Canning

ক্যানিংয়ের বঙ্কিম সর্দার কলেজ এখন ‘এ’ গ্রেড

অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য অসুবিধায় পড়তে হত কলেজ পড়ুয়া ও শিক্ষকদের। তা সত্ত্বেও পড়াশোনার মান ধরে রেখেছিল কলেজটি, ফলে জুটেছিল ‘বি’ গ্রেড তকমা।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৫২
Share:

পরিদর্শন: ক্যানিংয়ের কলেজে নাক-এর সদস্যরা। নিজস্ব চিত্র

ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল (নাক) এর মূল্যায়নে সম্প্রতি ক্যানিংয়ের বঙ্কিম সর্দার কলেজ ‘এ’ গ্রেড পেল। ২০০৭ সাল থেকে টানা ‘বি’ গ্রেড ধরে রেখেছিল কলেজটি। কাকদ্বীপের সুন্দরবন মহাবিদ্যালয়ের পরে প্রত্যন্ত সুন্দরবন এলাকায় এটিই দ্বিতীয় কলেজ যারা নাকের বিচারে ‘এ’ গ্রেডে উন্নীত হল। সেই সঙ্গে কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন, লোরেটো, স্কটিশ চার্চ কলেজগুলির সঙ্গে একই সারিতে জায়গা করে নিল এই কলেজ।

Advertisement

১৯৫৫ সালে ক্যানিং শহর থেকে প্রায় ছ’ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বঙ্কিম সর্দার এই কলেজের স্থাপনা করেন। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য অসুবিধায় পড়তে হত কলেজ পড়ুয়া ও শিক্ষকদের। তা সত্ত্বেও পড়াশোনার মান ধরে রেখেছিল কলেজটি, ফলে জুটেছিল ‘বি’ গ্রেড তকমা। ২০১৫ সালের মূল্যায়নেও সেই তকমা ধরা ছিল। এমনকী, ২০১৬ সালে দেশের যে ১২৪টি কলেজকে ‘পোটেনশিয়াল ফর এক্সেলেন্স’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, সেই তালিকাতেও জায়গা করে নিয়েছিল বঙ্কিম সর্দার কলেজ। কিন্তু সম্প্রতি নাক-এরমূল্যায়নে এক লাফে ‘এ’ গ্রেডেপৌঁছে যাওয়া কলেজের পড়ুয়া ও কর্তৃপক্ষের কাছে নিঃসন্দেহে বেশ গর্বের বিষয়।

গত সাতটি শিক্ষাবর্ষে কলেজের সামগ্রিক মূল্যায়ন করেছে নাক -এর তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল। সেই বিচারেই ‘এ’ শিরোপা দিয়েছেন তাঁরা। কলেজের পাঠ্যক্রম, পঠনপাঠন, পরিকাঠামো, স্টুডেন্ট সাপোর্ট, পরিচালনা-সহ মোট সাতটি বিষয়ের উপর বিশ্লেষণ করা হয়। গত ১২ এবং ১৩ ডিসেম্বর এই কলেজে আসেন নাক -এর তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল।

Advertisement

গ্রামের কলেজ, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, পড়ুয়াদের দারিদ্রসীমার মতো প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে কলেজটি নিজেকে উন্নত করার সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের এই লড়াকু মনোভাব, পড়ুয়া-শিক্ষক মেলবন্ধন ও পড়াশোনার ক্ষেত্রে মোবাইল অ্যাপ-সহ একের পর এক আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর কারণেই কলেজের মান উন্নত হয়েছে। এ ছাড়া সংস্কৃতিচর্চার দিক থেকেও পিছিয়ে নেই এই কলেজ। এই সমস্ত কারণেই ‘এ’ তকমা মিলেছে বলে দাবি কলেজ পড়ুয়া ও শিক্ষকদের।

সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষার অন্যতম অবলম্বন এই কলেজে ১৬টি বিষয় পড়ানো হয়। ৫৫জন কলেজ শিক্ষক ও ২০০০ পড়ুয়া রয়েছেন কলেজে। প্রায় ২০ হাজার বই রয়েছে কলেজের গ্রন্থাগারে।

কলেজের অধ্যক্ষ তিলক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কলেজের কাজ পড়াশোনার ক্ষেত্রে নানা ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে ছাত্রছাত্রীদের সামনে তুলে ধরা। গত কয়েক বছরে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে সেই চেষ্টাই লাগাতার চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। এখানে শিক্ষকেরা পড়ুয়াদের মেন্টর, তাই এই সাফল্য এসেছে।” অধ্যক্ষের দাবি, সুন্দরবনের প্রতিটি পড়ুয়ার মধ্যে একটি সুন্দর মন আছে, যাকে ঠিকমতো চালনা করতে পারলেই ভাল ফল আসবে। পড়ুয়া-শিক্ষকদের মেলবন্ধন, আন্তরিকতা বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করেন নাক-এর পিআর টিম।

কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষিকা সুচন্দ্রা বিশ্বাস বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে আমরাযে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, আজতার ফল মিলেছে। শিক্ষকদের পাশাপাশি পড়ুয়ারাও সাফল্যের অংশীদার।”

তবে আগামিদিনে কলেজের আরও উন্নতির স্বার্থে কয়েকটি বিষয়ের বিশেষ নজর দিতে হবে বলে মনে করেন কলেজের অধ্যক্ষ। তিনি জানান, আরও বেশি সরকারি অনুদান পেলে ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আরও বেশি সামাজিক দায়িত্ববোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন। তা হলে সুন্দরবনের এই কলেজ আগামী দিনে স্কিল ডেভেলপমেন্টের নোডাল সেন্টার হয়ে উঠতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি সুন্দরবনের প্রাকৃতিক অবক্ষয়কেকেন্দ্র করে এখানেই গবেষণাকেন্দ্র গড়ে ওঠা সম্ভব বলে দাবি কলেজ কর্তৃপক্ষের।

কলেজ পরিচালন কমিটির সভাপতি তথা ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশরাম দাস বলেন, “নাকের মূল্যায়নে আমরা খুশি। এই সাফল্য আমাদের সকলের। আরও ভাল কাজ করতে হবে, সাফল্য ধরে রাখতে সকলের সহযোগিতা কাম্য। এই সাফল্যকে ধরে রাখাই সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন