কাকু, অল্পবয়সী মেয়েদের বিয়ে হচ্ছে না তো?

একগাল হাসি ফুটে উঠল অফিসারের মুখে। ‘‘আরে, এস এস’’— চেয়ার ছেড়ে উঠে অভ্যর্থনা জানালেন তিনি। কলা বিনুনি দুলিয়ে থানায় ঢুকল মেয়ের দল।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৭ ০১:০৮
Share:

নজরদারি: আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনায় মেয়েরা। —নিজস্ব চিত্র।

একগাল হাসি ফুটে উঠল অফিসারের মুখে। ‘‘আরে, এস এস’’— চেয়ার ছেড়ে উঠে অভ্যর্থনা জানালেন তিনি।

Advertisement

কলা বিনুনি দুলিয়ে থানায় ঢুকল মেয়ের দল। রিনরিনে গলায় জানতে চাইল, ‘‘কাকু, আপনার এলাকায় তো শুনি অনেক মেয়ের অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। আপনারা কি এমন শুনেছেন?’’

শুরুতেই এমন কড়া প্রশ্ন সামলাতে হবে জানতেন না অফিসার। বলার চেষ্টা করেছিলেন, ‘‘আরে আগে বসো তো, রোদ্দুর থেকে এসেছো, জল-টল খাও।’’ উত্তরে শুনতে হয়েছে, ‘‘ও সব হবে কাকু। আগে বলুন না, অল্প বয়সী মেয়েদের বিয়ে আটকাতে আপনারা কী কী করছেন?’’

Advertisement

এ বার গম্ভীর না হয়ে আর উপায় নেই অফিসারের। নথিপত্র বের করে সদ্য কিশোরীদের বোঝালেন, খবর পেলেই তাঁরা ছুটে যান। বন্ধ করেন নাবালিকা বিয়ে। এ নিয়ে নিয়মিত প্রচার চলে এলাকায়। স্কুলে শিবির হয়। পুলিশ কর্তাদের ফোন নম্বর দেওয়া আছে অনেক স্কুলের মেয়েদের কাছে। পাচার হয়ে যাওয়া ক’জন মেয়েকে সাম্প্রতিক সময়ে উদ্ধার করা হয়েছে, সে কথাও তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে জানান পুলিশ কর্মীরা।

হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতাভুক্ত ছাত্রীদের নিয়ে একটি দল তৈরি করা হয়েছে। তারাই বিভিন্ন সরকারি দফতর ঘুরে দেখে বিডিওকে রিপোর্ট দেবে। সেই রিপোর্ট জেলায় পাঠানো হবে। সরকারি দফতর থেকে মানুষ যাতে ঠিকঠাক পরিষেবা পান, সে জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘এখন থেকে বিভিন্ন সরকারি দফতরে পড়ুয়ারা যাবে। পরিষেবা নিয়ে তারা প্রশ্ন করবে। পড়ুয়াদের রিপোর্ট জেলায় পাঠানোর পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

মঙ্গলবার তিন জন করে ছাত্রী থানা, কৃষি দফতর ও হাসপাতাল পরিদর্শন করে। সেই সূত্রেই থানায় গিয়েছিল ছাত্রীরা।

পুলিশ কাকুদের দেওয়া হিসেব-নিকেশে মোটের উপর সন্তুষ্ট মেয়ের দল। কৃষি দফতরে গেলে সেখানে আধিকারিকেরা তাদের বোঝান, কোন ফসলের জন্য কতটা কী সার দিলে ভাল হয়। সেখানেও সব ঠিকঠাক, রিপোর্ট দিয়েছে পরিদর্শক মেয়েরা।

কিন্তু গোল বেধেছে হিঙ্গলগঞ্জের ন’নম্বর সান্ডেলেরবিল হাসপাতাল নিয়ে। মেয়েরা অখুশি। কারণ? অপরিষ্কার রোগীর বিছানা। নোংরা শৌচালয়। এমনকী, যাওয়ার রাস্তাটিও বেহাল। বিডিওকে দস্তুর মতো সে সব কথা লিখে জানিয়েছে মেয়েরা।

বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুদীপ মণ্ডল, প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণা মিত্র-সহ ছাত্রী এবং অভিভাবকদের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার রানিবালা গার্লস স্কুলে এক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছিল। ওই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য বিভাগের কাজকর্ম নিয়ে বিডিও-র কাছে অভিযোগ করে পূজা মণ্ডল, রিমা জোতদারেরা।

বিডিওকে ছাত্রীরা জানায়, স্কুলের পথে গাড়ি চালকেরা নির্ধারিত ভাড়ার পরিবর্তে তাদের কাছ থেকে বেশি ভাড়ার দাবি করে। না দিলে গাড়িতে তোলে না। আর তুললেও খারাপ মন্তব্য করে। বেশি ভাড়া দিতে গিয়ে ছাত্রীদের টিফিন খরচে টান পড়ে। তা ছাড়া, কিছু স্কুলে বইয়ের অভাবে লাইব্রেরি শুরু করা যাচ্ছে না। এই সমস্যার সমাধান খুব শীঘ্রই হবে বলে ছাত্রীদের আশ্বস্ত করেছেন সুদীপ্তবাবু। মেয়েরা বাকি যে সব সমস্যা চিহ্নিত করেছে, সে ব্যাপারেও নজর দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন