‘কখনও জোরে কথা বলতেন না মাস্টারমশাই’

গাছ ভালবাসতেন তিনি। নানা রকম গাছে স্কুলকে নিজের হাতে সাজিয়েছিলেন। স্কুলের ল্যাবরেটরিও ঢেলে সাজান। এ হেন মানুষটির জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানের সূচনা হল স্কুল প্রাঙ্গণে দারুচিনি এবং সুন্দরী গাছের চারা রোপণের মধ্যে দিয়ে।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:১৭
Share:

স্মৃতিচারণ: স্যারের কথা বলছেন সুভাষ কুণ্ডু। নিজস্ব চিত্র

গাছ ভালবাসতেন তিনি। নানা রকম গাছে স্কুলকে নিজের হাতে সাজিয়েছিলেন। স্কুলের ল্যাবরেটরিও ঢেলে সাজান। এ হেন মানুষটির জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানের সূচনা হল স্কুল প্রাঙ্গণে দারুচিনি এবং সুন্দরী গাছের চারা রোপণের মধ্যে দিয়ে।

Advertisement

বসিরহাট হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক প্রয়াত জ্যোতিরিন্দ্রনাথ দাসের জন্মশতবর্ষ পালিত হল বসিরহাট হাইস্কুলের প্রাক্তনীদের উদ্যোগে। জ্যোতিরিন্দ্র জন্মেছিলেন ১৯১৯ সালের ১ জানুয়ারি। জন্মস্থান অধুনা বাংলাদেশের খুলনা জেলার অন্তর্গত শ্যামনগর থানার মামুদপুর গ্রাম।

নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে প্রাক্তন ছাত্রেরা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ছিল বিতর্ক সভা, মূকাভিনয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে বসিরহাট পৌরসভার কৃতি পড়ুয়াদের পুরস্কৃতও করা হয়। উপস্থিত ছিলেন বহু কৃতী ছাত্রছাত্রী। উপস্থিত ছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথের পুত্র জপেন্দ্রনাথ দাসও।

Advertisement

বৃক্ষরোপণ করে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন শিক্ষক সুভাষ কুণ্ডু, ফুটবলার মিহির বসু। ছিলেন উচ্চ আদালতের আইনজীবী শুভদীপ বিশ্বাস, সুপ্তেন্দুপ্রকাশ বিশ্বাস, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অর্চিতা ঘোষ প্রমুখ। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন চিকিৎসক তপনকুমার সারথি, সরকারিকর্মী কালিদাস মজুমদার, শিক্ষক অচিন্ত্য দাস প্রমুখ। স্মৃতিচারণায় তাঁরা বলেন, ‘‘স্যার ছিলেন দৃঢ় চরিত্রের মানুষ। কিন্তু খুবই মানবিক। খেলাধূলার প্রতি ওঁর অসীম ভালবাসা ছিল।’’ প্রাক্তন ছাত্রদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত ভট্টাচার্য, তাপস চক্রবর্তী জানান, স্যার ছিলেন দক্ষ প্রশাসকও। স্কুলের প্রতিটি ইট-কাঠ ছিল তাঁর চেনা।

প্রাক্তনীরা সারা বছর ধরে নানা কর্মসূচি নিয়েছেন এই উপলক্ষে। বসিরহাটকে প্লাস্টিকমুক্ত করা তার মধ্যে অন্যতম। ক্যানসার বিশেষজ্ঞ তন্ময় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জ্যোতিরিন্দ্রবাবুর দূরদৃষ্টি, সংযম ও নিয়মানুবর্তিতা ছিল অতুলনীয়। স্কুলের সমস্ত কাজকর্ম ছাড়াও নিজের হাতে স্কুলের বাগান পরিচর্যা করতেন। নানা দুষ্প্রাপ্য গাছ এনে লাগাতেন। তাঁর উদ্যোগে স্কুলের ল্যাবরেটরির আধুনিকীকরণও হয়। খুব প্রচারবিমুখ মানুষ ছিলেন।’’

দেশের বাইরে প্রতিষ্ঠিত তাঁর যে সব ছাত্রছাত্রী প্রিয় শিক্ষকের স্মরণ-অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি, তাঁরা স্যার সম্পর্কে তাঁদের অভিজ্ঞতার ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছিলেন। এ রকমই এক বার্তায় ইংল্যান্ডবাসী চিকিৎসক সাহিদুল বারি বলেন, ‘‘স্যারকে কখনও কারও সঙ্গে জোরে কথা বলতে দেখিনি। চশমার উপর দিয়ে একবার শুধু তাকাতেন। ছাত্র-ছাত্রীদের শান্ত করার জন্য ওই চাহনিটুকুই যথেষ্ট ছিল। বিদ্যালয়ের উন্নতির জন্য তাঁর চিন্তা আমাদের মুগ্ধ করত। পরিবেশ দূষণ নিয়েও চিন্তিত ছিলেন। তাই বৃক্ষরোপণের উপরে গুরুত্ব দিতেন।’’

প্রাক্তনীদের সংগঠনের সভাপতি দেবজ্যোতি রায় বলেন, ‘‘প্রিয় মাস্টারমশাইকে স্মরণ করা, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার পাশাপাশি নতুন ও পুরনো পড়ুয়াদের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটানোর সুযোগ করে দেওয়ারও একটা প্ল্যাটফর্ম, স্যারের জন্মশতবর্ষের এই অনুষ্ঠান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন