এয়ার হর্নের দাপটে নাজেহাল

জাতীয় সড়কের ঠিক পাশেই থাকেন তপন চক্রবর্তী। হৃদরোগে ভোগেন। কিন্তু হলে কী হবে, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জাতীয় সড়কে চলা গাড়ির এয়ার হর্নের জেরবার তিনি। অসুস্থ হয়ে পড়েন মাঝে মধ্যেই।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ০৮:২৪
Share:

জাতীয় সড়কের ঠিক পাশেই থাকেন তপন চক্রবর্তী। হৃদরোগে ভোগেন। কিন্তু হলে কী হবে, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জাতীয় সড়কে চলা গাড়ির এয়ার হর্নের জেরবার তিনি। অসুস্থ হয়ে পড়েন মাঝে মধ্যেই।

Advertisement

শুধু তপনবাবু নন। ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরাও হর্নের দাপটে অস্থির হয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিবহণ দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জনবহুল এলাকায় গাড়ির চালকদের এয়ার হর্ন বাজানোর নিয়ম নেই। চালক যদি এই আইন অমান্য করেন, তা হলে দেড় হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়। কিন্তু আইন শুধু খাতায়-কলমেই!

Advertisement

আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘বাস বা অন্য গাড়ি যখন সিএফ (সার্টিফিকেট অফ ফিটনেস) করাতে আসে, তখন এয়ার হর্ন লাগানো আছে কিনা তা দেখা হয়। তবে এ বিষয়ে নজরদারির জন্য কর্মী সংখ্যা কম থাকায় তা করা যায়নি। তবে কেউ অভিযোগ করলে স্থানীয় ট্রাফিক পুলিশের কাছে করতে পারেন।’’

ডায়মন্ড হারবারের ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে রয়েছে জেলা হাসপাতাল, মহকুমা প্রশাসন ভবন, আদালত, সরিষা আশ্রম, রামকৃষ্ণমিশন ও সারদা বিদ্যামন্দির। তা ছাড়া, রয়েছে সরকারি অফিস, রাস্তার দু’ধারে রয়েছে প্রচুর দোকান। কাকদ্বীপ, নামখানা, রামগঙ্গা, পাথরপ্রতিমা থেকে কলকাতাগামী বাসগুলির হর্নের আওয়াজে অতিষ্ঠ এখানকার মানুষ।

বাস চালকেরা জানালেন, যানজট সরানোর জন্য জোরে হর্ন দেওয়া হয়। অন্য বাসগুলি যাত্রী তোলার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। ইচ্ছে করে যানজট তৈরি করা হয়। এমনিতেই শহরে সারা রাস্তা জুড়ে অটো, ভ্যান রিকশা, মোটর ভ্যান, টোটোর উৎপাত চলে। তারমধ্যে ফুটপাত এখন ব্যবসায়ীদের দখলে। ফলে মানুষ রাস্তার উপরে দিয়েই হাঁটাচলা করেন। তাঁদের সাবধান করতে জোরে হর্ন বাজাতেই হয় বলে জানাচ্ছেন বহু চালক।

জয়েন্ট কমিটি অফ বাস অপরেটর অ্যাসোসিয়েশনের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সাধারণ সম্পাদক অশোক গায়েন বলেন, ‘‘১০-১৩টি রুটে প্রায় ৫০০ বাস চলাচল করে। ওই সমস্ত বাসে এয়ার হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ করতে সভা ডেকে সমস্ত বাস মালিকদের একাধিক বার নোটিস দেওয়া হয়েছে।’’ তবে যে হারে রাস্তায় বেআইনি ছোট গাড়ির দাপাদাপি বেড়েছে, তাতে অনেকেই বাধ্য হয়ে এয়ার হর্ন ব্যবহার করছে। কারণ, কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে চালকের সব দোষ চালকদেরই দেওয়া হয় বলে তাঁর অভিজ্ঞতা।

কিন্তু রোগীদের সমস্যার কী উপায় হবে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের কেউ কেউ জানালেন, দিনের বেলায় আওয়াজ একটু কম শোনা যায়। কিন্তু রাতের দিকে তীব্র শব্দে ঘুমানো দায়। হর্নের বিকট শব্দে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গিয়ে বুক ধড়ফড় করে। হৃদরোগীরা বেশি কষ্ট পান।

জেলা হাসপাতালের সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘এয়ার হর্নের দাপাদাপির জন্য বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা, শিশু, হার্ট ও স্নায়ু রোগীরা। বাস বা অন্য গাড়ির চালকেরা অনেক বেশি ডেসিবেলে হর্ন বাজানোয় পথ চলতি মানুষের কানেরও ক্ষতি হচ্ছে। বিভাগীয় দফতরের নজরদারি চালানো উচিত।’’

রামকৃষ্ণ মিশন সারদা মন্দির স্কুলের টিচার্স ইনচার্চ সর্বাণী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রেষারেষির সময়ে বিকট ভাবে এয়ার হর্ন বাজায় গাড়িগুলি। সে সময়ে ক্লাস নেওয়া যায় না। ছাত্রীদের মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে অনেক সময়ে ক্লাস বন্ধ করে চুপ করে বসে থাকতে হয়।’’

পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিকের মতে, অনেক চালক অভ্যাসবশতই বেশি বেশি হর্ন বাজান। অনেক সময়ে দেখা গিয়েছে, লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও অনেকে গাড়ি বের করেছেন। সে ক্ষেত্রে হর্নের ব্যবহার নিয়ে তাঁরা সচেতন নন। তা ছাড়া, এয়ার হর্নের বদলে বিকল্প হর্ন ব্যবহার নিয়ে ভাবেন না গাড়ি মালিকেরাও। শুধু আইন করে এই সমস্যা সমাধান মুশকিল। কিছুটা সচেতনতা সব পক্ষেরই দেখানো দরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন