এই পরিবেশে কী ভাবে মানুষ হবে ছেলেপুলে, প্রশ্ন ফতেমার

বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন ডিআইজি (পিআর) রাজেন্দ্রকুমার যাদব। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু ঘটনার বিবরণ দেন তাঁকে। পরে ঘটনাস্থলে আসে পাঁচ সদস্যের সিআইডির প্রতিনিধি দল। 

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা 

বাসন্তী শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:২০
Share:

পরিদর্শন: সিআইডি-র দল। বাসন্তীর গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

গত তিন বছর ধরে বাসন্তী থানার ফুলমালঞ্চ পঞ্চায়েতের নেবুখালি, পানিখালি, নির্দেশখালি এলাকায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ, সংঘর্ষ লেগেই রয়েছে। এর আগে এলাকায় সিপিএম ও আরএসপির মধ্যে বিবাদ ছিল। বাসন্তী থানার সব থেকে অশান্তিপূর্ণ এলাকা হিসেবে এই এলাকা পরিচিত। মঙ্গলবার সকালেও নেবুখালি গ্রামে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে সাহাবুদ্দিন সর্দার নামে এক তৃণমূল কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ঘটনায় অভিযোগ ওঠে যুব তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এলাকার পরিস্থিতি এখনও থমথমে। পুলিশি টহলদারি চলছে। র‍্যাফ মোতায়েন রয়েছে।

Advertisement

বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন ডিআইজি (পিআর) রাজেন্দ্রকুমার যাদব। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু ঘটনার বিবরণ দেন তাঁকে। পরে ঘটনাস্থলে আসে পাঁচ সদস্যের সিআইডির প্রতিনিধি দল। চন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে দলটি যেখানে সাহাবুদ্দিন সর্দারকে গুলি করে খুন করা হয়েছিল, সেখানে যায়। ঘটনাস্থল থেকে গুলি, বোমার সুতলি-সহ নমুনা সংগ্রহ করেন দলের সদস্যেরা। বাসন্তী থানার পুলিশকে তদন্তে সাহায্য করার জন্যই সিআইডির দলটি ঘটনাস্থলে এসেছে বলে জানান তাঁরা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সাহাবুদ্দিন খুনের ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালের ঘটনায় তৃণমূল যুব নেতাদের দিকে অভিযোগের আঙুল ওঠায় ওই সন্ধ্যায় বাসন্তী ব্লক যুব তৃণমূল নেতা আমানুল্লা লস্কর, জালাল মোল্লা ও ফুলমালঞ্চ পঞ্চায়েতের প্রধান তথা স্থানীয় যুব তৃণমূল নেতা ইউসুফ মোল্লার সরকারি নিরাপত্তা রক্ষী তুলে নেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে। বুধবার বিকেলে ময়নাতদন্তের পরে সাহাবুদ্দিনের দেহ গ্রামে ফেরে। পুলিশি নিরাপত্তায় দেহ কবর দেওয়া হয়। এখনও গ্রামের বহু পুরুষ ঘরছাড়া। বুধবার নেবুখালি গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, বেশ কিছু বাড়ি তালাবন্ধ। কিছু বাড়িতে শিশু, মহিলা ও বয়স্ক মানুষজন রয়েছে। তাঁদের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। দু’পক্ষের মধ্যে যখন বোমা-গুলির লড়াই চলছিল, তখন দুই সন্তানকে জড়িয়ে ধরে ঘরের এক কোণে লুকিয়ে ছিলেন সামিনা মোল্লা। স্বামী কর্মসূত্রে ভিনরাজ্যে থাকেন। সামিনা বলেন, ‘‘গ্রামে পুলিশ দেখে বুকে একটু বল পাচ্ছি। তবে কাল থেকে রান্নাবান্না করিনি। আজ বাচ্চাগুলোর জন্য একটু রেঁধেছি।’’

Advertisement

গ্রামের বাসিন্দা আজিম সর্দারের কথায়, ‘‘কিছু মানুষ ক্ষমতা দখলের জন্য লড়াই করছে। মাঝখানে পড়ে আমাদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে। এই গ্রামের নাম শুনলে কেউ মেয়ে-ছেলের বিয়ের সম্বন্ধ করতে চায় না আজকাল।’’

গ্রামে আপাতত পুলিশ পিকেট থাকলেও কত দিন তারা নিরাপত্তা দেবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা। ফতেমা মোল্লা বলেন, ‘‘শান্তি চাই আমরা। ছোট থেকেই তো বাচ্চারা বোমা-গুলির আওয়াজ শুনে বড় হচ্ছে। এই পরিবেশে ওরা কী ভাবে মানুষ হবে!’’ এলাকায় একটা পুলিশ ক্যাম্প হলে কিছুটা অশান্তি কমতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন