ডায়মন্ড হারবারে

তৃণমূল-বিরোধী সংঘর্ষ

মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়া নিয়ে ডায়মন্ড হারবার-১ ও ২, ফলতা, মগরাহাট-১ ও ২ ব্লকে বিরোধীরা ঢুকতে পারছেন না বলে অভিযোগ। প্রতিটি ব্লক অফিস-চত্বর শাসকদলের বহিরাগত দুষ্কৃতীদের দখলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৫১
Share:

নজরদারি: ব্লক অফিসমুখী গাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। ডায়মন্ড হারবারে। ছবি: দিলীপ নস্কর

সকাল সাড়ে ১০টা। ডায়মন্ড হারবার মহকুমা প্রশাসন ও ডায়মন্ড হারবার-১ ব্লকের সামনে জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে কয়েকজন যুবক। ওই দুই অফিসের সামনে অচেনা কাউকে দেখলেই আটকে দিচ্ছে তারা। কেউ এর প্রতিবাদ করলেই তার কপালে জুটছে ঘাড়ধাক্কা।

Advertisement

মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়া নিয়ে ডায়মন্ড হারবার-১ ও ২, ফলতা, মগরাহাট-১ ও ২ ব্লকে বিরোধীরা ঢুকতে পারছেন না বলে অভিযোগ। প্রতিটি ব্লক অফিস-চত্বর শাসকদলের বহিরাগত দুষ্কৃতীদের দখলে। মহকুমা শাসকের প্রশাসনিক ভবনের পাশেই আদালত চত্বর। ওই আদালতে এক মক্কেল ঢুকতে গেলে তাঁকেও ওই বাহিনীর বাধার মুখে পড়তে হয়। বাধা পেয়ে প্রতিবাদ করলে মারধর করা হয় তাঁকে। আইনজীবীর একাংশ এর তীব্র নিন্দা করেন।

নানা মহল থেকেই অভিযোগ শোনা যাচ্ছে, পুলিশ এ সব ক্ষেত্রে নির্বিকার দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। শনিবার সকাল থেকেই শহরের সমস্ত ছোট গাড়ি, টোটো, অটো বন্ধ ছিল। পাশাপাশি কলকাতা বা কাকদ্বীপগামী বাস চলাচলও তেমন দেখা যায়নি। গন্ডগোল এড়াতে এ দিন দুপুরে ডায়মন্ড হারবার বাসস্ট্যান্ডের কাছে পুলিশি টহলের ব্যবস্থা হয়েছিল। ব্লক অফিসে পাছে বিরোধীদলের কেউ পোঁছে গেলে গন্ডগোল হয় এবং তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাই পুলিশ আগে থেকেই ‘চেকিং’ করতে শুরু করে। ব্লক বা মহকুমা শাসকের অফিসের দিকে যাওয়া বিরোধীদলের গাড়িগুলিকে তারা অন্য পথ দিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।

Advertisement

পুলিশের এই ভূমিকা অবশ্য সমালোচিতও হয়। ডায়মন্ড হারবার বাসস্ট্যান্ডে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন এক বৃদ্ধ। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে পুলিশি তৎপরতা দেখে তিনি বিস্মিত। তাঁর মন্তব্য, এ কী দিন এল! আগে ভোটের দিন বুথ জ্যাম, ছাপ্পা ভোট হতো। এ বারে ব্লক অফিস জ্যাম করে নির্বাচন প্রক্রিয়াটাই বন্ধ করে দেবার ষড়যন্ত্র হচ্ছে!

এ দিন ডায়মন্ড হারবার-২ ব্লকের সামনেও সকাল থেকে বাহিনীর জটলা দেখতে পাওয়া গিয়েছে। সেখানে অনেকেরই হাতে ছিল বাঁশের লাঠি, কাঠের বাটাম, হকি স্টিক। বাহিনীর কারও কারও মাথায় তৃণমূলের পতাকার ফেট্টিও বাঁধা ছিল। অভিযোগ, আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করতে কয়েকটি বোমাও ফেলা হয় ওই এলাকায়।

এ দিন সরিষাহাটে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে আচমকা হামলা চালায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী। সাবির মোল্লা নামে এক সিপিএম নেতার বাড়িতে হামলা এবং ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে।

বিজেপি-র অভিযোগ, ডায়মন্ড হারবার শহরে তাঁদের নেতাদের বাড়িতে পুলিশি তল্লাশি চলছে। শুক্রবারে এসইউসিআই দলের পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র তুলতে এলে বেশ কয়েক জনকে বেধকড় মারধর করে তাঁদের অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। রেহাই পাচ্ছেন না সাংবাদিকরাও। তাঁদেরকে লুকিয়ে এলাকায় ঢুকতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে এক তৃণমূল নেতার সাফাই, দলের মধ্যে কিছু বিরোধের কারণে যাঁরা নির্দল প্রার্থী হতে ঢুকছেন মূলত তাঁদেরই বাধা দেওয়া হচ্ছে। অন্য দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এই বচসার কোনও সম্পর্ক নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন