পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক, চায় মাতৃহারা শুভঙ্কর

ঘটনার পর কেটে গিয়েছে চারদিন। কিছুটা শোকের বাতাবরণ কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছেন গোমস্তা পরিবার।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা 

 ক্যানিং শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৯ ০০:২৬
Share:

শোকার্ত: বাড়িতে বসে শুভঙ্কর। ইনসেটে, শিখা। —নিজস্ব চিত্র

চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়ে সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বাড়ছে মৃত্যুর ঘটনাও। দ্রুত সমস্যা মিটে যাতে চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক হয় সেই দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসার অভাবে মৃত শিখা গোমস্তার ছেলে শুভঙ্কর গোমস্তা।

Advertisement

গত বুধবার সকালে বিনা চিকিৎসায় ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছিল শিখা গোমস্তা (৪০) নামে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলা থানার ঘুটিয়ারি শরিফ লক্ষ্মীনারায়ণপুরের এক মহিলার। সেই ঘটনার পর চারদিন কেটে গেলেও স্বাভাবিক হয়নি রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবা।

ঘটনার পর কেটে গিয়েছে চারদিন। কিছুটা শোকের বাতাবরণ কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছেন গোমস্তা পরিবার। লক্ষ্মীনারায়ণপুরের গোয়ালিপাড়ায় শিখার বাড়ি। রবিবার সকালে সেখানে সিঁড়িতে বসে তাঁর ছেলে মোবাইলে মায়ের ছবি দেখছেন, আর দু’চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে শুভঙ্করের। পাশে অন্যমনস্ক হয়ে বসে রয়েছেন দিদি সঞ্জিতা। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র শুভঙ্কর, মাকে ভীষণ ভালবাসত। দিদির বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর মাও একমাত্র ছেলেকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলেন।

Advertisement

শুভঙ্কর বলে, ‘‘মা এ ভাবে বিনা চিকিৎসায় চলে যাবেন, তা এখনও মানতে পারছি না। এরকম ভাবে যেন আর কারও মাকে মরতে না হয়। হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে সমস্যা হচ্ছে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের। যা কাম্য নয়। সবার তো নার্সিংহোমে গিয়ে চিকিৎসা করানোর মতো টাকা থাকে না।’’ তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া উচিত বলে মনে করেন শুভঙ্কর ও সঞ্জিতা।

জ্বর ও খিঁচুনি নিয়ে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিখাকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কলকাতার ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন চিকিৎসকরা। কিন্তু সেখানে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি থাকার ফলে হাসপাতালের ভিতরেই অসুস্থ মা’কে নিয়ে ঢুকতেই পারেনি শুভঙ্কররা। নীলরতন সরকার-সহ কলকাতার আরও বেশ কয়েকটি হাসপাতালে গিয়ে একই ভাবে নিরাশ হতে হয়েছিল তাঁদের। অগত্যা বুধবার ভোররাতে গুরুতর অসুস্থ শিখাকে ফের ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিবারের লোকেরা। সেখানেই ঘণ্টা চারেকের চিকিৎসার পর সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ মৃত্যু হয় শিখার।

শিখার পরিবারের দাবি, কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পেলে বেঁচে যেতেন তিনি। অ্যাম্বুলেন্স করে একের পর এক হাসপাতাল ঘুরতে ঘুরতে সময় নষ্ট হতে থাকে। ফলে দীর্ঘক্ষণ চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়ে কার্যত আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন শিখা।

শিখার স্বামী সুরেশ গোমস্তা বলেন, “চিকিৎসার কোনও সুযোগ না পেয়েই মৃত্যু হল স্ত্রীর। কলকাতার একের পর এক হাসপাতালে ঘুরে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। দীর্ঘক্ষণ চিকিৎসা না পেয়ে খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন তিনি। চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা পেলে হয়তো এ ভাবে মৃত্যু হত না শিখার।’’

চিকিৎসকদের কর্ম বিরতি এখনও পর্যন্ত চলছে। গত কয়েকদিনে একের পর এক সরকারি হাসপাতালে ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে এখনও ধর্না দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। সরকারের যথাযথ হস্তক্ষেপের অভাবের অভিযোগ তুলে নিজেদের কাজ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বহু চিকিৎসক। ফলে দিনের পর দিন আরও ভেঙে পড়ছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। আর সেই কারণে সাধারণ মানুষ আরও বিপাকে পড়ছেন। এই ঘটনার জেরে সদ্য মাতৃহারা শুভঙ্কর তাই সকলের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়। চিকিৎসা পরিষেবা পায় অসহায় মানুষজন। শুভঙ্কর বলে, “চিকিৎসকদের এই ধর্মঘটের ফলে আমি মা’কে হারিয়েছি। যাতে এইরকম মৃত্যুর ঘটনা আর না ঘটে তার জন্য সকলের কাছে অনুরোধ করছি। সকলে মিলে দ্রুত সমস্যার সমাধান করে নিন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন