সরস্বতী পুজোর দিনই নাবালিকার বিয়ের তোড়জোড়, ঠেকালেন প্রধান

মেয়েটি পড়তে চেয়েছিল। চেয়েছিল তার বান্ধবীরাও। কিন্তু নবম শ্রেণির নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিতে উঠেপড়ে লাগেন দিনমজুর বাবা। তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, অভাবের সংসারে মেয়ের পড়ার খরচ আর টানতে পারছেন না। বিয়ে ঠিক হয়, সরস্বতী পুজোর দিন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাথরপ্রতিমা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share:

ডায়মন্ড হারবারের পঞ্চানন ক্লাবে কাচের তৈরি প্রতিমা। ছবি তুলেছেন দিলীপ নস্কর।

মেয়েটি পড়তে চেয়েছিল। চেয়েছিল তার বান্ধবীরাও। কিন্তু নবম শ্রেণির নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিতে উঠেপড়ে লাগেন দিনমজুর বাবা। তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, অভাবের সংসারে মেয়ের পড়ার খরচ আর টানতে পারছেন না। বিয়ে ঠিক হয়, সরস্বতী পুজোর দিন।

Advertisement

ঘটনাচক্রে সে কথা কানে ওঠে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের। এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের নিয়ে তিনি হাজির হন মেয়ের বাড়িতে। শেষমেশ বিয়ে আটকানো গিয়েছে।

ঘটনাটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ মহকুমার দিগম্বরপুর পঞ্চায়েতের দক্ষিণ দুর্গাপুরের। মেয়েটির চোখের জল অজানা ছিল না তার স্কুলের বান্ধবীদের। অনেক আলাপ-আলোচনার পরে সেই মেয়েরা ঠিক করে, যে ভাবেই হোক বিয়ে ঠেকাতেই হবে। পড়তে চায় যে মেয়ে, বিদ্যার দেবীর আরাধনার দিন তার বিয়েটা কোনও মতেই মেনে নিতে পারেনি তারা।

Advertisement

দু’চারজন কথা বলেছিল মেয়ের বাড়িতে। মেয়ে নিজেও আমতা আমতা করে বাড়িতে ওজর-আপত্তি তুলেছিল। কিন্তু বেশি মুখ খুলতে পারেনি। কারণ, বাবার আর্থিক অবস্থার কথা তার তো অজানা নয়। তাই ‘সুপাত্র’ পেয়ে বাবা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা নিয়ে শেষমেশ বেঁকে বসতে সাহস করেনি।

পাত্র রায়দিঘি থানার সিভিক ভলান্টিয়ার। এ দিন সকালে পাত্রীর বাড়িতে বিয়ের মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছিল। গায়ে হলুদ হয়ে যায়। তারপরে অবশ্য শেষরক্ষা হয়েছে।

পঞ্চায়েত প্রধান রবীন্দ্রনাথ বেরা বলেন, ‘‘ওর স্কুলের কয়েকজন বান্ধবী আমাকে খবর দিয়েছিল ক’দিন আগেই। মেয়ের বাবার সঙ্গে কথা বলি। ওঁরা জানিয়ে দেন, অভাবের সংসারে মেয়েকে আর পড়াতে পারবেন না। বিয়ে দিয়ে ল্যাঠা চুকিয়ে ফেলতে চান।’’

প্রধানের ব্যাপারটা পছন্দ হয়নি। তিনি জানেন, নাবালিকার বিয়ে বেআইনিও বটে। ঠিক করেন, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কয়েকজন মহিলাকে নিয়ে মেয়ের বাড়ির লোকজনকে বোঝাবেন।

সেই মতো, বুধবার সকালে তাঁরা হাজির হন ওই বাড়িতে। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘আমরা অনেক করে ওঁদের বোঝাই। বলি, অল্প বয়সে বিয়ে দিলে মেয়ের নানা শারীরিক-মানসিক সমস্যা হতে পারে। এই কাজ বেআইনিও বটে। কিন্তু তা-ও মানতে চাইছিলেন না মেয়ের আত্মীয়েরা।’’ এরপরেই প্রধান প্রস্তাব দেন, মেয়ের পড়ার খরচ চালাবে পঞ্চায়েত। তাতেই সুর নরম করেন মেয়ের বাবা-মা। মেয়ে সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেবেন না বলে কথা দেন। পাত্রপক্ষকেও জানিয়ে দেওয়া হয় সিদ্ধান্তের কথা। তাঁদের দিক থেকেও তেমন আপত্তি আসেনি বলে জানালেন পাড়া-পড়শিরা।

মেয়েটি প্রধানকে জানিয়েছে, সে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। অভাবের সংসারের হাল ধরতে চায়। সুযোগ পেলে সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সমস্ত রকম পরিশ্রম করতে আগ্রহী।

প্রধানের কথায়, ‘‘মেয়েটির পড়াশোনা নিয়ে আগ্রহ আমাদের মুগ্ধ করেছে। সরস্বতী পুজোর দিন এমন একটা মেয়ের বিয়ে হয়ে যাবে, ভাবতেই পারছিলাম না। হয় তো পড়াশোনাটাই বন্ধ হয়ে যেত এর পরে। মেয়ের বাবা-মাকে বুঝিয়ে বিয়েটা আটকাতে পেরে আমাদের সকলেরই খুব ভাল লাগছে।’’

সুভাষ মেলা। শেষ হল সাত দিনের ‘ঘোঁজা সুভাষ মেলা ও প্রদর্শনী’। একুশ বছর ধরে গাইঘাটায় এই মেলা চলছে। এক দিকে ছিল ‘সেভ ড্রাইভ-সেভ লাইভ,’ ‘আইনি পরিষেবা’র ক্যাম্প। বসে আঁকো, আবৃত্তি, ক্যুইজ, কবি সম্মেলন-সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন