বাঁ দিক থেকে তাপস বিশ্বাস, নীলিমেশ দাস। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূল পরিচালিত হাবড়া পুরসভার নির্বাচিত বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে রবিবার। সোমবার ওই পুরসভাতে বসল প্রশাসক।
এ দিন সকালে পুরসভায় আসেন বারাসতের মহকুমাশাসক তাপস বিশ্বাস। তিনি বিদায়ী পুরপ্রধান নীলিমেশ দাসের হাত থেকে কার্যভার বুঝে নেন। এখন থেকে পুরসভার দৈনন্দিন এবং নাগরিক পরিষেবা সংক্রান্ত কাজকর্ম দেখাশোনা করবেন প্রশাসকেরা। সে কারণেই অসন্তুষ্ট এলাকার বাসিন্দারা। তবে এরপর আগামী দিনে পুরসভার দৈনন্দিন কাজ ও নাগরিক পরিষেবা সুষ্ঠুভাবে হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো-সহ সাধারণ মানুষ।
বিরোধী নেতাদের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকার ও তৃণমূল ভোটে হেরে যাওয়ার ভয়ে ভোট পিছিয়ে দিয়ে পুরবাসীকে দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে দিল।’’ পুরসভায় সিপিএমের বিদায়ী কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থাশীল নয়। নির্দিষ্ট সময়ে হাবড়াতে ভোট না করানোটা নতুন কোনও ঘটনা নয়। পুরপ্রধান-সহ চারজন কাউন্সিলর এই সময়ের মধ্যে মারা গিয়েছেন। অথচ উপ নির্বাচনের কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি।’’ সাধারণ মানুষের রায় নিতে তৃণমূল ভয় পাচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
২০১৪ সালের ২১ অক্টোবর বিদয়ী পুর বোর্ডের পুরপ্রধান হয়েছিলেন সুবীন ঘোষ। তাঁর মৃত্যুর পর ২০১৫ সালে জানুয়ারি মাসে পুরপ্রধান হন নীলিমেশ দাস। পুরসভার মোট ২৪টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের দখলে ১৬টি ও বাকি আসন সিপিএমের দখলে ছিল।
এই পাঁচ বছরে মারা গিয়েছেন তপন সেনগুপ্ত, গৌতম বিশ্বাস ও আশিষকন্ঠ মুখোপাধ্যায় নামে তিন কাউন্সিলর। বিরোধীরা ওই চারটি ওয়ার্ডে উপ নির্বাচনের দাবি জানালেও তা হয়নি।
এ বার নির্দিষ্ট সময়ে পুরভোট না হওয়ায় শাসকদলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা তথা বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি বিপ্লব হালদার। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল এখন বিজেপিকে আতঙ্ক হিসাবে দেখছে। হাবড়াতে পুরভোটে হার এড়াতেই তাঁরা ভোট করাল না।’’
স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, হাবড়া পুরভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। যখনই ভোট হোক বিরোধীরা মুখ থুবড়ে পড়বে।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোট না হলেও সম্প্রতি প্রার্থীদের আসন সংরক্ষণের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে।
তৃণমূলের বিদায়ী কাউন্সিলরদের একাংশ মনে করেন, এর ফলে পুর পরিষেবা ব্যাহত হবে। তৃণমূলের এক বিদায়ী কাউন্সিলর বলেন, ‘‘পুরসভার দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি সাফাই, যানজট নিয়ন্ত্রণ, ডেঙ্গি প্রতিরোধের অভিযানে নজরদারির অভাবে গতি কমতে বাধ্য।’’গত বছর হাবড়া পুর এলাকায় জ্বর ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছিল। কয়েকজন মানুষ মারাও গিয়েছেন। এ বারও জ্বর-ডেঙ্গিতে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। নজরদারি না থাকলে এলাকা পরিষ্কার রাখা সম্ভব নয় বলে মনে করেন বাসিন্দারা।
বিদায়ী পুরপ্রধান নীলিমেশ বলেন, ‘‘পুরপ্রধান না থাকলেও আমরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের জন্য কাজ করে যাব।’’