১৬টি আসনের মধ্যে একক ভাবে ৮টি আসনে জয়ী হয়ে পুরবোর্ড গড়ার দৌড়ে এক কদম এগিয়ে থাকলেও স্বস্তিতে নেই তারা। টাকি পুরসভায় ৫টিতে বামেরা ও ৩টিতে বিজেপি জয়ী হওয়ায় অবস্থা আপাতত ত্রিশঙ্কু। তৃণমূলের দাবি, বাম-বিজেপি জোট বেঁধে বোর্ড গড়ার চেষ্টা চলছে। তৃণমূল সদস্যদের কাউকে কাউকে টাকার লোভ দেখিয়ে ভাঙানোরও চেষ্টা চলছে।
এই একই অভিযোগ অবশ্য শিলিগুড়িতে উঠেছে তাদের বিরুদ্ধেই। তবে শেষমেশ রণে ভঙ্গ দিয়ে আপাতত বিরোধী আসনে বসারই ইঙ্গিত মিলছে তৃণমূলের তরফে। বাম-বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের পাল্টা দাবি, বিজেপি ও সিপিএমের এক জন করে কাউন্সিলরকে ইতিমধ্যেই টাকার লোভ দেখিয়ে নিজেদের দিকে টেনে নিয়েছে বোর্ড গড়তে মরিয়া তৃণমূল। তৃণমূলেরও পাল্টা দাবি, টাকা-পয়সা দেওয়া-নেওয়া করে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করার রাস্তায় হাঁটছে বাম-বিজেপি।
সিপিএম নেতা নিরঞ্জন সাহা বলেন, ‘‘মানুষের রায় আমাদের জয়ী কাউন্সিররেরা মাথা পেতে নিয়ে উন্নয়নের কাজ করে যেতে চান। বিজেপির সমর্থন নেওয়া কিম্বা তৃণমূলকে সমর্থন করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।’’ এই প্রথম পুরসভার ভোটে বসিরহাট মহকুমায় খাতা খুলেছে বিজেপি। দলের নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মনে রাখতে হবে, বসিরহাট মহকুমার তিনটি পুরসভায় মানুষ আমাদের ৯টি আসনে জয়ী করেছে। সঠিক ভাবে ভোট হলে আরও বেশ কয়েকটি আসনে জয়ী হতাম আমরা। তাই কাউকে সমর্থন করা নয়, আমাদের কাউন্সিলরেরা মানুষের জন্য কাজ করতে চান।’’
বিদায়ী পুরপ্রধান তৃণমূলের সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আসলে মানুষ উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়েছেন। সেই ধারা বজায় রেখে কাজ করে যেতে চাই।’’ তাই ত্রিশঙ্কু হলেও বিরোধী দলের কাউন্সিলরেরা তাঁকেই সমর্থন করবে বলে বিশ্বাস সোমনাথবাবুর। কিন্তু বিরোধী দলের কেউ কেউ বলছে, টাকার খেলা শুরু হয়েছে টাকিতে।
সব পক্ষের চাপানউতোর থেকে এ কথা স্পষ্ট, বোর্ড গঠনে স্বচ্ছতা রাখার মাথাব্যথা কারও নেই। তৃণমূলের ক্ষেত্রে আবার অন্য সমস্যাও আছে। সোমনাথবাবু ছাড়াও জয়ী কাউন্সিলরদের মধ্যে আরও কেউ কেউ পুরপ্রধানের পদের দাবিদার হয়ে বসেছেন। দলের উপর মহলে নানা রকম তদ্বিরও শুরু করেছেন তাঁরা, জানাচ্ছে তৃণমূলেরই একটি সূত্র।
তবে টাকিতে এমন দল ভাঙানোর ঘটনা নতুন নয়। আগেও বেশ কয়েক বার টাকি পুরসভায় কখনও বিরোধীদের ভাঙিয়ে কখনও পুরপ্রধান হওয়ার গোপন ভোট দেওয়া ব্যালট বাক্স লুঠ করে ভেঙে ফেলার উদাহরণও আছে। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, টাকি পুরসভা ছাড়াও বসিরহাটেও পুরপ্রধান পদ নিয়ে জটিলতা আছে তৃণমূলের অন্দরে। আজ, বুধবার দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক বৈঠকে পুরসভার জয়ী কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। মনে করা হচ্ছে, কোন পুরসভায় কে পুরপ্রধান হবেন, ত্রিশঙ্কু পুরসভাগুলিতে কী অবস্থান নেবে দল, সে সব ঠিক হবে ওই বৈঠকেই।
বহিরাগতদের এনে সন্ত্রাস, বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট, বুথের মধ্যে প্রিজাইডিং অফিসারের মাথা ফাটানো, পুলিশের লাঠি, গুলি-বোমা— কিছুই বাদ যায়নি এ বারের টাকির পুরভোটে। তা নিয়ে অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগ উঠেছে বিস্তর। টাকির প্রাক্তন পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায় ১৫৮ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। ওই পুরসভার পাঁচ বারের জয়ী সিপিএমের প্রাক্তন পুরপ্রধান দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় পরাজিত হয়েছেন তাঁর কাছে।
উন্নয়নের ক্ষেত্রে সোমনাথবাবুর ভূমিকার কথা স্বীকার করেন অনেকেই। কিন্তু শেষমেশ দলের উপরমহলের আস্থাভাজন হিসাবে তাঁকেই পুরপ্রধান করা হয় কিনা, সেটাই দেখার। আবার বিরোধী শিবির থেকে কারা লোক ভাঙিয়ে আনতে পারল, সে দিকেও কৌতুহল আছে স্থানীয় মানুষের।
২০১০-এ কংগ্রেস ২টি আসনে জয়ী হলেও এ বারে টাকিতে তাদের ভাঁড়ার শূন্য। গত বার টাকিতে ১৬টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পায় ৬টি আসন। এ বার তারা দু’টি আসন বাড়াতে পেরেছে। সিপিএমের দখলে ছিল ৭টি আসন। কমে ৫টি হয়েছে। ২টি কংগ্রেস এবং ১টি আসন দখল করেছিল নির্দল প্রার্থীরা। এ বার ওই তিনটি আসন দখল করেছে বিজেপি। গত পুরবোর্ডে কংগ্রেস এবং নির্দলের সমর্থন নিয়ে পুরপ্রধান হয়েছিলেন তৃণমূলের সোমনাথবাবু। তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হলে এক বাম কাউন্সিলর ভোট দানে বিরত ছিলেন। অন্য জন তৃণমূলকে ভোট দেন।
এ বার বামেদের পক্ষে বলা হয়েছে, তারা কখনই বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে বোর্ড গড়বে না। এমনকী, বামেদের কেউ তৃণমূলকে সমর্থনও করবে না।