—ফাইল চিত্র।
ভেলোর থেকে কিডনিতে অস্ত্রোপচার করিয়ে ফিরেও বাড়িতে ঠাঁই হল না বনগাঁ শহরের বাসিন্দা এক যুবক ও তাঁর স্ত্রী সন্তানদের।
বনগাঁ শহরের ওই যুবক ভেলোর থেকে অস্ত্রোপচার করিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ফেরেন। অভিযোগ, এলাকার লোকজন তাঁকে বাড়িতে ঢুকতে দেননি। স্ত্রী, শ্যালিকা এবং দু’বছরের মেয়েকে নিয়ে ঠাঁই নেন বনগাঁ শহরের নীলদর্পণ অডিটোরিয়ামের বারান্দায়। যুবকের কথায়, ‘‘বারাসতে আমার শারীরিক পরীক্ষা হয়েছে। বনগাঁয় ফিরে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসককে দেখিয়েছি। তারপরেও এই পরিস্থিতি।’’
শুক্রবার দুপুরে নীলদর্পণ অডিটোরিয়ামের বারান্দার মেঝেয় বিশ্রাম নিচ্ছিল পরিবারটি। পুলিশ এবং পুরসভা থেকে সেখানে আরও কয়েকজন ভিন্ রাজ্য থেকে আসা মহিলা-পুরুষকেও রাখা হয়েছে সেখানে। শুক্রবার সকালে পুরসভা থেকে পরিবারটিকে পানীয় জলের বোতল, বিস্কুট, পাউরুটি-সহ শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়। বনগাঁর পুরপ্রশাসক শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘এলাকার বাসিন্দাদের বুঝিয়ে সন্দীপ এবং তাঁর পরিবারকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটা খুবই অমানবিক আচরণ। এ সব বন্ধ করতে পুলিশ-প্রশাসনকে আরও কড়া পদক্ষেপ করতে হবে।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিযায়ী শ্রমিক বা ভিন্ রাজ্য থেকে বাড়ি ফিরে আসা মানুষকে নিভৃতবাসে রাখা নিয়ে মানুষ আপত্তি তুলেছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, পরিযায়ী শ্রমিকেরা বাড়ি ফিরেও ঘরবন্দি থাকছেন না। রাস্তায় বেরোচ্ছেন। ফলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। ওই শ্রমিকদের বাড়ির অনেকেও পথেঘাটে বেরোচ্ছেন। ভিন্ রাজ্য থেকে আসা লোকজনকে এলাকার কয়েকটি স্কুলে নিভৃতবাসে রাখার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। সেখানেও তাঁদের থাকতে দিতে আপত্তি তুলছেন বাসিন্দাদের একাংশ। এর ফলে ভেলোর-ফেরত যুবক ও তাঁর পরিবারকে স্কুলেও রাখা সম্ভব হয়নি শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত।
ওই যুবকেরা জানান, ২৪ মার্চ ভেলোরের হাসপাতাল থেকে ছুটি পেলেও লকডাউনের জেরে আটকে পড়েছিলেন। একটি লজে ছিলেন। বৃহস্পতিবার ট্রেনে ডানকুনি নামেন। সেখান থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় বাসে বারাসত পৌঁছন। সেখানে তাঁদের স্ক্যানিং হয়।
বাসে বনগাঁয় পৌঁছে দেওয়া হয়। রাত তখন ১০টা। বাস দেখেই বাসিন্দাদের একাংশ ভিড় করেন। অভিযোগ, তখনই ওই যুবকদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। তাঁর কথায়, ‘‘বাস চালক থানায় না নিয়ে গিয়ে বনগাঁ হাসপাতালের কাছে নামিয়ে দিয়ে চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসক দেখিয়ে হেঁটে বনগাঁ থানার দিকে আসছিলাম। পথে থানার আইসি মানস চৌধুরীর আমাদের দেখতে পেয়ে নীলদর্পণ অডিটোরিয়ামের বারান্দায় থাকার ব্যবস্থা করেন। তখন থেকে এখানেই রয়েছি।’’
যুবকের শ্যালিকার বাড়ি কিছুটা দূরে। তিনি বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। অভিযোগ, তাঁকেও বাড়িতে থাকতে বাধা দেওয়া হয়। মানস বলেন, ‘‘বাসিন্দাদের বুঝতে হবে, বাইরে থেকে যাঁরা ফিরছেন তাঁরাও প্রতিবেশী। তাঁদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা উচিত নয়। বাসিন্দাদের বুঝিয়ে ওঁদের গৃহনিভৃতবাসে রাখার ব্যবস্থা
করা হচ্ছে।’’