চোর সন্দেহে শাবল-কোদাল দিয়ে মার, মৃত্যু

শনিবার গভীর রাতে হাবড়া থানা এলাকার মথুরাপুর গ্রামের এই ঘটনায় সোমবার গ্রেফতার করা হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা লালমিঞা মণ্ডলকে। এ দিকে, তাকে গ্রেফতার করতে গেলে আত্মীয়-স্বজনেরা পুলিশকে বাধা দেয়। পরে হাবড়ার আইসি গৌতম মিত্র যান। পুলিশ গ্রেফতার করে লালকে।  

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাবড়া শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:৩৭
Share:

তখনও বেঁচে রমজান।— নিজস্ব চিত্র।

পটল চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে শাবল, কোদাল, বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল। শরীরে জ্বলন্ত বিড়ির ছ্যাঁকা দেওয়া হয়। অত্যাচার চলে কয়েক ঘণ্টা ধরে। খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছিলেন ছেলে। তিনি হাতেপায়ে ধরে অনুরোধ করেন, বাবাকে ছেড়ে দিতে। কিন্তু কোনও কথা কানে তোলেনি কেউ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান রমজান আলি মণ্ডল (৪৯) নামে গুমার বালুইগাছির ওই ব্যক্তি।

Advertisement

শনিবার গভীর রাতে হাবড়া থানা এলাকার মথুরাপুর গ্রামের এই ঘটনায় সোমবার গ্রেফতার করা হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা লালমিঞা মণ্ডলকে। এ দিকে, তাকে গ্রেফতার করতে গেলে আত্মীয়-স্বজনেরা পুলিশকে বাধা দেয়। পরে হাবড়ার আইসি গৌতম মিত্র যান। পুলিশ গ্রেফতার করে লালকে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বালুইগাছির বাসিন্দা রমজান পেশায় রঙ মিস্ত্রি। কয়েক বছর আগে স্ত্রী তাহেরা মারা গিয়েছেন। তাঁর দুই ছেলে-মেয়ে। মেয়ে নার্গিস পারভিনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলে রিয়াজ সেলাইয়ের কাজ করেন। বাবা-ছেলে দু’জনের সংসার।

Advertisement

শনিবার দুপুরে বাড়িতে রান্না-খাওয়া সেরে বেরিয়েছিলেন রমজান। রাতের দিকে রিয়াজ খবর পান, পটল বাবাকে মারধর করছে কিছু লোক। রিয়াজ বলেন, ‘‘আমি গিয়ে শুনি, বাবা নাকি লাল ও চাঁদ— দুই ভাইয়ের খেত থেকে পটল চুরি করতে গিয়েছিলেন। দেখি, ওরা কয়েক জন মিলে বাবাকে শাবল-কোদাল দিয়ে মারছে। বিদ্যুতের খুঁটিতে মাথা থেঁতলে দিচ্ছিল। কত অনুরোধ করলাম, বাবাকে ছেড়ে দাও। ওরা কোনও কথা শুনল না।’’

আশেপাশের কিছু মহিলা-পুরুষ ঠেকাতে গিয়েছিলেন লালদের। তাঁদের পাল্টা হুমকি দিয়ে হটিয়ে দেয় দুই ভাই। পরে খবর পেয়ে হাবড়া থানার পুলিশ গিয়ে রমজানকে উদ্ধার করে। হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেখান থেকে বারাসত জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রবিবার রাতে আরজিকরে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। রিয়াজ জানান, আরজিকর থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয় বাবাকে। তবে পথেই মারা যান তিনি।

নিহতের মেয়ে নার্গিসের কথায়, ‘‘বাবাকে খেতের মধ্যে এক দফা মারধর করা হয়। পরে বাঁশের সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে এসে ফের পেটায় ওরা। হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়। বিড়ি-সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে। এমন নৃশংস অত্যচার যারা করেছে, তাদের কঠোর শাস্তি চাই।’’ পরিবারের লোকজনের দাবি, রমজান চুরি করেননি। অত রাতে তিনি কেন অন্য এলাকা গিয়েছিলেন, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

হাবড়া হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় তদন্তকারী অফিসারেরা রমজানের বয়ান নথিভুক্ত করে লাল ও চাঁদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছিল। এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘রমজান মারা যাওয়ার পরে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। চাঁদ পলাতক। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’

গত কয়েক দিন ধরে সন্দেহ এবং গুজবের জেরে কয়েক জনকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। মগরাহাটে দু’জনের মৃত্যুও হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, পিটুনির শিকার মানসিক ভারসাম্যহীন, ভবঘুরেরা। হাবড়ার ঘটনায় স্থানীয় মানুষজনের বক্তব্য, যারা চোর সন্দেহে পিটিয়ে খুন করল মানুষটাকে, তারা রমজানের মুখ চিনত না এমন নয়। রমজানের বিরুদ্ধে অতীতে কোনও চুরির কোনও অভিযোগ ওঠেনি। তা হলে স্রেফ সন্দেহের বশে কী করে এমন ভাবে মারধর করা হল, তা নিয়ে বিস্মিত অনেকেই। ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তাঁরা।

অনেকের আবার বক্তব্য, যদি কোনও দোষ করেও থাকেন রমজান, তা হলে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হল না কেন? কেন এ ভাবে আইন হাতে তুলে নিল চাঁদ-লালরা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন