন্দরমহলে। মিঠে রোদের ঝলক পড়তেই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে অল্পচেনা এই পাহাড়ি গ্রাম রিকিসুম। ৬,৩০০ ফুট উচ্চতায় এই নিঝুমপুরে পাইন আর ধুপির প্রায় ২ কিমি জঙ্গলপথে পাখিদের গান শুনতে শুনতে চলে আসুন বাংলোয়। এ পথে অজস্র পাখি। এখান থেকে সূর্যোদয় দেখার দৃশ্য অসাধারণ।

কী ভাবে যাবেন

কলকাতা থেকে বিমানে বা ট্রেনে এনজেপি থেকে গাড়িতে কালিম্পং-আলগাড়া হয়ে রিকিসুম আসতে হয়। দূরত্ব ৮৮ কিমি।

কোথায় থাকবেন

এখানে থাকার জন্য রয়েছে স্বর্ণশিখর হোমস্টে (৯৯৩২৩১৭২৯৯) ভাড়া জনপ্রতি জন্য ১,৩৫০ টাকা। ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার সমেত

এই কাঠঠোকরার মাথার অংশ ধূসর রঙের।

আরও পড়ুন: ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের প্রতীক রয়্যাল কোট অব আর্মস এ শহরে!​

সুরেলা সৌরিণী

পাখিদের ঝগড়া, হইচই শুনতে হলে অবশ্যই আসতে হবে এক অল্পচেনা ঠিকানায়। মিরিক থেকে মাত্র ৬ কিমি। ছবির মতো সাজান এ পথে চোখে পড়বে নানান চা-বাগানের। চলে আসুন সৌরিণী। নীল আকাশের নীচে সুউচ্চ টিলার মাঝে সবুজ মখমলি চা-বাগানের ঢেউ। সৌরিণী মোড় থেকে বাঁ দিকে ঢুকে পড়লাম। রাস্তাটা গোল চক্কর কেটে অনেকটা নীচে নেমে গিয়েছে। ডাইনে উঁচু টিলায়,চা বাগান। বামে গোলাকৃতি ঢালে মাথা চাড়া দিয়েছে দু’টি পাতা, একটি কুঁড়ির এক সাজানো ভ্যালি।

সৌরিণী চা-বাগান দেখে নিন। রয়েছে এক সুন্দর হোমস্টে। লাগোয়া দু’একর জমিতে নানান রাসায়ানিক সারমুক্ত ফসল। আলু, শিম, বাঁধাকপি, স্কোয়াশ, টোম্যাটো-সহ হরেক মরসুমি ফল। অরগানিক ফার্ম, তাই প্রচুর পাখিও আসে। বার্ডওয়াচারদের স্বর্গ বললেও ভুল হবে না। কালেজ ফ্লেজ্যান্ট, গ্রে ট্রি পাই, রুফ্রারস সিভিয়া, হরেক পাখি।

সৌরিণী চা-বাগানে।

কোথায় থাকবেন

সৌরিণীতে থাকার জন্য রয়েছে রাজ্যেশ্বরী হোমস্টে (০৯৯৩২৩১৭২৯৯) ভাড়া ১২০০ টাকা।

অদেখা নাথুয়াখান

পক্ষীপ্রেমীদের এক্কেবারে নতুন ঠিকানা। কুমায়ুন হিমালয়ের কোলে এক অখ্যাত গ্রাম। এক অল্পচেনা নিসর্গের নাম, নাথুয়াখান। পাহাড়ের গায়ে থোকায় থোকায় লাল, গোলাপি গুরাসের ফুটে থাকা, আপাতনির্জন, পাহাড়ের ঢালে বাক্সবাড়ি। উপরি পাওনা আপেল, অ্যাপ্রিকট, চেরি সমেত নানান ওষধি গাছগাছালির সম্ভার। গাছের ডালে পাখিদের আনাগোনা। প্রায় ১২০ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। বার্ডওয়াচারদের আরও এক নতুন ঠিকানা।

আছে বব’স প্লেস। উঁচু-নিচু টিলার ধাপে ধাপে সুন্দর বাংলো/কটেজ। দূরে অচিন গ্রাম, পাহাড়, হিমশিখরের হাতছানি আর পাখিদের কিচিরমিচির। পাখিদের ডাকে ঘুম ভাঙে। লনে আপেল, অ্যাপ্রিকট আর নানান ফুলের বাহার। নিরালা নাথুয়াখানে অন্তত দু’দিন পাখিদের সঙ্গে কাটিয়ে দেওয়া যায়।

পক্ষীপ্রেমীদের নতুন ঠিকানা নাথুয়াখানে।

আরও পড়ুন: অপার নিস্তব্ধতায় মোড়া ভালবাসার চারখোল​

কী ভাবে যাবেন

হাওড়া থেকে ট্রেনে কাঠগোদাম। সেখান গাড়িতে মুক্তেশ্বর থেকে প্রায় ১৪ কিমি দূরে। ভাটেলিয়া-কারুয়াচর-তারিমাগাঁও হয়ে চলে আসতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

এখানে থাকার একমাত্র ঠিকানা বব’স প্লেস। ভাড়া ৫০০০-৭০০০ টাকা। যোগাযোগ: ০৭২৯১০১৫০৫৫

ছবি: সিদ্ধার্থ দে ।

(লেখক পরিচিতি: ক্লাস নাইনে পড়াকালীন পাড়াতুতো মামার সঙ্গে মাত্র ৭০০ টাকা পকেটে নিয়ে সান্দাকফু ট্রেক। সুযোগ পেলেই প্রিয় পাহাড়ে পালিয়ে যাওয়া। কুয়াশামাখা খরস্রোতা নদী কিংবা চলমান জীবনছবিতে ক্লিক, ক্লিক। লাদাখে গর্তে সেঁধিয়ে যাওয়া মারমটের ছবি তুলতে ভিজে মাটিতে সটান শুয়ে অপেক্ষায় থাকা— এই নিয়েই ক্যামেরা আর কলম সঙ্গী করে ২৪টা বছর। প্রকৃতির টানে ছুটে বেড়ানো থামেনি।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন