বাড়িতে তৈরি চোলাই পাচার হয় আড়ালেই

রাত ফুরোতে না ফুরোতেই এক সময়ে এখানে আকাশ ঢাকত কালো ধোঁয়ায়। বিঘার পর বিঘা যে জমিতে জল জমে থাকত বছরভর, সেই জমি এখন খটখটে শুকনো।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:২০
Share:

এমন পাউচেই পাচার হয় চোলাই।

রাত ফুরোতে না ফুরোতেই এক সময়ে এখানে আকাশ ঢাকত কালো ধোঁয়ায়। বিঘার পর বিঘা যে জমিতে জল জমে থাকত বছরভর, সেই জমি এখন খটখটে শুকনো। সেখান থেকে দিব্যি আকাশ দেখা যায়। কারণ, এখন আর ভাটি জ্বলে না বিলকান্দার বিস্তীর্ণ এলাকায়।

Advertisement

প্রকাশ্যে, বছরের পর বছর চোলাই তৈরিই ছিল এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দার একমাত্র রোজগার। বছর কয়েক আগে সরকার তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে। এক সময়ে রাজ্যে যার পরিচিতি ছিল ‘চোলাই গড়’ নামে, সেই লেনিনগড়ে কি বন্ধ এই কারবার? সাদা চোখে তেমনটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক। যদিও এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, লোকচক্ষুর সামনে নয়। এখন চোলাই তৈরি হয় বাড়িতে, গ্যাসের উনুনে।

বুধবারই খড়দহ থানা এলাকা থেকে কয়েক হাজার লিটার কাঁচা (‘র’) স্পিরিট উদ্ধার করেছে পুলিশ। অন্য ব্যবহার থাকলেও এই স্পিরিট মূলত লাগে চোলাই তৈরির কাজে। বিলকান্দার লেনিনগড়ের বাসিন্দারা জানালেন, এলাকা থেকেই কেনা হয় চোলাই তৈরির কাঁচামাল। তবে এটাও ঠিক, আগে যাঁরা এই কারবার চালাতেন, তাঁদের অনেকেই পুরনো পেশা ছেড়ে অন্য ব্যবসা ধরেছেন।

Advertisement

ঘোলা থানার বিলকান্দা পঞ্চায়েতের লেনিনগড় খড়দহ বিধানসভা এলাকার অন্তর্ভুক্ত। বাম আমলে এলাকার বিধায়ক ছিলেন আবগারি তথা অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত। তৃণমূল আমলেও এলাকার বিধায়ক, রাজ্যের অর্থ তথা আবগারিমন্ত্রী অমিত মিত্র। এক সময়ে রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চোলাই তৈরি হত এই লেনিনগড়েই। এবং, তা সকলের চোখের সামনে। পুলিশ কখনও-সখনও অভিযান চালাত ঠিকই। ধরপাকড় শুরু হওয়ার পরে কিছু দিন বন্ধ থাকত কারবার। তার পরে আবার যে-কে-সেই!

বর্তমান সরকারের আমলে চোলাইয়ের কারবার বন্ধ করতে কারবারিদের অন্য পেশায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা শুরু হয়। ব্যারাকপুর (২) পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সোমা ঘোষ বলছেন, ‘‘ওই কারবারে যুক্ত পরিবারের মহিলারা যাতে স্বনির্ভর হন, তার উপরে জোর দিই। তাঁদের সেলাই, মোবাইল ফোন সারানো-সহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’’ তিনি জানালেন, স্বনির্ভর প্রকল্পে অনেককে ছোটখাটো ব্যবসাও করে দেওয়া হয়েছে। ঋণও পেয়েছেন কয়েক জন। এখনও লেনিনগড়ে চোলাই তৈরি হয়, এমন তথ্য তাঁদের কাছে নেই বলেই দাবি সোমাদেবীর।

আগে যেখানে সারি সারি ভাটি জ্বালিয়ে চোলাই তৈরি হত, তার অদূরেই চায়ের দোকান। পুনর্বাসনে যে আখেরে অনেকের ক্ষতি হয়েছে, সে কথা জানালেন অধিকাংশ জনই। কারণ, সরকার শুধু কারবারিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু পরোক্ষে এই কারবারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। কারও ছিল কাঁচামালের দোকান, কেউ চোলাই তৈরি করে পাচার করতেন। তাঁরা পড়েছেন বেকায়দায়। তাঁদেরই এক জন জানালেন, আগে লরি লরি চিটে গুড়ের কারবার ছিল এলাকার এক ব্যক্তির।

আর এখন? জবাব এল, এখনও গুড়ের কারবারই করেন তিনি। তবে বিক্রি পড়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই গুড় কী কাজে লাগে? জানা গেল, এখনও অনেকেই পুরনো কারবারে রয়েছেন। কী ভাবে? জানা গেল, গ্যাসের উনুনে গোপনে বাড়িতেই তৈরি হয় চোলাই। সাইকেলে করে তা পাচার হয় বারাসত, নৈহাটি, হালিশহর, বীজপুরে।

পুলিশ কি গোপনে চোলাই তৈরি কথা জানে? ব্যারাকপুর কমিশনারাটের ডিসি (‌জোন ২) আনন্দ রায় বলেন, ‘‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন