ক্লাসে সাপ-লুডো খেলা হয়, কেন জানেন?

খেলতে-খেলতে মইয়ের ঘরে পড়লে তরতরিয়ে উঠে যাবে। আবার সাপের মুখে পড়লে নেমে আসতে হবে নীচে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জয়নগর শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৯ ০৭:১০
Share:

পাঠ: জয়নগরের স্কুলে। —নিজস্ব চিত্র।

ক্লাসঘরের মেঝে জুড়ে পাতা হয়েছে বিশাল ফ্লেক্স। সেখানে আঁকা সাপ-লুডো। কিন্তু ঘুঁটি নেই। এই খেলায় ঘুঁটি সাজবে পড়ুয়ারাই। খেলতে-খেলতে মইয়ের ঘরে পড়লে তরতরিয়ে উঠে যাবে। আবার সাপের মুখে পড়লে নেমে আসতে হবে নীচে।

Advertisement

কেন এমন খেলা?

খেলার মাধ্যমে পড়ুয়াদের বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে দেওয়া হচ্ছে সচেতনতার পাঠ। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে জয়নগরের বামনগাছি পঞ্চায়েতের কয়েকটি স্কুলে চলছে এই কর্মসূচি। লিঙ্গবৈষম্য, নাবালিকা বিবাহ, শিশুপাচারের মতো ঘটনা রুখতে সচেতন করা হচ্ছে পড়ুয়াদের।

Advertisement

কী ভাবে চলছে খেলা?

বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয়— তার একটি তালিকা আগে তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকা মতো ইতিবাচক দিকগুলি লেখা হয়েছে লুডোর ছকের সবুজ খোপে। সেই খোপে থাকছে মইয়ের ছবি। আর সাপের মুখে থাকছে নেতিবাচক দিকগুলি। সেই খোপের রঙ লাল। যেমন, কোনও এক লাল খোপে লেখা ‘স্কুল ছেড়ে কম বয়সে বিয়ে করব’। খেলতে খেলতে সেই খোপে কোনও পড়ুয়া গিয়ে পড়লে অনেকটা নেমে যেতে হচ্ছে তাদের। কোথাও হয় তো লেখা, ‘পড়াশোনা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াব’। সেই খোপে পড়লে মই বেয়ে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়াটি উঠে যাচ্ছে উপরে।

সংস্থার তরফে প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই এখানে ঘুঁটি। কখনও উঠছে। কখনও নামছে। এর ফলে ওরা সহজেই বুঝতে পারছে, কোনটা ওদের করা উচিত, কোনটা নয়। সচেতনতা তৈরির এই পদ্ধতি উপভোগও করছে পড়ুয়ারা।’’ এক ছাত্রীর কথায়, ‘‘সকলে মিলে মজা করে সাপ-লুডো খেলা হল। বুঝতে পারলাম, কী করলে জীবনে এগিয়ে যেতে পারব, আর কী করলে পিছিয়ে পড়তে হবে।’’

সাপ-লুডোর পাশাপাশি আরও নানা ভাবে সচেতন করার কাজ চলছে স্কুলে স্কুলে। শিশু নির্যাতনের ব্যাপারে সচেতন করতে দেখানো হচ্ছে সিনেমা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতী নারীদের ছবি দেখিয়ে ছাত্রীদের বোঝানো হচ্ছে, মেয়ে হলেও কোনও ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে নেই।

সংস্থার কর্ণধার স্মিতা সেনের কথায়, ‘‘এই সব গ্রামাঞ্চলে ঘরে ঘরে মেয়েরা লিঙ্গবৈষম্যের শিকার। নাবালিকা বিবাহ, শিশুপাচারের মতো ঘটনা আকছার ঘটছে। এ সবের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলাটা জরুরি। স্কুল পর্যায় থেকেই আমরা কাজটা করতে চাইছি। তাই এই উদ্যোগ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন