ধাওয়া করে পিটিয়ে খুন বালককে, গ্রেফতার যুবক

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ পাড়ায় তিন বন্ধুর সঙ্গে খেলছিল রিজুয়ান। ওই সময়ে সেলিম তাদের দিকে এগিয়ে আসে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঢোলাহাট শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৯ ০১:৪১
Share:

সন্তানহারা: কান্না থামছে না রিজুয়ানের (ইনসেটে) মায়ের। ছবি: দিলীপ নস্কর।

তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রকে খুন করার অভিযোগে গ্রেফতার হল এক যুবক। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার দুপুরে ঢোলাহাটের কিশোরপুর গ্রামে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম রিজুয়ান শাহ (১০)। ধৃত যুবকের নাম সেলিম লস্কর ওরফে নফর। পুলিশের দাবি, সে মানসিক ভারসাম্যহীন। সেলিমের বাবা-মাকেও আটক করা হয়েছে। ধৃতকে আজ, বুধবার কাকদ্বীপ আদালতে তোলা হবে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ পাড়ায় তিন বন্ধুর সঙ্গে খেলছিল রিজুয়ান। ওই সময়ে সেলিম তাদের দিকে এগিয়ে আসে। সেলিমের উগ্র স্বভাবের কারণে বাচ্চারা তাকে ভয় পায়। ফলে তারা খেলা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎই সেলিম তাদের তাড়া করতে থাকে। রিজুয়ানের তিন বন্ধু এদিক-ওদিক পালায়। রিজুয়ান বাড়ির দিকে দৌড়য়। অভিযোগ, সেলিম পিছু ধাওয়া করে রিজুয়ানকে তার বাড়ির উঠোনে গিয়ে ধরে ফেলে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে।
রিজুয়ানের বাড়িতে সে সময়ে কেউ ছিল না। তার বাবা আহমদ শাহ কেরলে কাজ করেন। দুই দিদিরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। রিজুয়ানের মা মাহদুন বিবি গ্রামেরই একটি স্কুলে রান্নার কাজ করেন। ফলে রিজুয়ানের চিৎকার কারও কানে পৌঁছয়নি। ফাঁকা বাড়িতে সম্পূর্ণ প্রতিরোধহীন অবস্থায় নাবালককে পেয়ে সেলিম তাকে মারতেই থাকে। উঠোনে একটি মুগুর পড়েছিল। অভিযোগ, সেই মুগুর দিয়ে রিজুয়ানের মাথা থেঁতলে দেয় সে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রিজুয়ানের বাড়ির একটু দূরে তখন সরকারি প্রকল্পে মাটিকাটার কাজ চলছিল। রিজুয়ানের চিৎকার শুনে এটা তাদের প্রাথমিক ভাবে পারিবারিক ব্যাপার বলে মনে হয়েছিল সেখানের কর্মীদের। পরে বিষয়টা একটু অদ্ভুত ঠেকলে তাঁরা কাজ ফেলে চলে আসেন। লোকজনকে আসতে দেখে পালিয়ে যায় সেলিম। মাটিকাটার লোকজন বাড়িতে ঢুকে উঠানে রিজুয়ানকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁরা ভয় পেয়ে কাজে ফিরে যান। পরে লোক মারফত গ্রামে খবর পাঠান।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

খবর পেয়ে গ্রামের লোকজন রিজুয়ানের বাড়ি আসেন। রক্তাক্ত অচৈতন্য রিজুয়ানকে তাঁরা স্থানীয় গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ততক্ষণে রিজুয়ানের মা বাড়ি চলে আসেন। রিজুয়ানের বাবাকেও খবর দেওয়া হয়।

এ দিকে, রিজুয়ানের বাকি তিন বন্ধুর কাছ থেকে গ্রামবাসীরা ঘটনাটা জানতে পারেন। পেয়ে যান সেলিমের খবরও। অভিযোগ, ক’দিন আগেই সেলিম এলাকার বাসিন্দা মান্নান লস্কর নামে এক তরুণকেও কোদাল দিয়ে কোপাতে গিয়েছিল। মাঝে মাঝেই সে এ রকম কাণ্ড-কারখানা করে থাকে। ফলে উত্তেজিত গ্রামবাসী সেলিমকে ধরে মারধর শুরু করেন। মারধর করতে যান সেলিমের বাবা-মাকেও।

গ্রামের কাছেই ঢোলাহাট থানা। খবর পেয়ে এলাকায় আসে পুলিশ। ততক্ষণে লোকজন সেলিমের বাড়িতে চড়াও হয়েছে। পুলিশই জনতার হাত থেকে তাদের উদ্ধার করে। এর পরেই গ্রামবাসীরা রিজুয়ানের দেহ নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পুলিশ গ্রামবাসীর বক্তব্য শুনে সেলিমকে গ্রেফতার করে এবং সেলিমের বাবা-মাকে আটক করে। সেলিমের বাবা-মা নুরুদ্দিন ও সোলেহান বলেন, ‘‘আমার ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন, অসুস্থ।’’

প্রতিবেশী মনিরুদ্দিন ও শামসুদ্দিন লস্কর অবশ্য বলেন, ‘‘রোগ-টোগ কিছু নয়, সেলিম ছোট থেকেই বদরাগী। ও বরাবরই একে-ওকে মেরে বেড়ায়। ক’দিন আগেও এ রকম করেছে। ও চুরি-ছিনতাইও করে। আমরা ওর বাবা-মাকে সবই বলি। কিন্তু ওরা ছেলেকে শাসন করে না। ওদের প্রশ্রয়েই সেলিম এ রকম হয়েছে।’’ পুলিশ জানায়, ক’দিন আগে যে যুবককে সেলিম কোদাল দিয়ে কোপাতে গিয়েছিল, তাঁরই দূরসম্পর্কের আত্মীয় রিজুয়ান। সে দিন তাঁকে কোপাতে না পারার রাগ থেকেই সম্ভবত রিজুয়ানের উপরে চড়াও হয় সেলিম। তাকে জেরা করা হচ্ছে বলে জানান তদন্তকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন