ভরাডুবির পরে গুরুত্ব বাড়ছে পুরনো কর্মীদের

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা হাবড়ার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দূরে সরে থাকা ওই কর্মী-সমর্থকদের এ বার ফোন করে ডাকতে শুরু করেছেন।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

হাবড়া শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৯ ০২:৩৮
Share:

দলীয় নেতৃত্বের কাছ থেকে যথোচিত গুরুত্ব না পেয়ে অনেক কর্মী-সমর্থকই দূরে সরে গিয়েছিলেন। দলীয় কর্মকাণ্ডে তাঁদের সে ভাবে সামিল হতেও সম্প্রতি দেখা যাচ্ছিল না। লোকসভা ভোটে হাবড়া শহরে তৃণমূলের ভরাডুবির পরে এখন সেই সব কর্মীদেরই দলে গুরুত্ব বাড়ানোর কাজ শুরু করল দল।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা হাবড়ার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দূরে সরে থাকা ওই কর্মী-সমর্থকদের এ বার ফোন করে ডাকতে শুরু করেছেন। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘আমার ডাকে কর্মীরা সাড়া দিচ্ছেন। অনেকেই জানিয়েছেন, নিজেদের রুজি-রোজগার সেরে যতটুকু সময় পাবেন, তা তাঁরা দলের কাজে ব্যয় করবেন।’’ পুরনো কর্মীদের ওই অংশের অনেকের বক্তব্য, ‘‘দলের দুর্দিনে আমরা অবশ্যই পাশে থাকব। তবে নেতৃত্বকেও এ বার শৃঙ্খলাভঙ্গকারীদের প্রতি কড়া পদক্ষেপ করতে হবে। কারও কোনও অনৈতিক কাজকে প্রশয় দেওয়া যাবে না।’’ তাঁরা বলেন, ‘‘মন্ত্রী যখনই হাবড়ায় আসেন, নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ তাঁকে এমন ভাবে ঘিরে থাকেন, আমরা কথা বলার সুযোগই পাই না।’’

হাবড়া শহর এলাকাটি বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষদস্তিদার লক্ষাধিক ভোটে জয়ী হলেও হাবড়া পুরসভা বা হাবড়া বিধানসভা এলাকায় তিনি পিছিয়ে ছিলেন। বিজেপি প্রার্থী মৃণালকান্তি দেবনাথ এখান থেকে লিড পেয়েছেন। পুরসভার ২৪টি ওয়ার্ডেই কাকলি পিছিয়ে পড়েছেন।

Advertisement

হাবড়া জ্যোতিপ্রিয়র খাসতালুক। সেখানে এমন ফলে হতাশ জ্যোতিপ্রিয়-সহ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। ভোটে পিছিয়ে পড়ার কারণ বিশ্লেষণ করে তৃণমূল নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নেমে পড়েছেন। পুরনো কর্মীদের ফোন করে ডেকে নেওয়ার পাশাপাশি হাবড়া পুরসভা এলাকার জন্য একটি ‘স্টিয়ারিং কমিটি’ও তৈরি করা হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কমিটিতে ২৭ জন সদস্য। মূলত প্রবীণদেরই কমিটিতে রাখা হয়েছে। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘ওই কমিটির সদস্যেরা প্রতি পনেরো দিন অন্তর ওয়ার্ড ধরে-ধরে হারের কারণ বিশ্লেষণ করবেন। জেলা কমিটির কাছে সেই রিপোর্ট পাঠিয়ে দেবেন। সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।’’ হাবড়া বিধানসভা এলাকার মধ্যে চারটি পঞ্চায়েত। এই ভোটে দু’টি পঞ্চায়েতে তৃণমূল লিড পেয়েছে। বাকি দু’টিতে লিড পেয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এখন থেকে পঞ্চায়েত এলাকায় দলীয় কাজকর্ম দেখাশোনা করবেন জ্যোতিপ্রিয়ই।

স্থানীয় তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে, স্থানীয় নেতা-কর্মী, জনপ্রতিনিধিদের একাংশ সাম্প্রতিক কালে সাধারণ মানুষের সঙ্গে উদ্ধত আচরণ করছিলেন। ফলে জনগণ থেকে ক্রমশ তাঁরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিলেন। ব্যক্তিস্বার্থে দলীয় কোন্দল তো ছিলই। ভোট প্রচারের সময়েও কিছু নেতার আচরণ নিয়ে গ্রামবাসীরা জ্যোতিপ্রিয়র কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁরা জানিয়েছিলেন, জ্যোতিপ্রিয়কে নিয়ে তাঁদের কোনও ক্ষোভ নেই। সব শুনে খাদ্যমন্ত্রী তথা দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় বলেছিলেন, প্রচার-সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যায় যেন তাঁর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা হয়। এর পরেও অবশ্য লোকসভায় ভরাডুবি ঠেকানো সম্ভব হয়নি।

দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ভোটের ফল ঘোষণার পরেই জ্যোতিপ্রিয় হাবড়ার দলীয় কর্মী, নেতা, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন। সেখানে তিনি দলের নেতা-জনপ্রতিনিধিদের একাংশকে তুলোধোনা করেছেন। ওই ঘটনায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একটা বড় অংশ খুশিই হয়েছেন। তবে তাঁদের বক্তব্য, ‘‘শুধু বকাবকি করলেই হবে না, যাঁদের আচরণে মানুষ ক্ষুব্ধ, দলে তাঁদের গুরুত্ব কমাতে হবে।’’

ভোটের ফল ঘোষণার পর পরই হাবড়ার এক তৃণমূল নেতা সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেন, স্থানীয় দলীয় সভাপতিদের সরিয়ে দিতে হবে। যা নিয়েও দলের মধ্যে জলঘোলা শুরু হয়। হাবড়া শহরে অটো ও টোটো চালকদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে। যা নিয়ে তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।

শীঘ্রই জ্যোতিপ্রিয় অটো ও টোটো চালকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন। এখন থেকে সপ্তাহে শনি ও রবিবার তিনি হাবড়ায় এসে থাকবেন বলেও জানান। ইতিমধ্যেই হাবড়া শহরে কর্মী-সমর্থকদের মনোবল অটুট রাখতে জ্যোতিপ্রিয় একটি পদযাত্রা করেছেন। সেখান থেকে তিনি বলেছেন, ‘‘শহরের প্রতিটি বাড়িতে যাব। মা-বোনেদের কাছে জানতে চাইব, কেন এমন ফল হল। জানতে চাইব, আমার কোনও অন্যায় ছিল কিনা। যদি আমার অন্যায় থাকে, তা হলে হাবড়া ছেড়ে চলে যাব।’’

বিরোধীরা অবশ্য এ সব পদক্ষেপকে কটাক্ষ করছেন। বিজেপি নেতা বিপ্লব হালদার বলেন, ‘‘জ্যোতিপ্রিয়ের কথা হাবড়ার মানুষ আর বিশ্বাস করেন না। তাঁকে দেখলে লোকজন এখন ভয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন