হাড়োয়ায় বোমা ফেটে মৃত্যু বালিকার

গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বল ভেবে কুড়িয়ে আনা বোমা ফেটে গেলেও বরাতজোরে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল হাড়োয়ার গোপালপুর গ্রামের সাত বছরের পৌলোমী হালদার।

Advertisement

নির্মল বসু 

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৯ ০৩:৩২
Share:

আকিলা খাতুন।

প্রায় এক বছরের ব্যবধানে একই ঘটনা। ঘটনাস্থলও একই থানা এলাকা— হাড়োয়া। কিন্তু পরিণতি এক হল না।

Advertisement

গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বল ভেবে কুড়িয়ে আনা বোমা ফেটে গেলেও বরাতজোরে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল হাড়োয়ার গোপালপুর গ্রামের সাত বছরের পৌলোমী হালদার। সে হারিয়েছে তার বাঁ হাত। কিন্তু সেই হাড়োয়ারই খাসবালান্দা পঞ্চায়েতের হলদা গ্রামের ভাঙাপাড়ার আকিলা খাতুন (১১) বাঁচল না। রবিবার বিকেলে এলাকার একটি পরিত্যক্ত ঘরে বল ভেবে খেলতে গিয়ে বোমা ফেটে মৃত্যু হল মানসিক ভারসাম্যহীন ওই বালিকার।

ঘটনার পরেই এলাকার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের দাবি, লোকসভা নির্বাচনের আগে হাড়োয়ায় রাজনৈতিক কারণে কিছু বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছিল। তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ কিছু বোমাও উদ্ধার করে। কিন্তু যে বোমা ফেটে এ দিন আকিলা মারা গেল, সেটি কোনও ভাবে পুলিশের নজর এড়িয়ে গিয়েছিল। আর আকিলার মা রোজিনা বিবির আক্ষেপ, ‘‘কোনও রকমে একবেলা খেয়ে আমাদের সংসার চলছে। কী দোষ করেছিল মেয়েটা যে দুষ্কৃতীদের রাখা বোমা ফেটে তার মৃত্যু হল!’’

Advertisement

আরজিকর হাসপাতালে তিন বার অস্ত্রোপচারের পরে প্রাণে বেঁচেছে পৌলোমী। পরে তার বাঁ হাতের জায়গায় কৃত্রিম হাত বসানো হয়। সেই কাহিনি রোজিনারা জানেন না। তিন সন্তান— ওসমান মোল্লা, রিন্টু মোল্লা এবং আকিলাকে নিয়েই দিন কাটাচ্ছিলেন রোজিনা এবং তাঁর স্বামী, পেশায় রাজমিস্ত্রি রহমত আলি মোল্লার। এ দিন বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ বাড়ির কাছে মাঠে খেল আকিলা। হঠাৎই মাঠের পাশে থাকা একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে ঢুকে পড়ে সে। সেখানেই বোমাটি পড়েছিল। সেটি বল ভেবে ছুড়তেই প্রচণ্ড শব্দে ফেটে যায়। বোমার আঘাতে গুরুতর জখম হয়ে মেয়েটি ঘরের একপাশে ছিটকে পড়ে বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।

বোমা ফাটার শব্দে স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনাস্থলে চলে আসেন। তাঁরা দেখেন, মাটিতে পড়ে ছটফট করছে আকিলা। রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা আকিলাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ জানায়, ওই ঘরে বোমাটি কী ভাবে এল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হাত হারানোর পরে পৌলোমী জনে জনে জিজ্ঞাসা করত, ‘‘দুষ্টু লোকেরা কেন যে আমার হাতটা নিয়ে নিল, বলতে পারো?’’ আকিলা কোনও প্রশ্ন করতে পারবে না। তার নিথর শরীর ময়নাতদন্তের জন্য চলে গিয়েছে বসিরহাট হাসপাতালে। তার মায়ের আকুল প্রশ্ন, ‘‘গুন্ডাদের জন্য কেন আমার মেয়েটা চলে গেল বলতে পারেন?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement