বনগাঁর গঙ্গানন্দপুরের ভোট দিয়ে বেরোচ্ছেন এক বৃদ্ধা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
সকাল ১০টা। গোপালনগর-বাজিতপুর রাস্তার পাশে আলাকালীপুর এলাকায় একটি গাছের তলায় জটলা দেখে চালককে গাড়ি থামাতে বললাম। সঙ্গী চিত্রসাংবাদিক নির্মাল্য প্রামাণিককে নিয়ে নেমে দেখি, জটলা থেকে যাঁরা বেরিয়ে আসছে তাদের হাতে মুড়ি ভর্তি পলিথিন। কে দিচ্ছে মু়ড়ি? প্রশ্ন করতেই উত্তর এল, ‘‘তৃণমূল মুড়ি খাওয়াচ্ছে গো কর্তা।’’ ভোটারদের জনে জনে মুড়ি বিতরণের কারণ কী? প্রশ্ন শুনে আমতা আমতা করে এক তৃণমূল কর্মী বললেন, ‘‘কোনও দল বেছে নয়। সবাইকেই দিচ্ছি। মুড়ির সঙ্গে বাতাসাও রয়েছে।’’ সাংবাদিক দেখে জটলা ততক্ষণে হালকা হয়ে গিয়েছে।
আলাকালীপুর থেকে গেলাম গঙ্গানন্দপুর। সেখানে মাছধোব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে গিয়ে দেখা গেল তৃণমূল এবং নির্দল প্রার্থীর এজেন্ট থাকলেও কোনও বিরোধী এজেন্ট নেই। বুথের বাইরেও ভোটারদের লাইনও নেই। রয়েছে শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশ। তবে সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে সেখানে ৬০৬টি ভোটের মধ্যে ২৪০টি ভোট পড়ে গিয়েছে। ওই বুথটি বনগাঁ উত্তর বিধানসভার মধ্যে পড়ে। নির্বাচন কমিশনের মাইক্রোলেভেল অফিসারকে প্রশ্ন করতে তিনি জানালেন, সকাল থেকে বিরোধীদের কোনও এজেন্ট আসেননি। বুথের বাইরের রাস্তায় দেখা হয়ে গেল স্থানীয় পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সুকুমার পরমাণিকের সঙ্গে। তিনি দাবি করলেন, ‘‘ওই বুথের এজেন্ট হিসেবে যাঁর বসার কথা ছিল তাঁকে তৃণমূল বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়েছে। তাই তিনি বুথে বসতে চাননি।’’ তার কিছু পরে অবশ্য পাশের মহৎপুর গ্রাম থেকে পঞ্চানন দাস নামে এক জনকে নিয়ে এসে জোটপ্রার্থীর এজেন্ট হিসেবে বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। আপত্তি করে তৃণমূল। স্থানীয় তৃণমূল নেতারা দাবি করেন, বুথ এলাকার বাসিন্দা নন এমন কাউকে এজেন্ট হিসেবে বসানো যাবে না। কারণ তিনি এলাকার সবাইকে চেনেন না। গোলমাল চলাকালীনই বুথে এলেন বনগাঁ উত্তরের জোট প্রার্থী ফরওয়ার্ড ব্লকের সুশান্ত বাওয়ালি। পুলিশ-প্রশাসনের সহযোগিতায় শেষ পর্যন্ত পঞ্চাননবাবুকে সুশান্তবাবুর বুথ এজেন্ট বসানো হয়।
ওই বুথ ছেড়ে কিছুটা এগিয়েই রাস্তায় দেখা হল কয়েকজন মহিলা এবং পুরুষের সঙ্গে। ভোট দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে তাঁদের একজন বললেন, ‘‘আমরা ভোট দিতে যাবো না। কারণ কাল রাতে তৃণমূল নেতারা এসে আমাদের ভোট দিতে যেতে বারণ করে দিয়েছেন।’’
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। ভোট শেষ। জেলার নানা এলাকা ঘুরে আমরা তখন বাড়ির পথে। এক সিপিএম নেতা ফোন করে জানালেন, মাছধোব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথের জোট এজেন্ট পঞ্চাননবাবু বাড়ি ফেরার সময়ে তাঁকে মারধর করেছে শাসক দলের লোকজন।