নাব্যতা হারিয়েছে ভাগীরথী, ফাঁসল বার্জ

জলস্তর কমে যাওয়ায় ফরাক্কার ফিডার ক্যানালে আটকে গেল কয়লা বোঝাই ১৩টি বার্জ। ফলে কপালে ভাঁজ পড়েছে এনটিপিসি কর্তৃপক্ষের। পুটিমারি সেতু পেরিয়ে মালঞ্চা এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে আটকে রয়েছে জাহাজগুলি। প্রতিটি জাহাজে ১৫০ টন করে কয়লা রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ফরাক্কা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৬ ০১:৫০
Share:

সেই কয়লাভর্তি বার্জ। ঘোড়াইপাড়া ঘাটের কাছে। ছবি : অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

জলস্তর কমে যাওয়ায় ফরাক্কার ফিডার ক্যানালে আটকে গেল কয়লা বোঝাই ১৩টি বার্জ। ফলে কপালে ভাঁজ পড়েছে এনটিপিসি কর্তৃপক্ষের। পুটিমারি সেতু পেরিয়ে মালঞ্চা এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে আটকে রয়েছে জাহাজগুলি। প্রতিটি জাহাজে ১৫০ টন করে কয়লা রয়েছে।ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানিকৃত ওই কয়লা হলদিয়া বন্দরে খালাস হয়। তারপর জিন্দাল সংস্থা ভাগীরথীর ফিডার ক্যানেল দিয়ে তা নিয়ে আসে এনটিপিসির ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। কিন্তু নাব্যতা কমে যাওয়ায় ফিডার ক্যানালে আটকে গিয়েছে জাহাজগুলি। ফলে আপাতত কয়লার জোগান বন্ধ। আর পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ওই জলপথ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কলকাতা–এলাহাবাদের যাত্রী পরিবহন পরিষেবা। ফলে বিপাকে পড়েছেন ১ নম্বর জাতীয় জলপথ কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

জল বন্টন চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশকে জল দেওয়া হচ্ছে ৩৫ হাজার কিউসেক। ফরাক্কা ব্যারাজ সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণ ভাবে এই সময় ফরাক্কার কাছে গঙ্গায় জলপ্রবাহ থাকে ৭৪ হাজার কিউসেকের আশপাশে। বাংলাদেশকে দেওয়া হয় ৩৫ হাজার কিউসেক। বাকিটা পাঠানো হয় ফিডার ক্যানালে। ফরাক্কা ব্যারাজের জেনারেল ম্যানেজার সৌমিত্রকুমার হালদার বলেন, “ফরাক্কার গঙ্গায় জলপ্রবাহ কমে যাওয়ার ফলেই এই সমস্যার সৃস্টি হয়েছে। প্রতি বছরই এ ধরণের সমস্যা হয়। সাধারণ ভাবে মার্চের মাঝামাঝি নাগাদ বৃষ্টি হয়। ফলে জলপ্রবাহও বাড়ে। আপাতত সেই অপেক্ষায় থাকা ছাড়া কোনও উপায় নেই।”

ফরাক্কা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক শৈবাল ঘোষ জানান, ঝাড়খণ্ডের কয়লার সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার এই কয়লা আনুপাতিক হারে মিশিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করা হয়। এতে জ্বালানি কম লাগে। ছাইও কম হয়। ওই কয়লা আপাতত প্ল্যান্টে না ঢোকায় কেবল ঝাড়খন্ডের কয়লাই ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে খানিকটা সমস্যা তো হচ্ছেই। জাহাজ আটকে থাকায় কয়লা সরবরাহকারী সংস্থার খরচ বাড়ছে।

Advertisement

ফিডার ক্যানালের এই জল সঙ্কটে কপালে ভাঁজ পড়েছে ১ নম্বর জাতীয় জলপথ কর্তৃপক্ষেরও। সংস্থার এক পদস্থ কর্তা বলছেন, “ফরাক্কায় ফিডার ক্যানালে অন্তত পক্ষে আড়াই থেকে তিন মিটার গভীরতা প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রেই তা পলি পড়ে কমে দেড় মিটারে নেমে এসেছে। কোথাও বা তারও কম। প্রতি বছর প্রায় ৮০ কোটি টন পলি ফরাক্কা ব্যারাজের আশপাশে জমছে। ফরাক্কার ডিয়ার ফরেস্টের কাছে লকগেট এলাকায় মাঝেমধ্যে ড্রেজিং করা হয়। পলি পড়ছে ফিডার ক্যানালে। এর ফলেই জাহাজ আটকাচ্ছে।” ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, জাহাজ স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করতে অন্তত ৪৫ মিটার চওড়া ও ৩ মিটার গভীরতা প্রয়োজন। কিন্তু সমস্যা শুরু হয়েছে ফিডার ক্যানালের মালঞ্চা থেকেই। সেখানে গভীরতা রীতিমতো কমে গিয়েছে। অবস্থা আরও খারাপ এনটিপিসি, নিশিন্দ্রা, ঘোরাইপাড়া থেকে লকগেট হয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায়। সেখানে ফিডার ক্যানাল কাদাজলের আস্তরণে ঢাকা পড়েছে। এই অবস্থায় বর্ষার অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন