সৃষ্টি: মেলায় হস্তশিল্পীরা। বারাসতে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
হস্তশিল্প মেলাকেও গ্রাস করেছিল ‘চিনা প্রোডাক্ট’। তা নিয়ে অভিযোগও জানিয়েছিলেন দেশীয় শিল্পীরা। এ বার অবশ্য এই মেলায় বিদেশি সামগ্রীর ‘প্রবেশ নাস্তি’। আর তাতেই বদলে গেল বারাসতে রাজ্য হস্তশিল্প মেলার চেহারাটা। কাছারি ময়দানে ৩০ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে মেলা শেষ হল রবিবার, ১২ নভেম্বর। মেলা শেষে হিসাব মিলিয়ে দেখা গেছে বিকিকিনি ছাড়িয়ে গিয়েছে দু’ কোটি টাকা। এই তথ্য জানিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ (ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ) বলেন, ‘‘এ বছরের হস্তশিল্প মেলায় বেচাকেনার সব রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে।’’ ভাল বিকিকিনি হাসি ফোটাল কলকাতা-সহ রাজ্যের ২৫টি জেলার হস্তশিল্পীদের মুখেও।
এই মেলায় শুধু রাজ্যের হস্তশিল্পেরই প্রদর্শন হওয়ার কথা। অথচ গত কিছু বছরে দেখা যাচ্ছিল, মেলায় দেদার বিদেশি, বিশেষত চিনা সামগ্রীর বিক্রি চলছে। সরকার অনুমোদিত টেরাকোটা শিল্পী আশিস বিশ্বাস বলেন, ‘‘ছোটবড় চিনা হস্তশিল্প ছাড়াও সোনালি পাতের কাজ করা এক ধরনের আর্ট ফ্রেমকেও দেশীয় শিল্প বলে চালানো হচ্ছিল। আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম।’’
মিলন মেলা প্রাঙ্গণে নির্মাণ কাজ চলছে। তাই প্রতি বছরের মতো এ বার সেখানে হস্তশিল্প মেলা, বইমেলা হবে না। তার বদলে ১৮ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর ইকো পার্কে হবে রাজ্য হস্তশিল্প মেলা। তার আগে বারাসতের হস্তশিল্প মেলায় কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেসার এক হাজার ছোট-বড় স্টলে হস্তশিল্পীরা নিজেদের তৈরি সামগ্রী নিয়ে এসেছিলেন। দামোদর, কংসাবতীর মতো জেলার মুখ্য নদীর নাম দিয়ে ছিল ২৫টি জেলার বড় স্টল।
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রত্যেক শিল্পীর থাকা, খাওয়া ব্যবস্থার পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে দৈনিক ৭৫ টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। প্রতিদিন এসে মেলা দেখভাল করেছিলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেন, ‘‘হস্তশিল্পীদের দৈনিক অনুদান, এমনকী মূলমঞ্চে যাঁরা গান গাইছেন সেই লোকশিল্পীদের সম্মান দক্ষিণাও দেওয়া হয়েছে।’’ উত্তর ২৪ পরগনা জেলা শিল্পকেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার প্রণবকুমার নস্কর বলেন, ‘‘বিভিন্ন জেলার শিল্পীরা এখানে এসে থেকেছেন। মেলার মাঠেই শিল্পকর্ম গড়ে বিক্রি চলেছে। পাশাপাশি প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছিল।’’
কাঠ, গাছের ডাল, গুঁড়ি দিয়ে মেলায় হরেক রকমের পুতুল গড়েছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের ইন্দ্রনাথ সরকার। বললেন, ‘‘অনেক বছর এত ভাল বেচাকেনা হয়নি। যা এনেছিলাম শেষ।’’
মেলায় জলপাইগুড়ি থেকে বেত, কাঠের আসবাবপত্র নিয়ে এসেছিলেন সুধীর দাস। তিনি বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গে ব্যবসার অবস্থা ভাল নয়। মেলায় না এলে বড় ক্ষতি হত।’’ কাঠ, গাছের ডাল, গুঁড়ি দিয়ে হরেক রকমের পুতুল গড়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের ইন্দ্রনাথ সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক বছর এত ভাল বেচাকেনা হয়নি। যা এনেছিলাম শেষ।’’