ইছামতীতে ডুবল ডিঙি, মৃত ২

নদীর পাড়ে পড়েছিল ভাঙাচোরা টিনের ডিঙি। তাতে চড়েই তিন বন্ধু বেরিয়েছিল নদীর হাওয়া খেতে। খানিক দূর যাওয়ার পরে চোখে পড়ল, নৌকায় তলায় বড় বড় ফুটো। আর তা দিয়েই জল ঢুকছে হু হু করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গোপালনগর শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৬ ০১:৪৩
Share:

এখানেই সলিল সমাধি হয়েছে দুই কিশোরের। ইনসেটে, বাঁ দিকে রুদ্র। ডান দিকে জিৎ। নিজস্ব চিত্র।

নদীর পাড়ে পড়েছিল ভাঙাচোরা টিনের ডিঙি। তাতে চড়েই তিন বন্ধু বেরিয়েছিল নদীর হাওয়া খেতে। খানিক দূর যাওয়ার পরে চোখে পড়ল, নৌকায় তলায় বড় বড় ফুটো। আর তা দিয়েই জল ঢুকছে হু হু করে।

Advertisement

তড়িঘ়ড়ি দাঁড় টেনে তিনজনে ফিরতে চেয়েছিল ঘাটে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। নৌকোর খোল জলে ভরে যাওয়ায় জলে ঝাঁপ মারে তিনজন। একজন সাঁতরে পাড়ে উঠতে পারলেও ফিরতে পারেনি বাকি দু’জন। একজন তো সাঁতারই জানত না। আর একজনের সাঁতারের জ্ঞানও কোনও কাজে আসেনি। গ্রামবাসীদের অনুমান, সাঁতার না জানা ছেলেটি সাঁতার জানা বন্ধুকে আঁকড়ে ধরেছিল। তাতেই বিপদ ঘনায়।

পাড়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে লোক ডাকার চেষ্টা করেছিল তাদের সঙ্গী। ছুটে গিয়ে গ্রামবাসীদেরও খবর দেয়। কিন্তু গ্রামের মানুষ যতক্ষণে আসেন নদীর পাড়ে, ততক্ষণে তলিয়ে গিয়েছে দু’জন। আধ ঘণ্টার চেষ্টায় তাদের দেহ উদ্ধার হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা দু’জনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন।

Advertisement

রবিবার দুপুরে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে গোপালনগর থানার কানাপুকুর এলাকায় ইছামতী নদীতে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত দুই কিশোরের নাম রুদ্র বিশ্বাস (১৪)। ও জিৎ সিংহ। (১৩)। রুদ্রর বাড়ি ওই গ্রামেই। সে পড়ত স্থানীয় শ্রীপল্লি প্রিয়নাথ হাইস্কুলের নবম শ্রেণিতে। অন্যজনের বাড়ি পাশেই বরাকপুর গ্রামে। সে বরাকপুর বিভূতিভূষণ মাধ্যমিক শিক্ষাকন্দ্রের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। দেহ পাঠানো হয়েছে ময়না-তদন্তে।

গোটা ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে। সোমবার সকালে কানাপুকুরে রুদ্রর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল মা মিঠুদেবী কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। প্রতিবেশীরা শান্ত করার চেষ্টা করছেন। তাঁদেরও অনেকের চোখে জল। মিঠুদেবী বলেন, ‘‘স্নান করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। আমি খেতে ডাকলাম। শুনতে পায়নি। পরে খবর এল, নদীতে ডুবে গিয়েছে।’’ সদ্য সন্তানহারা মা বলে চলেন, ‘‘স্বপ্ন ছিল, ছেলেকে পুলিশ তৈরি করব। এ ভাবে সব শেষ হয়ে যাবে ভাবতেই পারছি না।’’ বাবা নিমাইবাবু রঙ মিস্ত্রির কাজ করেন। দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে রুদ্র বড়। নিমাইবাবু বললেন,‘‘ ছেলের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশতাম। এখন সব শেষ।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার দুপুরে তিন বন্ধু বাড়ির কাছেই একটি অষ্টপ্রহর নাম সংকীর্তনের অনুষ্ঠানে খিচুরি খেয়েছিল। তারপর নদীতে নৌকা নিয়ে হাওয়া খাওয়ার শখ হয়।

কৃষ্ণেন্দু বিশ্বাস প্রাণে বেঁচেছে। ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রের কথায়, ‘‘নৌকা যে ভাঙা ছিল, তা আমরা প্রথমে বুঝতে পারিনি। যখন বুঝলাম, ততক্ষণে নৌকায় জল উঠতে শুরু করেছে। আমি সাঁতরে পাড়ে উঠলেও ওরা পারল না।’’

পাশেই বারাকপুরে জিতের বাড়ি। সেখানে প্রতিবেশীরা ভিড় করেছেন। জিতের বাবা বিশ্বনাথ কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন। মা ইন্দ্রানীদেবী বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে আয়ার কাজ করে দুই ছেলেকে লেখাপড়া শেখাচ্ছিলেন। জিতের দাদু অক্ষয়বাবু কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। বললেন, ‘‘বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে নাতি বলে গেল, নাম সংকীর্তন অনুষ্ঠানে যাচ্ছে। আমাদেরও যেতে বলেছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে অবশ্য অন্য খবর এল।’’ গ্রামের মানুষ জানালেন, ইছামতীর যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে প্রায় পঁচিশ হাত জল। একটি বাঁশ পোতা রয়েছে। নদীর ওই জায়গা থেকে মাটি কেটে খেতে দেওয়ার জন্যেই গভীরতা বেশি। ঘটনাচক্রে সেখানে এসেই নৌকো থেকে জলে লাফ দিয়েছিল তিন কিশোর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন