মাস্টারমশাই বসুন, চেয়ার এগিয়ে কি সেটাই বলছেন বেচারাম! ছবি: দীপঙ্কর দে।
একই মঞ্চে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এবং বেচারাম মান্না!
শুধু তাই নয়, সিঙ্গুরের বর্ষীয়ান বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবুর দিকে চেয়ার এগিয়ে দিচ্ছেন দলের ব্লক সভাপতি তথা হরিপালের বিধায়ক বেচারামবাবু!
বহুদিন বাদে রবিবার, ‘সিঙ্গুর দিবস’-এর মঞ্চে দেখা গেল এই সহাবস্থান। সিঙ্গুরের দুই ‘যুযুধান’ তৃণমূল নেতাকে একসঙ্গে দেখার পরে স্বাভাবিক ভাবেই দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে জল্পনা। তবে কি দু’জনের দ্বৈরথ মিটতে চলেছে?
রবীন্দ্রনাথবাবুর সঙ্গে বেচারামবাবুর বিরোধ সর্বজনবিদিত। বিধানসভা বা জেলা পরিষদের ভোটে প্রার্থী বাছাই করা-সহ নানা বিষয়ে দু’জনের বিরোধ বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। দীর্ঘদিন দু’জনকে এক মঞ্চে দেখা যায়নি। কোথাও একান্ত বাধ্য হলে তাঁরা যেন ঘড়ি ধরে আগে-পরে সময়টা বেঁধে নিতেন। রবীন্দ্রনাথবাবু মঞ্চ ছাড়লে বেচারামবাবুকে দেখা যেত। আবার কখনও উল্টোটা। আগের কয়েকটি ‘সিঙ্গুর দিবস’-এও দু’জনকে একসঙ্গে দেখা যায়নি। এমনকী, সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ অবৈধ বলে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেওয়ার পরে এলাকায় দুই নেতার নেতৃত্বে আলাদা ভাবে ‘বিজয়-মিছিল’ বেরিয়েছিল। গত ১৪ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন সিঙ্গুরে আসেন, তখনও দু’জনকে একসঙ্গে দেখা যায়নি।
ছবিটা পাল্টে গেল রবিবার। ২০০৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিঙ্গুরের ব্লক অফিস থেকে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মারধর করে কলকাতায় পাঠিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। পরের বছর থেকে এই দিনটিকে ‘সিঙ্গুর দিবস’ হিসাবে পালন করে তৃণমূল। এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি সুব্রত বক্সী, সহ-সভাপতি মুকুল রায়। তার মধ্যেই দেখা গেল রবীন্দ্রনাথবাবুর দিকে চেয়ার এগিয়ে দিচ্ছেন বেচারামবাবু।
দলের কোনও কোনও নেতা অবশ্য বলছেন, বাধ্যবাধকতার জায়গা থেকে দুই নেতা এক মঞ্চে এসেছেন। সেখানে দলের শীর্ষ স্তরের নেতারা রয়েছেন, সেখানে দু’জনের আকচা-আকচি অন্য বার্তা দিত। তা ছাড়া, রবীন্দ্রনাথবাবু নিজে অন্য কিছু করলে তাঁর একার ঘাড়ে সেই দায় চাপত। তাই তিনি ঝুঁকি নেননি। এ নিয়ে অবশ্য চেষ্টা করেও রবীন্দ্রনাথবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, বেচারামবাবু শুধু বলেন, ‘‘আমি অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলাম। সব কিছু দেখা আমারই দায়িত্ব ছিল। দলের সেই দায়িত্ব আমি পালন করেছি।’’
দলের কর্মী-সমর্থকেরা মনে করছেন, এই সৌজন্য বজায় থাকলে আখেরে সিঙ্গুরে দলই লাভবান হবে।