উত্তরবঙ্গের এক অচিনপুর তুরুক। ছবি: সংগৃহীত।
শীত পড়তেই যেন পাহাড়ের জন্য মনকেমন করে! শীতের ছুটিতে উত্তরবঙ্গ যাবেন ঠিক করে ফেলেছেন। এনজেপি-র টিকিটও কাটা। কিন্তু যাবেনটা কোথায়? ভিড়ের থেকে দূরে মেঘ-পাহাড়ে হারিয়ে যাওয়ার মতো ঠিকানার খোঁজ করছেন? যদি প্রকৃতির নির্জনতায় কয়েকটি দিন ঘোরা, বিশ্রাম করা বেড়ানোর লক্ষ্য হয়, তবে বেছে নিতে পারেন উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি গ্রাম তুরুক।
তুরুক উত্তরবঙ্গের আরও এক অচিনপুর। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর প্রায় ৪৮০০ ফুট উচ্চতার ছবির মতো আঁকা এক পাহাড়ি গ্রাম। পাহাড়ের কোলে যেন এক নির্জন প্রকৃতির আবাস। কার্শিয়াং সাবডিভিশনের অন্তর্গত মিডল সিটং-এর অন্তর্গত এই এলাকাটি। পাহাড়ের ধাপে ধাপে অর্গানিক চাষের বাহার। বাঁধাকপি, ফুলকপি, রাইশাক, মুলো, আলু আর মরসুমি কমলালেবুর বাহারে মন ভরিয়ে দেবে। ধুপির জঙ্গলের কোলে বসানো ছবির মতো সাজানো গোছানো গ্রাম তুরুক। নাম না জানা রঙিন পাহাড়ি ফুল থোকায় থোকায় ফুটে আছে। ইচ্ছে হলেই নীচের সিটং থেকে ঘুরে আসতে পারেন। ঘুরে আসতে পারেন লেপচা ফল্স, চার্চ আর রিয়াং নদীর ধার থেকে। এখান থেকেই ঘুরে আসতে পারেন মংপু-র রবীন্দ্র ভবন থেকে। এখানে এক সুন্দর গোছানো বাংলো চোখে পড়বে।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর শেষ জীবনের কিছু বছর কাটিয়েছিলেন মংপু-র এই বাংলোতে। তাঁর ৮০ তম জন্মদিনে এখান থেকে ‘জন্মদিন’ কবিতাটি লেখেন কবি। পাহাড়ের কোলে এই বাংলোর চারপাশ ঘুরে দেখলে বাঙালির মনে এক আলাদাই নস্টালজিয়া কাজ করে।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই চোখে পড়বে কাঞ্চনজঙ্ঘার ঝলক। সবুজ ঘেরা আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথের বাঁকে বাঁকে অপার নির্জনতা ভেঙে দেয় পাখিদের কোলাহল। লেপচাদের বাড়ির আদলে গড়ে উঠেছে এখানকার হোমস্টেগুলি। দূরে মহানন্দা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির অরণ্যের সবুজ হাতছানি। ইচ্ছে হলেই ছোট্ট ট্রেকে অথবা গাড়ি নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন বাগোরা, চিমনি। ট্রেকরুটে নিবিড় অরণ্য আর তার বৃক্ষবৈচিত্র মুগ্ধ করবে। পাইন, ফার, ওকের ছায়ামাখা ৭,১০০ ফুট উচ্চতায় বাগোরার আকাশ পরিষ্কার থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘা-র দেখা মেলে। তুরুক থেকে বাগোরার দূরত্ব ১০ কিমি।
তুরুকে সবুজ ঘেরা আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথের বাঁকে বাঁকে অপার নির্জনতা ভেঙে দেয় পাখিদের কোলাহল। ছবি: সংগৃহীত।
বাগোরার থেকে চিমনির দূরত্ব ৩ কিমি। ৭,২০০ ফুট উচ্চতায় আরও এক সুন্দর পাহাড়ি গ্রাম। এক সময় প্রচুর বরফ পড়ত, তাই ব্রিটিশ শাসকরা তাঁদের সৈনিকদের জন্য জল গরম করতে এই বিশাল চিমনি তৈরি করেছিলেন। আর তার থেকেই গ্রামের নাম হয় চিমনি। কাছেই রয়েছে সুন্দর ভিউপয়েন্ট। এখান থেকে দূরের কার্শিয়াং আর কাঞ্চনজঙ্ঘার মনভোলানো রূপ হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
এ পথে বাড়তি পাওনা হিসেবে কালেজ, জাঙ্গল ফাউল ছাড়াও হরিণ, হিমালয়ান স্লথ বিয়ারেরও দেখা মিলতে পারে। তবে গাইডের সঙ্গ ছাড়া এমন অ্যাডভেঞ্চার না করাই ভাল।
কী ভাবে যাবেন:
এনজেপি বা শিলিগুড়ি থেকে মংপু হয়ে সিটং ছাড়িয়ে তুরুকের দূরত্ব ৬৮ কিমি। গাড়িতে চলে আসতে পারেন। গাড়িতে যেতে সময় লাগবে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা।
কোথায় থাকবেন:
তুরুক এবং তার আশেপাশে থাকার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি হোমস্টে। সেখানে থাকা খাওয়া নিয়ে খরচ পড়বে মাথাপিছু দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা।