ট্রেনের সামনে ফেলে ‘খুন’, ধৃত মা-সহ দুই

পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই নিখোঁজ ছিল হাওড়ার কলাবাগান লেনের বাসিন্দা শুভম রায় (১২)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৯ ০২:২৪
Share:

শুভম রায়

চলন্ত ট্রেনের সামনে ঠেলে ফেলে দিয়ে এক কিশোরকে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করা হল তার মাকে! সেই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে মায়ের এক বন্ধুকেও। শুক্রবার ভোরে কাঁকুড়গাছিতে রেললাইনের ধার থেকে উদ্ধার করা হয় অপহৃত ওই কিশোরের ক্ষতবিক্ষত দেহ। পুলিশকর্তাদের দাবি, জেরায় খুনের অভিযোগ কবুল করেছে নিহতের মা কাকলি রায় ও তার বন্ধু রণজিৎ ভড়।

Advertisement

পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই নিখোঁজ ছিল হাওড়ার কলাবাগান লেনের বাসিন্দা শুভম রায় (১২)। সেই রাতেই হাওড়ার চ্যাটার্জিহাট থানায় নিখোঁজ-ডায়েরি দায়ের করে শুভমের পরিবার। পরে পুলিশ অপহরণের মামলা রুজু করে। তদন্তে নেমে কিছু সূত্র পাওয়ার পরে হাওড়া সিটি পুলিশ প্রথমেই রণজিৎকে আটক করে। পরে শিয়ালদহ রেল পুলিশের কাছ থেকে খবর মেলে, কাঁকুড়গাছিতে এক কিশোরের দেহ উদ্ধার হয়েছে। পরিবারের লোকজন গিয়ে সেটি শুভমের দেহ বলে শনাক্ত করেন। শুক্রবার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না-তদন্তের পরে দেহটি আত্মীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

তদন্তকারীদের দাবি, কাকলির শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অভিযোগ, ওই মহিলার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে কাঁকুড়গাছি রোডের বাসিন্দা রণজিতের। আর সেই সম্পর্কের ক্ষেত্রেই ‘পথের কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল শুভম। বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই কিশোরকে মিথ্যা কথা বলে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল রণজিৎ। এর পরে রাতে শুভমকে রেললাইনের ধারে নিয়ে গিয়ে রণজিৎ চলন্ত ট্রেনের সামনে ঠেলে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। কাকলিও এই খুনের পরিকল্পনার কথা জানত বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় পরিবারের আর কেউ জড়িত কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

Advertisement

আড়াই বছর আগে কিডনির অসুখে ভুগে কাকলির স্বামী তাপস মারা যান। তখন একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ নেয় কাকলি। সেই সময়েই বাসচালক রণজিতের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওই যুবককে কাকু বলে ডাকত অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া শুভম। মাস চারেক আগে ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই কাকলি রণজিতের সঙ্গে পালিয়েছিল বলে আত্মীয়দের অভিযোগ। শুভমের কাকা স্বপন রায় বলেন, ‘‘পালিয়ে যাওয়ার পরেই আমরা বুঝতে পারি, ওই যুবকের সঙ্গে বৌদির সম্পর্ক রয়েছে। কয়েক দিন পরেই অবশ্য বৌদি ফিরে এসে সম্পত্তির ভাগ দাবি করেন।’’

স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে শুভমকে বাড়ি থেকে বেরোতে দেখে কয়েক জন প্রতিবেশী জানতে চান, সে কোথায় যাচ্ছে? শুভম তাঁদের জানিয়েছিল, কাকলি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। রণজিতের সঙ্গে সে সেখানেই যাচ্ছে। প্রতিবেশীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, শুভম তাঁদের বলেছিল, স্কুল ছুটির পরে সে বাইরে এসে দেখে, রাস্তায় অপেক্ষা করছিল রণজিৎ। শুভমের জেঠিমা সান্ত্বনা রায় বলেন, ‘‘রাতে কাকলি বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু শুভম ফিরছে না দেখে আমরা সর্বত্র খোঁজ করতে শুরু করি। কিন্তু কোথাও পাওয়া যায়নি।’’

শুভমের কাকিমা রুমার কথায়, ‘‘ছেলে নিখোঁজ জেনেও কাকলির হেলদোল ছিল না। পরে আমাদের চাপে থানায় অভিযোগ করে।’’ তদন্তে নেমে কাকলিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে রণজিতের ঠিকানা পান তদন্তকারীরা। এ দিন ভোরে ফুলবাগান থানার সহযোগিতায় ওই যুবককে আটক করে চ্যাটার্জিহাট থানার পুলিশ। তার কথায় অসঙ্গতি মেলায় মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন পরীক্ষা করে জানা যায়, বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত সে কাঁকুড়গাছির রেললাইনের কাছেই ছিল।

এ দিন সকালে পুলিশ ওই রেললাইনের দু’পাশে তল্লাশি শুরু করে। তখনই অজ্ঞাতপরিচয় এক কিশোরের দেহ উদ্ধারের খবর জেনে তদন্তকারীরা বিধাননগর জিআরপি-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রেল পুলিশ জানায়, শুক্রবার ভোরে রেলকর্মীরা তাঁদের জানান, আপ ট্রেনের ধাক্কায় এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। তার পরেই তাঁরা দেহটি উদ্ধার করেন। দেহ শনাক্ত হওয়ার পরে এ দিন বিকেলে কাকলিকে কলাবাগানের বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করে পুলিশ।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন