Kali Puja 2023

মন্দির থেকে প্রেতমহল, আলোয়-থিমে জমজমাট বারাসতের কালীপুজো

কালীপুজোর ভিড় সামাল দিতে নজরদারি চলছে ড্রোন উড়িয়েও। বারাসতের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিটি মোড়ে পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র থাকছে। মোটরবাইকে টহলদারি চলছে।’’

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

বারাসত শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৩৬
Share:

বারাসত সন্ধানী ক্লাবের পুজো মণ্ডপে দর্শনার্থীদের ভিড়। শনিবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে গিয়েছিল এক মণ্ডপ থেকে অন্য মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে প্রতিমা দর্শন। ‘ভিআইপি পাস’ প্রথা থাকছে না এ বারেও। কালীপুজোর ভিড় সামাল দিতে
নজরদারি চলছে ড্রোন উড়িয়েও। বারাসতের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিটি মোড়ে পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র থাকছে। মোটরবাইকে টহলদারি চলছে।’’ সেরা পুজো উপহার দিতে তৈরি বারাসত-মধ্যমগ্রামের ক্লাবগুলিও।

Advertisement

নবপল্লির আমরা সবাই ক্লাব গড়েছে মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদের কৈলাস মন্দির। দু’হাজার বছর আগে সেখানকার ১০২টি গুহার মধ্যে ৩২টিতে যাতায়াত করা যেত। ৭৫ ফুট উচ্চতার মণ্ডপে মূল গেটটি ১৬ নম্বর গুহা। রুপোলি সিংহাসনে দেবীর তিন রূপ। হস্তিনাপুরের রাজধানী তৈরি করেছে কেএনসি রেজিমেন্ট। ত্রিদেব মণ্ডপ তৈরি হয়েছে পাহাড়ের আদলে। ভিতরে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর। রুদ্ররূপী কালীর চারপাশে নানা মডেল আর মায়াবি আলো। হ্যারি পটারের জাদুনগরীতে এ বার উঠে এসেছে পায়োনিয়ার অ্যাথলেটিক ক্লাবে। পুজো, মেলা, আলোয় সেজে উঠেছে মাঠ, পুকুর। মণ্ডপের ভিতরে যন্ত্রচালিত বিভিন্ন প্রতিকৃতি। ১৪ ফুট উঁচু, ২১ ফুট চওড়া দেবী মূর্তি।

সন্ধানীতে এ বার ইন্দোনেশিয়ার বালি মন্দির। ২০০ ফুটের জলাশয়ের মাঝে ৫০ ফুট উঁচু মণ্ডপ। জলাশয়ের উপরে কংক্রিটের সেতু দিয়ে হেঁটে দেবী দর্শন করছেন দর্শনার্থীরা। বদ্রীনাথের মন্দির গড়েছে নবপল্লি সর্বজনীন। প্রায় ৭৫ ফুট উচ্চতার বিষ্ণু মন্দিরে দশাবতার। নবপল্লি ব্যায়াম সমিতির কাল্পনিক মন্দিরে ১৪ হাতের বিশাল দেবী। নজর কেড়েছে রেজিমেন্ট, জাগৃতি ও ন’পাড়া নেতাজি সঙ্ঘের মাতৃ প্রতিমাও।

Advertisement

তরুছায়ার থিম আন্দামানের আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবনশৈলী ও শিল্পকলা। পাটকাঠি,
হোগলা পাতা, কতবেল, ঝিনুক দিয়ে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। দেবীর জিভ এক হাত লম্বা। সাউথ ভাটরাপল্লি যেন এক টুকরো গ্রাম। মাটির ঘর, লাঙল, খেত, জলাশয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি প্রতিমা। শতদল ক্লাবের থিম, ইলোরার শ্যামা কালী। থাকছে আলোর গেট। বিদ্রোহী স্পোর্টিং ক্লাবে আমেরিকার স্ট্যাচু অব লিবার্টি। প্রায় ৬৫ ফুট উঁচু মণ্ডপে সমুদ্র মন্থনের দৃশ্য। ন’পাড়া ওয়েলফেয়ার কমিটির থিম— সময়ের মায়াজাল। লকডাউনের সময়ে ভীত, বিপন্ন, ঘরবন্দি মানুষের জীবন তুলে ধরা হয়েছে। ন’পাড়ায় ক্ষুদিরাম বসু রোডের কল্যাণ সমিতির ভাবনা, কুমোরপাড়ার গরুর গাড়ি। ১৬ ফুট দেবী। চন্দননগরের আলো, ধামসা-মাদলের লোকনৃত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতে উঠেছে এলাকা। আগুয়ান সঙ্ঘে তামিলনাড়ুর আদিযোগী বিশাল ভাস্কর্য। আলোয় ভাসছে গোটা এলাকা। বুর্জ খলিফার আদলে মণ্ডপ গড়েছে বালক বৃন্দ স্পোর্টিং ক্লাব। কাচের প্রতিমা। যুবগোষ্ঠীর থিম, শিবশক্তি। নেতাজিনগর স্পোর্টিং ক্লাবে এ বার পুণের নারায়ণ ধাম। ইয়ংস্টারে নারকেলের খোলা দিয়ে তৈরি হয়েছে নবান্ন উৎসব। আন্দামানের জারোয়া সম্প্রদায়ের দেখা মিলবে রাইজ়িং স্টারে। মৎস্য আড়ত কল্যাণ সমিতির ডিজ়নিল্যান্ডে ভিড় ছোটদের পাশাপাশি বড়দেরও।

মধ্যমগ্রামের মেঘদূত শক্তি সঙ্ঘের থিম, রাজ্যের জেলাগুলির কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ভাষার মিল ও বৈচিত্র্য। পূর্বাশা যুব পরিষদে এ বারে আদি যোগীনাথ। মণ্ডপে ঢোকার মুখেই ৬১ ফুট উঁচু শিব মূর্তি। মাইকেলনগরের নেতাজি সঙ্ঘে গুজরাতের মন্দিরের আদলে মণ্ডপ। চৌমাথার ইয়ং রিক্রিয়েশন ক্লাবের থিম, বাংলার টেরাকোটা শিল্প। দোহারিয়ার শৈলেশনগর যুবক সঙ্ঘ বদলে গিয়েছে সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশে। মৈত্রী সঙ্ঘের থিম, দার্জিলিঙের ডাউন হিলের ভৌতিক আতঙ্ক। বসুনগর যুবক বৃন্দের থিম, মাহিষ্মতী প্রাসাদ। শ্রীনগর তিন নম্বর অধিবাসীবৃন্দের থিম, বাংলার লোকশিল্প। পশ্চিম চণ্ডীগড়ের বালক ও কিশোর সঙ্ঘের মণ্ডপের থিম প্রেতমহল। এ ছাড়াও বসুনগর প্রতাপ সঙ্ঘ, গঙ্গানগরের যুবক সঙ্ঘ ও একত্র সঙ্ঘ এবং বিধান পল্লির কয়েকটি পুজোও এ বারে সেরার লড়াইয়ে নেমে নজর কেড়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন