Dengue

জ্বরে মৃত্যু, দেগঙ্গা  ছাড়ছেন অনেকে

ঘরে ঘরে জ্বর। সরকারের তরফে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো বা মশা মারার কোনও চেষ্টা নেই বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর। পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যশিবিরের অভাব এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না-মেলা নিয়ে ক্ষোভও কম নয়।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

দেগঙ্গা শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৩৮
Share:

ফাইল চিত্র।

প্রশাসনের উপরে আর ভরসা রাখতে পারছেন না তাঁরা। তাই আতঙ্কে ঘর ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি পালাতে শুরু করলেন দেগঙ্গার বহু মানুষ।

Advertisement

আতঙ্ক জ্বরের এবং তার জেরে মৃত্যুর। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত উত্তর ২৪ পরগনায় জ্বরে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাঁচ জনই দেগঙ্গার। আতঙ্ক এমন জায়গায় পৌঁছেছে, মশা কামড়ালেই গ্রামবাসীরা জনে জনে জিজ্ঞাসা করছেন, কী করবেন?

ঘরে ঘরে জ্বর। সরকারের তরফে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো বা মশা মারার কোনও চেষ্টা নেই বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর। পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যশিবিরের অভাব এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না-মেলা নিয়ে ক্ষোভও কম নয়। এই অবস্থায় প্রাণ বাঁচাতে অন্যত্র চলে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই বলেই মনে করছেন অনেকে। স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য দাবি করেছে, জ্বর মোকাবিলায় সব রকম চেষ্টাই চলছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র চলতে পারে না ’ সরব মুকুল

চৌরাশি পঞ্চায়েতের শিমুলিয়ার বাসিন্দা, জ্বরে আক্রান্ত অজুদা বিবিকে (৫৫) সুস্থ বলে রবিবার ছুটি দিয়েছিল বারাসত জেলা হাসপাতাল। ফের অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। বুধবার সেখানেই মারা যান। তাঁর মেয়ে মনোয়ারা বিবির প্রশ্ন, ‘‘কেন সরকারি হাসপাতাল সম্পূর্ণ সুস্থ না করে ছুটি দিয়ে দিল?’’ চাকলা পঞ্চায়েতের সুবর্ণপুর গ্রামের মহম্মদুল্লা মণ্ডলকে (১৭) বারাসত হাসপাতাল থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। বুধবার ভোরে সেখানে সে মারা যায়। তার কাকা আব্দুল হাকিম বলেন, ‘‘ভাইপোর প্লেটলেট ১৪ হাজারে নেমে গিয়েছিল। চিকিৎসক ডেঙ্গির কথা বললেও মৃত্যুর কারণ সেপ্টিসেমিয়া লেখা হয়েছে।’’ এ দিনই আবার চাঁপাতলা পঞ্চায়েতের পশ্চিমপাড়ার মর্জিনা বিবি (৪২) নামে এক প্রতিবন্ধী মহিলাকে হাড়োয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পথেই মারা যান। একই ভাবে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ওই পঞ্চায়েতেরই দক্ষিণপাড়া এলাকার বাসিন্দা তাজমিরা বিবিও (৩৭) মারা যান কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথে।

মঙ্গলবার বারাসত হাসপাতালে মৃত্যু হয় দেগঙ্গার পারুলিয়া মাধবপুর গ্রামের রোজিনা বিবির (২৮)। মৃত্যু হয় মঞ্জিলআটির মহব্বত আলি মল্লিকেরও (১৭)। জেলায় জ্বরে আর এক জনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি হাবরার বনবনিয়ার অজয় বালা (৩৭)।

সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি দেগঙ্গারই। মৃত রোজিনা বিবির স্বামী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘ছেলে ও স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করি। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ছেলেকে চিকিৎসা না-করিয়ে বাড়ি নিয়ে এসেছি। ওকে নিয়ে মালঞ্চে শ্বশুরবাড়ি চলে যাচ্ছি।’’ চাঁদপুর গ্রামের ফিরোজউদ্দিন
বলেন, ‘‘ভয়ে আমার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে গ্রামে থাকতে চাইছিল না। বাধ্য হয়ে পার্ক সার্কাসে আত্মীয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন