সুন্দরবনে ঘাট-পিছু উন্নয়নে বরাদ্দ ১০ লক্ষ

নদীমাতৃক জেলা সুন্দরবনের জলপথে পরিবহণ নিয়ে এর আগেও প্রশাসনিক বৈঠকে এসে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

সামসুল হুদা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৭ ০২:৩৮
Share:

বিপজ্জনক: সোনাখালি সেতু।—নিজস্ব চিত্র।

নদীমাতৃক জেলা সুন্দরবনের জলপথে পরিবহণ নিয়ে এর আগেও প্রশাসনিক বৈঠকে এসে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা যে স্রেফ কথার কথা নয়, শুক্রবার পৈলানের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে ফের দক্ষিণ ২৪ পরগনার জলপথ পরিবহণ নিয়ে খোঁজ-খবর করে তা প্রমাণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। নিত্যযাত্রীরা তো বটেই পর্যটকেরাও ভয়ে ভয়ে থাকেন নদীপথে ঘোরাফেরার ক্ষেত্রে।

Advertisement

ক্যানিং মহকুমার সোনাখালি, গদখালি, বাসন্তী, পাঠানখালি, চণ্ডীপুর, বালি ১, স্কুলঘাট জেটি, কচুখালির মনসামেলা জেটি, পাখিরালা, ঝড়খালি জেটিঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রায়ই ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে। কয়েক বছর আগে সোনাখালির ভাঙা জেটি থেকে নদীতে পড়ে গিয়েছিলেন এক পর্যটক। একে তো জেটি ভাঙা, তার উপরে ঘাটগুলিতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ক্যানিঙের মাতলা নদী মজে যাওয়ার পর থেকে সুন্দরবনে ঘুরতে আসা পর্যটকরা সাধারণত সোনাখালি জেটিঘাট দিয়ে সুন্দরবনে যাওয়ার জন্য লঞ্চে ওঠেন। কিন্তু ওই জেটিঘাটের অবস্থা এতটাই খারাপ, যে কোনেও মুহূর্তে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

সুন্দরবন পিউপল ওয়াটার সোসাইটির সম্পাদক দীপক দাস বলেন, ‘‘বেহাল জেটির জন্য দেশি-বিদেশি পর্যটকদের খুবই অসুবিধা হয়। প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে আবেদন করেও কোনও কাজ হচ্ছে না। সোনাখালিতে একটি ভাসমান জেটির জন্যও প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।’’

Advertisement

ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা— সমস্যা বহু জায়গায়। কোথাও নৌকো, ভুটভুটি থেকে নেমে এক হাঁটু কাদা পেরোতে হয়, কোথাও টলমলে পাটাতন ফেলা জেটি ধরে ওঠা-নামা করতে হয়। যাত্রীশেড, শৌচাগার, পানীয় জল, আলো— অভাবের তালিকাটা দীর্ঘ জেটিঘাটগুলিতে। কোন জলযানে কতজন উঠল, তা দেখারও বালাই নেই।

শুক্রবার প্রশাসনিক বৈঠকে পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই অবশ্য জানিয়েছেন, এই জেলার ৬৭টি জেটাঘাটের মানোন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যেই ১০ লক্ষ টাকা করে মোট ৬ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ঘাটে যাত্রীদের জন্য লাইফ জ্যাকেটও রাখা হবে। লাইফ বোট থাকবে। ভুটভুটিগুলির স্বাস্থ্যেরও খেয়াল রাখা হবে।

তবে বড় ঘাটগুলির মধ্যে কাকদ্বীপের লট-৮ ঘাটে অনুদানের আগেই যাত্রী শেড তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। সিসিটিভি বসানো হয়েছে, রাতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম অর্থাৎ, জোয়ার-ভাটার সময়ে ঘোষণা, ভেসেল ছাড়ার ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, কেবল বড় ঘাটই নয়, যাতে যাত্রী নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছোট ঘাটগুলিতেও নেওয়া যায়, সে জন্য তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এই তালিকায় বুড়ুল, গদখালি, ডায়মন্ড হারবার-কুকড়াহাটি, গোসাবা আছিপুর, আখড়ার মতো কিছু ঘাট রয়েছে। ইতিমধ্যেই যাত্রী বহনের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে কাকদ্বীপে ৭৭টি নৌকোয় দাগ দিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে তার বেশি যাত্রী না তোলা হয়।

সহ প্রতিবেদন: দিলীপ নস্কর ও শান্তশ্রী মজুমদার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন