Budget Travel Tips

ইচ্ছা আছে কিন্তু পকেটে টান! কম খরচেও রাজস্থান ঘোরা যায়, দরকার শুধু সঠিক পরিকল্পনা

রাজস্থান ঘুরতে খরচ নেহাত কম নয়। সে কারণেই সাধপূরণ করতে পারছেন না? পকেট বাঁচিয়ে ঘুরতে চাইলে কোন কৌশল সাহায্য করবে?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:৪২
Share:

কম খরচেও মরুরাজ্য ঘোরা যাবে। কী ভাবে সফর সাজাবেন? ছবি: সংগৃহীত।

মুকুলের ‘সোনার কেল্লা’ দেখার সাধ আপনারও? জটায়ুর মতো উটে চড়ার শখ! সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’ সিনেমাটির কথা আজও জয়সলমেরের দুর্গে শোনা যায় গাইডদের মুখে মুখে। শোনা যায় মুকুলের নাম।

Advertisement

রাজস্থান। বললেই মানসপটে ভেসে ওঠে মরুভূমি, দুর্গ, বিশাল প্রাকার, সিস মহল, রঙচঙে পাগড়ি, সোনালিরঙা পাথরের থালা-বাটি। এ রাজ্যের অলিতে-গলিতে ইতিহাস। রাজপুত শাসনকালের সাক্ষ্য বহন করে এ রাজ্যের নানা স্থানে দাঁড়িয়ে রয়েছে দুর্গ, হাওয়ামহল। শুধু প্রকৃতি নয়, রাজস্থানের খাবার, সংস্কৃতির আকর্ষণও কিছু কম নয়।

মনে মনে সেই রাজস্থানকে চাক্ষুষ করার স্বপ্ন দেখেছেন। কিন্তু বাদ সেজেছে খরচ! কী ভাবে সাধ্যের মধ্যে সাধপূরণ সম্ভব?

Advertisement

পরিকল্পনা এবং দিন

এক সপ্তাহের সফরে লাখ টাকাও যেমন খরচ করা যায়, ১৫-২০ হাজারেও রাজস্থান ঘোরা সম্ভব। পুরোটাই নির্ভর করছে পরিকল্পনার উপর। রাজস্থানের দেখার জায়গা অনেক। এক বারে সবটা দেখা সম্ভব নয়। তাই মোটামুটি সপ্তাহ খানেক বা ১০ দিনের জন্য সফর সাজিয়ে নিন। যত দিন বাড়বে, খরচও বাড়বে। তবে এক সপ্তাহে এখানকার ২-৩টি জায়গা ঘুরে নেওয়া যাবে ঠিক ভাবেই।

জয়সেলমেরের দুর্গ। সোনালি পাথর দিয়ে তৈরি। ছবি: সংগৃহীত।

পরিবহণ: কলকাতা থেকে রাজস্থান যেতে হলে কম খরচ এবং আরামদায়ক মাধ্যম অবশ্যই ট্রেন। সড়কপথ বা বিমান— দুই ভাবে গেলেই খরচ অনেক বেশি হবে। ট্রেনে যাতায়াতে দিন ৩-৪ সময় লাগলেও খরচ বাঁচানো সম্ভব।

রাজস্থানের কোথায় ট্রেনে করে পৌঁছচ্ছেন, তার উপর নির্ভর করে বাকি পরিকল্পনা সাজাতে হবে। ট্রেনে গেলে জয়পুর বা জোধপুরে নেমে ঘোরাই ভাল। জয়সলমের-সহ রাজস্থানের অনেক গন্তব্যই রেলপথে যুক্ত। সড়কপথও মসৃণ। খরচ বাঁচাতে চাইলে জয়পুর থেকে জোধপুর, অজমের শরীর, জয়সলমের ট্রেনে যেতে পারেন। জয়পুর থেকে সন্ধ্যা এবং রাতে একাধিক ট্রেন আছে, যেগুলি জয়সলমের পৌঁছবে পরের দিন সকালে। বিভিন্ন শহরের মধ্যে বাস পরিষেবাও রয়েছে। ট্রেন এবং বাসে তুলনামূলক কম খরচে এক শহর থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া যায়।

থাকা: বেড়াতে গিয়ে থাকার জন্যও অনেক টাকা খরচ হয়। রাজস্থানে একাধিক হাভেলি (রাজস্থানি শৈলীতে তৈরি অট্টালিকা), দুর্গকে কেন্দ্র করে একাধিক হোটেল রয়েছে। সেগুলি খরচসাপেক্ষ। তাই পকেট বাঁচিয়ে ঘুরতে চাইলে খুঁজতে হবে সস্তার হোটেল। খরচ বাঁচাতে চাইলে হস্টেলে থাকতে পারেন। পর্যটকদের জন্য একাধিক হস্টেল রয়েছে সেখানে। রাজস্থানে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করলে বাজেটের মধ্যে হোটেলও পাওয়া যায়। ইদানীং থাকার জন্য হোম স্টে-ও পাওয়া যাচ্ছে।

কোথায় যাবেন?

রাজস্থান কী ভাবে তুলনামূলক কম খরচে ঘুরবেন? ছবি: সংগৃহীত।

একটু ভাল করে ঘুরতে গেলে, রাজস্থানের খাবার, সংস্কৃতি, মানুষজনকে জানতে হলে এক একটি শহরে অন্তত ২-৩ দিন কাটানো দরকার। একটি সফরে রাজস্থানের নানা প্রান্ত না ঘুরে ২-৩টি বড় জায়গা বেছে নিন। যে জায়গাগুলিতে থেকে আশপাশ ঘোরা যায়।

ঘোরার খরচ: দুই-তিন জিন বেড়াতে গেলে দিনভর গাড়ি বুকিং না করে স্থানীয় পরিবহণের উপর ভরসা করতে পারেন। সাইট সিইং-এ কোনটির পর কোন জায়গা কী ভাবে যাবেন, আগে থেকে জেনে নিন। গুগলের সাহায্যে তথ্য, দূরত্ব জানা এখন সহজ হয়ে গিয়েছে। অটো করে কিংবা অ্যাপ ক্যাব ডেকে এক জায়গা থেকে অন্যত্র গেলে খরচ বাঁচানো যেতে পারে।আবার এক শহরে কাছাকাছি সাইট সিইং থাকলে গাড়ি বুক করলে কত টাকা পড়ছে, সেটা দেখে নিন। তার পর সুবিধামতো সিদ্ধান্ত নিন।

স্থানীয় খাবার: স্থানীয় লোকজন কোথা থেকে খাবার খান, কেনাকাটা করেন, জেনে নিন। সাধারণত, স্থানীয় লোকজন নিয়মিত যে সব জায়গা থেকে খা্ন, সেখানকার খাবারের স্বাদ এবং মান ভাল হওয়ার কথা। রাজস্থানের নিজস্ব খাবার খান। এতে যেমন ভিন্ন স্বাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়, তেমন পকেটেও চাপ পড়ে না। যে কোনও জায়গায় গিয়ে ভিন্‌ রাজ্যের খাবার চাইলে খরচ বেশি পড়তে পারে।

খরচ বাঁচানোর অন্যান্য কৌশল

· রাজস্থানে প্রতিটি দুর্গে প্রবেশের মূল্য রয়েছে। গাইডের খরচ রয়েছে। এগুলি বাদ দেওয়া যায় না। তবে ক্যামেরা, ভিডিয়োগ্রাফির জন্যও বেশিরভাগ দুর্গে টিকিট থাকে। সে ক্ষেত্রে সকলে ক্যামেরা নিয়ে না ঢুকে এক বা দু’জন ক্যামেরা রাখতে পারেন। এতেও খরচ খানিক কমানো যাবে।

· সঙ্গে শুকনো খাবার রাখুন। ছাতু, কেক, মুড়ির মতো খাবার খিদের সময় কাজে আসবে, টুকটাক খরচ বাঁচাবে।

· এমন ফ্ল্যাট বা বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়, যেখানে রান্নার সরঞ্জাম থাকে। এ রকম জায়গা ভাড়া নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দিনে বা রাতে প্রয়োজন মতো পছন্দের খাবার রান্না করে নিতে পারবেন।

· পুজো, শীত, ক্রিসমাস— যে সময়গুলিতে রাজস্থানে ভিড় বেশি, সেই সময়টা এড়িয়ে যেতে পারেন। পর্যটকের ভিড় থাকলে হোটেল, গাড়ির খরচও বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা বেশি দর হাঁকেন।

· এক শহর থেকে অন্য জেলার অন্য শহরে যাওয়ার জন্য রাতের বাস সার্ভিস বা ট্রেন বেছে নিতে পারেন। এতে হোটেল খরচ একটু হলেও কমানো যেতে পারে। সকালে হোটেল ছেড়ে দিয়ে বেড়াতে বেরিয়ে যান। সন্ধ্যায় ট্রেন বা বাসে চড়ে পরের গন্তব্যে পাড়ি দিন।

· বেড়ানোর দল করে নিতে পারলে খরচ অনেকটাই কমে যেতে পারে। বেশি বড় দল না করে ১০, ১২ অথবা ১৪ জনের দল করতে পারেন, যাতে একটি গাড়িতে ধরে যায়। সে ক্ষেত্রে ঘোরার গাড়ি ভাড়ার খরচ কমে যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement