pujo

পুজো-পুজো গন্ধ মেখে আর এক ভ্রমণ

কুক-কাম-কেয়ারটেকার জনি ফার্নান্ডেজের হাতের গ্রিলড-চিংড়ি মুখে তুলতে গিয়ে কোনও গিন্নির হয়তো মনে পড়ে গেল— ইস! আজ তো অষ্টমী! লিখছেন রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়আবার যাঁরা কর্পোরেটে কাজ করেন, তাঁরা পুজো ছাড়া টানা ছুটি তো তেমন পানই না। তাই পুজোর সময় একই সঙ্গে হাওয়া ও মনবদলের জন্যে তাঁরা বছরভর হা-পিত্যেশ করে বসে থাকেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১৭:৫৬
Share:

ছবি: দেবাশীষ দেব।

পুজোর সময় সাত-আটটা দিন কলকাতার বেশির ভাগ জায়গাই রংবেরঙের মানুষে ভরে ওঠে। রাস্তাঘাট, মাঠময়দান, হোটেল-রেস্তোরাঁ— সব জায়গাতেই গিসগিস করে মানুষ। বাড়ির সামনে বড় পুজো হলে তো আর দেখতে হবে না! নিজের পাড়ায় পা-রাখার জন্য বাঁশের ব্যারিকেডের মধ্যে দিয়ে ঘামতে ঘামতে লাইন দিতে হবে। নিজের বাড়িতে ঢোকার জন্যে দেখাতে হবে গেটপাস। শরতের সন্ধে-জুড়ে পাড়ার চেনা ছাতিমগাছটার গা-থেকে যে মায়াবী গন্ধ ছড়িয়ে পড়ত, তা কোথায় যেন উড়ে গিয়ে সারা এলাকা জুড়ে ভক-ভক করে ভেসে বেড়াবে শালু-বাঁধা বিরিয়ানির হাঁড়ির সিন্থেটিক আতরের গন্ধ। তাই একশ্রেণির বাঙালি এখন পুজোর মাস চারেক আগে থেকেই ট্রলিব্যাগে টুকটাক জিনিস ঢোকাতে শুরু করেন। আর জিগ্যেস করলেই মুচকি হেসে বলেন, ‘পুজোর সময় কলকাতা! রক্ষে করো!’

Advertisement

আসলে, এঁদের কাছে পুজোর ছুটির ডেফিনিশনটাই একদম আলাদা। কয়েকটা বাছাই-করা পূজাবার্ষিকী, গত বইমেলায় কেনা কিছু না-ছোঁয়া বই, খোলা আকাশের নীচে শিরশিরে ঠান্ডায় নুন, মরিচ, মধু, পুদিনাপাতা-বাটা আর মাখন, পরতে পরতে মাখিয়ে, কাঠকয়লার আগুনে ঝলসানো দিশি মোরগের পুরুষ্টু দাবনার বারবিকিউ, ছোট্ট একটা ব্লু-টুথ স্পিকারে খুব নিচু ভল্যুমে একঝাঁক ভাললাগা গান, ফেলে আসা সময়ের কিছু মধুর স্মৃতি আর একটু ভাল স্কচ বা ওয়াইন— ব্যস! কলকাতায় যখন জমজমাট সপ্তমী, তখন তাঁদের কেউ হয়তো মুন্নারের কোনও অজানা রাস্তার বাঁকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা এক অচেনা হোমস্টে-র ঝিঁঝি-ডাকা বারান্দায় বসে মন দিয়ে হারমনিকা বাজাচ্ছেন কিংবা সাউথ গোয়ার কোনও নীলাভ বিচ-এ বসে, ছোট্ট ড্রইংখাতায় জলরঙে এঁকে চলেছেন কোনও ছবি। রংচঙে গেঞ্জিপরা কুক-কাম-কেয়ারটেকার জনি ফার্নান্ডেজের হাতের গ্রিলড-চিংড়ি মুখে তুলতে গিয়ে কোনও গিন্নির হয়তো ধাঁ করে মনে পড়ে গেল— ইস! আজ তো অষ্টমী!! তাই সে দিন দুপুরের জন্য তিনি স্থানীয় পদ দিয়ে সাজানো দু’খানি ভেজ-থালির অর্ডার দিলেন।

আবার যাঁরা কর্পোরেটে কাজ করেন, তাঁরা পুজো ছাড়া টানা ছুটি তো তেমন পানই না। তাই পুজোর সময় একই সঙ্গে হাওয়া ও মনবদলের জন্যে তাঁরা বছরভর হা-পিত্যেশ করে বসে থাকেন।

Advertisement

আবার কারও কাছে পুজোর ছুটি মানেই গ্রামের বাড়ির পুজো। সারা দেশ, এমনকী বিদেশেও ছড়িয়ে থাকা আত্মীয়েরা এইসময় দেশের বাড়িতে ছেলেপুলে-মেয়ে-জামাই নিয়ে ঠিক জড়ো হয়ে যান। সারাবছর বন্ধ পড়ে থাকা বিরাট বাড়িগুলোর স্যাঁতসেতে দোরদালান আর চণ্ডীমণ্ডপ যেন হঠাৎ আসা সেই মানুষগুলোর হাসি-গল্পে তরতাজা হয়ে ওঠে। ধুলো মুছে ঝাড়বাতিগুলোয় পরিয়ে দেওয়া হয় নতুন আলো। পাটভাঙা-ধুতি আর শাড়ির খসখসানির মধ্যে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে পুজো-পুজো একটা গন্ধ। হয়তো এমনও হয়, বছরের এই একটা সময়েই এক জন বোন আর এক জন বোনকে দেখতে পেলেন, আর সেই আশাতেই দিন গুনলেন সারাবছর । তাই বেড়ানোটা শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠল এক বিশাল পারিবারিক গেটটুগেদার। আর এটাও তো আজ পুজোর ভ্রমণের বাইরে নয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন