বিকেল তখন ৫টা। সন্ধে নামে নামে। এক প্রসূতিকে নিয়ে বাড়ির লোকজন এলেন উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিলেন, অস্ত্রোপচার করতে করতে সন্ধে নেমে যাবে। ফলে এই মুহূর্তে তাঁরা কোনও ঝুঁকি নিতে পারবেন না। কারণ, আলোর ব্যবস্থা নেই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে। বাধ্য হয়ে রোগিণীকে নিয়ে আত্মীয়েরা রওনা দিলেন ক্যানিং হাসপাতালের দিকে।
বাসন্তীর ভরতগড়ের উত্তর গরানবোসের ওই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরেই পরিস্থিতি এমন। বিদ্যুতের সমস্যা এলাকায় দীর্ঘদিনের। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, মাস চারেক আগে এলাকায় বিদ্যুৎ দফতর থেকে খুঁটি পোঁতা হয়। তার টানা হয়েছে। ৬টি ট্রান্সফর্মার বসেছে। কিন্তু আজও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। রাতে বড় কোনও বিপদ হলে জীবন হাতে নিয়ে ছুটতে হয় ক্যানিং অথবা বাসন্তী হাসপাতালে।
এলাকার মানুষের সুবিধার জন্য সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের টাকায় প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি তৈরি করা হয়েছিল। বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য পাশেই একটি ট্রান্সফর্মারও বসানো হয়। কিন্তু ওইটুকুই। তারপর আর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু বিদ্যুতের সমস্যার কারণে মানুষ এই উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকার ফলে প্রসূতি, সদ্যোজাত ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করাতে এসে ফিরে যাচ্ছেন বার বার। দিনের বেলায় যদিও বা কোনওমতে পরিষেবা মেলে, সন্ধে ঘনালে কার্যত বন্ধ হয়ে পড়ে সব পরিষেবাই।
ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য জমি দিয়েছিলেন স্থানীয় নুরুল ইসলাম সর্দার। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা অনুন্নত এলাকায় বাস করছি। এখানকার রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ পরিষেবা খুবই খারাপ। বিদ্যুতের সমস্যার কারণে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দিনরাত পরিষেবা পাওয়া যায় না।’’
বাসন্তীর বিএমওএইচ বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ না থাকায় ওই উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীদের ঠিকমতো পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি এলাকার জন প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানানো হয়েছে।’’
বিদ্যুৎ দফতরের ক্যানিং মহকুমার ডিভিশন্যাল ইঞ্জিনিয়ার মলয় শিকদার বলেন, ‘‘ওই এলাকায় বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দেওয়ার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আশা করছি খুব শীঘ্র বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে।’’