জলের তোড়ে ভেসে গেল লরি, কান্দিতে জলবন্দি ২০ হাজার

নাগাড়ে চলা বৃষ্টি থেমেছে। কিন্তু নামেনি জমা জল। বিপদ বাড়িয়ে দু’দফায় ১২ হাজার ও পরে ৭ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে তিলিপাড়া জলাধার। যার নিট ফল, নদীর জল বইছে নীচু এলাকার রাস্তার উপর দিয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কান্দি শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৫ ০০:৪৮
Share:

জলের তলায় চলে গিয়েছে রাস্তা। বড়ঞায় পারাপার এখন এ ভাবেই।

নাগাড়ে চলা বৃষ্টি থেমেছে। কিন্তু নামেনি জমা জল। বিপদ বাড়িয়ে দু’দফায় ১২ হাজার ও পরে ৭ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে তিলিপাড়া জলাধার। যার নিট ফল, নদীর জল বইছে নীচু এলাকার রাস্তার উপর দিয়ে। সদর শহর বহরমপুর-সহ পড়শি জেলাগুলি থেকে যোগাযোগও কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে কান্দির।

Advertisement

শনিবার সন্ধ্যা থেকে সালার-কান্দি রাজ্য সড়ক ও হলদিয়া-ফারাক্কা বাদশাহি সড়কের উপর দিয়ে কুঁয়ে নদীর জল বইছে। হলদিয়া-ফরাক্কা বাদশাহি সড়কের উপর দিয়ে পণ্য বোঝাই একটি ট্রাক জল ঠেলে পার হতে গিয়ে উল্টে যায়। তারপর পুলিশ হলদিয়া-ফরাক্কা বাদশাহি সড়কের উপর পুলিশ যান চলাচল নিষিদ্ধ করে। এ ফলে বীরভূম, বর্ধমান, কাটোয়া, দুর্গাপুর-সহ বিভিন্ন রুটের বাস বন্ধ হয়ে পড়ে। কান্দি-সালার রুটের বাস চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।

সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে তিলিপাড়া জলাধার থেকে জল ছাড়া হয়। নদীতে অতিরিক্ত জল এসে দু’কূল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই বহু মাটির ঘর ভেঙেছে। জলবন্দি হয়ে পড়েন বড়ঞা ও ভরতপুর-১ ব্লকের প্রায় ২০ হাজার পরিবার। পরিস্থিতি সামলাতে এলাকার স্কুলগুলিতে ত্রাণশিবির খুলেছে প্রশাসন।

Advertisement

জলবন্দি হয়ে পড়া বাসিন্দাদের উদ্ধার করে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ দিকে, বড়ঞার সুন্দরপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মামদপুর, তারাপুর, মারুট, মজিলেশপুর, সোনাভারুই, বৈদ্যনাথপুর, আনন্দনগর নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। জাওহাড়ি ও বড়ঞা দু’টি গ্রাম আগেই প্লাবিত হয়েছিল। তা ছাড়াও ভরতপুর-১ ব্লক এলাকার গড্ডা ও আলুগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় ১৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। ওই এলাকার জলবন্দি বাসিন্দাদের যাতায়তের জন্য নৌকার ব্যাবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে চাষের কাজও।

সুন্দরপুর পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের নজরুল হক বলেন, “পঞ্চায়েতের অধীন সুন্দরপুর ও কয়থা ছাড়া বাকি গ্রাম জলে ডুবে গিয়েছে। প্রায় দশ হাজার পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়েছে। বহু বাসিন্দা বাড়ি ছেড়ে স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে।” সুন্দরপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় জলবন্দি এলাকা ঘুরে দেখেন বড়ঞার বিধায়ক প্রতিমা রজক। প্রতিমাদেবী বলেন, “বৃষ্টি না থামলে আরও বড় ধরনের ক্ষতি হত। এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য ত্রাণের ব্যাপারে মহকুমাশাসকের সাথে কথা হয়েছে। নতুন করে তিলিপাড়া থেকে জল ছাড়ার কোনও খবর আমি পাইনি। জল না ছাড়লে খুব তাড়াতাড়ি মানুষ ওই অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে।”

কান্দির মহকুমাশাসক বিজিনকৃষ্ণ বলেন, “বড়ঞা ও ভরতপুর-১ ব্লকের প্রায় ২০ হাজার পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়েছে। এলাকার প্রত্যেকটা স্কুলে ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত ও খাদ্য দফতর ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলির জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘কান্দির হিজল এমনিতেই খুব নীচু এলাকা ওই এলাকায় রাস্তার উপরে জল উঠে গিয়ে মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছে।”

বিজিনবাবু বলেন, “বহু মানুষের ঘর বাড়ি ভেঙে গিয়েছে বলে খবর পেয়েছি। স্থানীয় পঞ্চায়েতকে একটি রিপোর্ট দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।” এ দিকে, জলে ভেসে আসা এক সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে লক্ষ্মী হেমব্রম (৩০) নামে হিজলের বাসিন্দা এক মহিলার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন