শোকার্ত: নিখোঁজ মৎস্যজীবী ঝন্টু বিশ্বাসের পরিবার। নিজস্ব চিত্র
জাল পেতে মাছ ধরার সময় সমুদ্রে তলিয়ে গেল একটি ট্রলার। বুধবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে গভীর সমুদ্রের কেঁদোদ্বীপের কাছে। ‘এফবি কন্যামাতা’ নামে ওই ট্রলারে ১৬ জন মৎস্যজীবী ছিলেন। তার মধ্যে ১০ জন নিখোঁজ। উদ্ধার হয়েছেন ৬ জন।
সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার তথাগত বসু বলেন, ‘‘উপকূলরক্ষী বাহিনী আকাশ পথে এবং মৎস্যজীবীদের অন্য আরও একটি ট্রলার ঘটনাস্থলে গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে।’’ তবে বেশ কিছু ট্রলার মাছ ধরার মরসুম শুরু হওয়ার আগেই মাছ ধরতে গিয়েছে বলে তিনি জানান। কাকদ্বীপ মহকুমাশাসক রাহুল নাথ বলেন, ‘‘মরসুম শুরুর আগে ট্রলারগুলি মাছ ধরতে বেরিয়েছিল। বিষয়টি মৎস্য দফতরের কাছে জানিয়েছি।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ১৫ জুন থেকে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার কথা। কিন্তু নির্দেশ অমান্য করে ১০ জুন কাকদ্বীপ বন্দর থেকে লুকিয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে বেরিয়েছিল ‘এফবি কন্যামাতা’। তা ছাড়াও আরও ১০টি ট্রলার গিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
উদ্ধার হওয়া মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, ওই দিন বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ কেঁদোদ্বীপের কাছে ইলিশের জাল পেতে মৎস্যজীবীরা ট্রলারে অপেক্ষা করছিলেন। সে সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হয়। জোরে জোরে ঢেউ এসে ট্রলারে ধাক্কা মারে। ট্রলার সোজা রাখার জন্য দাঁড় দিয়ে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন মাঝিরা। কিন্তু শেষ রক্ষে হয়নি। কিছুক্ষণের মধ্যে দাঁড়টিই ভেঙে যায়।
ওই ট্রলারে ছিলেন কাকদ্বীপের কালীনগর মাইতির চক গ্রামের মৎস্যজীবী নয়ন দাস ও শান্ত দাস। তাঁরা জানান, মাঝি ট্রলার সোজা রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে চেষ্টা চালানোর পর ট্রলার কাত হয়ে এক দিক দিয়ে হুহু করে জল ঢুকতে শুরু করে। তাঁদের কথায়, ‘‘আমরা ছিলাম উপরের শৌচালয়ের কাছে। বাকিরা ভিতরে ইঞ্জিনের পাশে বসে ছিলেন। আচমকা ট্রলারটি ডুবে যায়। আমরা কয়েকজন তেলের ড্রাম ধরে ভাসতে থাকি।’’ প্রায় ঘণ্টা দু’য়েক ভেসে থাকার পর আশেপাশে থাকা অন্য ট্রলার এসে ৬ জনকে উদ্ধার করে। রাতেই তাঁদের কাকদ্বীপে আনা হয়।
কাকদ্বীপের তিলকচন্দ্রপুরের বাসিন্দা নিখোঁজ মৎস্যজীবী ঝন্টু বিশ্বাসের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর বাবা দুলাল বিশ্বাস বলেন, ‘‘বুধবার রাতেই মৎস্যজীবী ইউনিয়নের মারফৎ দুর্ঘটনার খবর পাই। কোথা থেকে কী হয়ে গেল।’’
কাকদ্বীপ ফিশারম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, ‘‘যে ক’টি ট্রলার বেআইনি ভাবে মরসুম শুরুর আগেই সমুদ্রে গিয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে মহকুমা প্রশাসনের কাছে আভিযোগ জানানো হয়েছে। নিখোঁজদের উদ্ধারের জন্য ঘটনাস্থলে ট্রলার পাঠানো হয়েছে।’’